রাজস্থানের রাজনীতিতে নাটক! হাইকোর্টে টিম পাইলটের সংশোধিত আর্জির শুনানি আজ
শচীনের সঙ্গে মধ্যস্থতায় প্রিয়াঙ্কা

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: গত কয়েকদিন ধরে রাজস্থানের রাজনীতির উথালপাথালে এই প্রশ্নই উঠছে বারবার। ৪ মাস আগেই একদা রাহুল ঘনিষ্ট বলে পরিচিত জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে সরকার তছনছ করে পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে রাজস্থানের সদ্য প্রাক্তন হওয়া উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটের এই বিদ্রোহ ঘোষণা আসলে রাহুলের বুকেই ছুরিকাঘাত। সচিনকে দলে পুরনো হালে চাইলেও কংগ্রেস বুঝতে পারছে পথ আলাদা হয়ে গিয়েছে। সচিন হয়ত পুরনো রাস্তায় হাঁটবেন না আর। এই অবস্থায় ভঙ্গুর কংগ্রেস বুঝতে পারছে না কোন পথে সিদ্ধান্ত নিলে রাজস্থানে সরকার বাঁচানো যাবে বা রাজনৈতিক সঙ্কটমুক্তি ঘটবে। জানা গিয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসে ফিরলেও সচিনকে রাজস্থান থেকে সরিয়ে জাতীয় স্তরের কোনও পদে বসানো হবে। এবং সচিনকে ফিরে আসতে হবে নিঃশর্তভাবে।
শচীনকে দলে ফেরাতে রাহুল গান্ধীর দূত হিসেবে মধ্যস্থতা করছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তার জোরেই পাইলটকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে রাজি করিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। এখন সন্ধিপ্রক্রিয়া যাতে থমকে না যায় সেই লক্ষ্যে বুধবার রাতেই দিল্লি থেকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করা হয়েছে, ‘পাইলটকে নতুন করে আর আক্রমণ নয়।’
তবে, এ সবের মধ্যেই ‘দলবিরোধী কাজ’-এর অভিযোগে পাইলট ও তাঁর সঙ্গীদের বিধায়ক পদ খারিজ করা নিয়ে কংগ্রেস ও পাইলট শিবিরের মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। বিষয়টি হাইকোর্টে পৌঁছেছে। বিধানসভার স্পিকার তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ করার প্রক্রিয়া শুরু করায় তাঁর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে পাইলট শিবির। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে তাঁদের পক্ষে মামলা লড়ছেন বিজেপি-ঘনিষ্ঠ দুই আইনজীবী মুকুল রোহতগি ও হরিশ সালভে। দু’জনেই বিজেপি আমলে সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। উল্টোদিকে, কংগ্রেসের পক্ষে মামলাটি লড়বেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি। হরিশ সালভের আর্জির ভিত্তিতে রাজস্থান হাইকোর্ট শচীন পাইলট-সহ মোট ২০ জন কংগ্রেস বিধায়ককে সংশোধিত আবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বরাদ্দ করেছে। আজ, শুক্রবার দুপুর ১টায় এ মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।
হুইপ না-মেনে বিধায়ক দলের বৈঠকে যোগ না-দেওয়ার জন্য কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, বুধবারই এই মর্মে পাইলট ও তাঁর অনুগামীদের নোটিস দিয়েছেন রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সি পি যোশি। শুক্রবারের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে ‘দলবিরোধী কাজ’-এর জন্য তাঁদের বিধানসভা থেকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য কংগ্রেসের। এসএমএস, ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ, চিঠি মারফত নোটিস পাঠানোর পাশাপাশি পাইলট ও তাঁর অনুগামীদের বাড়ির দেওয়ালে হিন্দি ও ইংরেজিতে পোস্টার সাঁটিয়েছে স্পিকারের দফতর।
আরও পড়ুন: দিল্লির এইমস-এ রাজকুমারী অমৃত কউর বহির্বিভাগে একদিনে ১০ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা করা যাবে: হর্ষবর্ধন
কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, এত কিছুর পরেও শচীন পাইলটকে দলে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছেন রাহুল গান্ধী। তিনি নিজে কথা না বললেও দূত হিসেবে কথা বলছেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। পাইলটকে ‘এখনও দরজা খোলা আছে’ বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। একইসঙ্গে বুধবারই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে কংগ্রেসের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘তীব্র আক্রমণ নয়, পাইলটের প্রতি সুর নরম করুন।’ এ ব্যাপারে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা গেহলটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পাইলটের নেতৃত্বে হরিয়ানার মানেসরে বিজেপি নেতার হোটেলে ঘাঁটি গেড়েছেন রাজস্থানের বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়করা। তা সত্ত্বেও গত কয়েকদিনে পর পর দু’বার শচীন পাইলট দাবি করেছেন, তিনি বিজেপি-তে যাচ্ছেন না। কংগ্রেসের তরফে তাঁকে বার্তা দেওয়া হয়, সত্যিই বিজেপি-তে যোগ দিতে না চাইলে অবিলম্বে হরিয়ানা সরকারের আতিথেয়তা ত্যাগ করে যেন জয়পুরে ফিরে যান তিনি।
অনেকই মনে করেছিলেন পাইলট-গান্ধী মুখোমুখি আলোচনায় হয়তো তিক্ততার বরফ কিছুটা হলেও গলতে পারে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস সুপ্রিমো সনিয়া গান্ধী বা সেকেন্ড ইন কমান্ড রাহুল গান্ধী কেউই আলোচনায় বসেছেন বলে কোনও খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই ঘটনাক্রম অনেককেই সিন্ধিয়া পর্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে। যদিও পাইলট নিজে দাবি করেছেন তিনি কোনও দিনও বিজেপিতে যোগ দেবেন না।