পশ্চিম মেদিনীপুরের সবচেয়ে কম বাজেটের শালবনির গড়মাল গ্রামের দুর্গা পুজো আজ ও মানুষের নজর কারে

সুদর্শন বেরা, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতের গড়মাল গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১০ সালে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে মাওবাদীদের হুমকিকে উপেক্ষা করে শুরু হয়েছিল দুর্গাপূজা। ২০১০ সালে যখন গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে রক্তের হোলি খেলা চলছে তখন বাদ যায়নি গড়মাল গ্রামও। মাওবাদীদের হাতে কয়েকজন গ্রামবাসী খুন হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে গড়মাল গ্রাম। মাওবাদীদের ডাকে গ্রামবাসীদের দিনের-পর-দিন মিছিলে হাঁটতে হয়েছে ।তাই রক্তের হোলি খেলা বন্ধ করার জন্য জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১০ সালে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে সামান্য কিছু টাকা খরচ করে শুরু করা হয়েছিল দূর্গা পুজা। ২০১০ সালের পুজোয় হাতেগোনা কয়েকজন গ্রামবাসী সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু মাওবাদীরা বহু হুমকি দিয়েছিল পুজো বন্ধ করার। কিন্তু সেই মাওবাদীদের হুমকি উপেক্ষা করে গ্রামবাসীরা দৃঢ় সংকল্প করেছিলেন দূর্গোপূজো করবেন ।যার ফলে শুরু হয়েছিল জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়মাল গ্রামে দুর্গাপুজো। দেখতে দেখতে সেই পুজো এবছর ১১ তম বর্ষে পা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিছিয়ে পড়া এলাকা গড়মাল গ্রামের দুর্গাপুজো সবথেকে কম বাজেটের পুজো বলে পরিচিত।
গ্রামবাসীদের সাহায্যেই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসীরা যা দেয় সেটাই দিয়ে মায়ের পুজো করেন গ্রামবাসীরা। তবে এ বছর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কারণ প্রতি বছর খুব কম টাকার তাদের বাজেট থাকতো। করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে এ বছর আর সে ভাবে সাহায্য নেওয়া হয়নি। পুজো কমিটির সভাপতি বীরেন সিং ও সম্পাদক কালিপদ দত্ত বলেন গ্রামবাসীদের সহযোগিতা ও সাহায্যে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ।একসময় রক্তাক্ত জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই পুজো শুরু করা হয়েছিল। দেখতে দেখতে ১১ বছরে পুজা পা দিয়েছে। প্রতি বছর পুজোর সময় বস্ত্র বিতরণ থেকে এলাকার ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো ।এবছর সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে তবে অন্য প্রসাদ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।বাড়ি বাড়ি সেই প্রসাদ দেওয়া হবে বলে জানা যায়।গড়মাল গ্রামবাসীদের আন্তরিকতায় আজও সকলের নজর কাড়ে গড়মাল গ্রামের কম বাজেটের দূর্গোপূজো। তাই মেদিনীপুর শহর থেকেও বহু মানুষ ওই পুজো দেখতে যান ।ঐ গ্রামের মানুষের ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় সকলেই মুগ্ধ। সেই সঙ্গে
ওই পুজোয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। খুবই গরিব গ্রাম গড়মাল আর সেই গ্রামের পুজো কে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের আন্তরিকতা আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। কারণ যে সময় পূজা শুরু হয়েছিল সেই সময়টা খুব কঠিন,ভয়ের এবং আতঙ্কের ছিল, বর্তমানে সেই ভয় আতঙ্ক নেই। এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ।তাই শান্তির দেবী মা দুর্গার আরাধনা মেতে উঠেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের গড়মাল গ্রামের গ্রামবাসীরা।