‘যেন দ্বিতীয় কাশ্মীর, জঙ্গিদের ডেরায় পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ’: দিলীপ ঘোষ

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, বঙ্গ রাজনীতিতে উত্তাপ ততই বেড়েই চলেছে।কাশ্মীরেও এত টেরোরিস্ট ধরা পড়ে না। পশ্চিমবঙ্গে এসে সবাই ডেরা তৈরি করছে। রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে বুধবার সিউড়িতে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই ভাবেই রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেন। বুধবার দলীয় কর্মসূচিতে সিউড়িতে এসে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমাদের নেতারা আসছেন, সাধারণ মানুষের সাথে দেখা করছেন, লোকের বাড়িতে খাচ্ছেন, এটা হজম করতে পারছেন না দিদিমণিরা।
“আমাদের পশ্চিমবাংলার সবথেকে উপদ্রুত জেলা হচ্ছে বীরভূম। এখানে পার্টি অফিসে ঝুড়ি ঝুড়ি বোম পাওয়া যাচ্ছে, পার্টির নেতার বাথরুমে বস্তা বস্তা বোম পাওয়া যাচ্ছে। একটাই কারখানা চলে বোমের কারখানা। টেররিস্ট ধরা পড়ছে পশ্চিমবাংলায়। কাশ্মীরের এত টেরোরিস্ট ধরা পড়ে না, হয় উপরে চলে যায়। এখানে এসে এসব শেল্টার নিয়ে নিচ্ছে। মুর্শিদাবাদ থেকে দুবার তিনবার ধরা পড়ল। পুরো জাল বিস্তার করেছে। আপনারদের জেলাতেও টেরোরিস্ট ধরা পড়েছে। পশ্চিমবাংলাটা হয়ে গেছে দ্বিতীয় কাশ্মীর। সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পেরে পরিবর্তন চাইছেন।”
বাঁকুড়া গিয়েছিলেন অমিত শাহ, দিদিমণি পৌঁছে গেলেন। অমিত শাহ খাটিয়ায় বসে ছিলেন, তিনিও খাটিয়ায় বসেছেন। অমিত শাহ আদিবাসী বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেছেন, কিন্তু দিদিমণিকে কেউ ডাকলো না, খেতেও পেলেন না। সবেতো খাটিয়া, এরপর মাটিতেই বসতে হবে, মে মাসের পর। অভ্যাস করুন। উনার ঢপবাজি লোকে ধরে ফেলেছেন। উনার দলের নেতারা এত কাটমানি খেয়েছেন যে ভয়ে ঘর থেকে বেরোন না। বেরোলেই কলার ধরে বলে পয়সা দে।”এরপরেই তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছিলেন বড় বড় হোর্ডিং লেগেছিল ‘বাংলার গর্ব মমতা’, যেই লাগলো তারপরেই আম্ফান চলে এলো। সব ঝড়ে উড়ে চলে গেল। বলছে বাড়ি বাড়ি যান। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাওয়া দাওয়া করি। আর উনার দলের নেতারা ভয়ে বের হচ্ছেন না। ওদের এক এমপি বেরিয়েছিলেন, তাকে ওদের লোকেরাই খেতে দেয় নাই।
এদিন সিউড়িতে চা-চক্রে যোগ দিয়ে দিলীপ দাবি করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে উপদ্রুত জেলা হচ্ছে বীরভূম। পার্টি অফিসে ঝুড়ি ঝুড়ি বোমা পাওয়া যাচ্ছে। পার্টির নেতার বাথরুমের মধ্যে বস্তায় বোমা পাওয়া যায় এখানে। একটাই কারখানা চলে, বোমার কারখানা। সারা জেলায় বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। সব জঙ্গি ধরা পড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। কাশ্মীরেও এত জঙ্গি ধরা পড়ে না। পশ্চিমবঙ্গে এসে সব আশ্রয় নিচ্ছে। মুর্শিদাবাদে ২–৩ বার জঙ্গি ধরা পড়ল। সারা রাজ্যে জাল বিস্তার করেছে এই জঙ্গিরা। বীরভূমেও বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। এখানেও জঙ্গি ধরা পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় কাশ্মীর।’
আরও পড়ুন: “এদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো হবে”, ওয়েইসিকে আক্রমণ তেজস্বী সূর্যর
দিলীপের এই বিতর্কিত মন্তব্যকেই একহাত নিয়ে সৌগত রায় জানান, ‘এই পাগলের মতো মন্তব্যের আমি আর কী জবাব দেব! দিলীপ ঘোষের যদি পছন্দ না হয়, যদি পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় কাশ্মীর হয়ে গিয়ে থাকে, তবে তিনি চলে যান কাশ্মীরে। এখানে থাকার দরকার নেই। দিলীপ ঘোষের কথার সঙ্গে কঙ্গনার কথার হুবহু মিল দেখছি। কঙ্গনা বলেছিল, মুম্বই পিওকে–র মতো হয়ে গিয়েছে। মানে পাক অকিউপায়েড কাশ্মীর হয়ে গিয়েছে। তাঁকে তখন সবাই বলেছিল মুম্বই ছেড়ে চলে যেতে। আমিও দিলীপ ঘোষকে বলতে চাই, আপনি বাংলা ছেড়ে যেখানে ইচ্ছে চলে যান। যেখানে বিজেপি আছে চলে যান সেখানে। আসলে বিজেপি একটা গল্প ফাঁদার চেষ্টা করছে। গল্পটা হল যে পশ্চিমবঙ্গ সন্ত্রাস কবলিত আর এই রাজ্যকে বাঁচাতে পারে একমাত্র বিজেপি। এই ফন্দির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। আর দিলীপ ঘোষের বক্তব্যকে আমরা বাতিল করছি।’
তৃণমূলের তরফে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। কুণাল ঘোষ জানান, ‘এসব বাধ্য হয়ে বলছেন দিলীপবাবু। নব্য বিজেপিদের সঙ্গে দিলীপবাবুর দ্বন্দ্ব।’ এই প্রসঙ্গেই তিনি দিলীপবাবুর কথার সমালোচনা করেন। জবাব দিয়েছেন, কলকাতার মেয়র ববি হাকিমও। তিনি বলেন, ‘ওদের (বিজেপি-র) মাথার মধ্যে এনকাউন্টার ঢুকে আছে। তাই এরকম কথাবার্তা বলছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, গোধরা কাণ্ডেই চমকে ওঠেছিল গোটা দেশ। তিনিও গুজরাটের সেই আতঙ্কের প্রসঙ্গে তুলে দিলীপের মন্তব্য়ের পরোক্ষ জবাব দেন। বামফ্রন্টের তরফে মহম্মদ সেলিম দিলীপকে সমালোচনা করে জানান, ‘কাশ্মীর আমাদের দেশের অংশ। উনি ভারতের ম্যাপ জানেন না। সেটা ওঁকে জানতে হবে। যেখানেই আরএসএস ঢুকেছে, সেখানেই ঝামেলা হয়েছে। আমরা পশ্চিমবঙ্গকে সন্ত্রাসবাদের আখড়া হতে দেব না। আরএসএস-ই তো সব চেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী।’