বেআইনি কয়লা খনি দিয়ে ঢুকে পড়ল জল, দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেন ECL কর্মীরা

শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়,আসানসোল: বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেল আসানসোলের ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসমুদা কোলিয়ারি। সেই সঙ্গে প্রাণে বাঁচলেন কোলিয়ারির কর্মীরাও। ইসিএল সূত্রে জানা গেছে, এই কোলিয়ারির একবারে পাশে থাকা অবৈধ কয়লা খনি থেকে সোজা বৃষ্টির প্রচুর জল খনির ভেতরে ঢুকে পড়ে মঙ্গলবার রাতে। সেই জলে ডুবে যায় ঐ খনির পশ্চিম দিকে থাকা যন্ত্রপাতি ও কয়লা। প্রবল বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই সেদিন রাতের শিফটে আর খনিতে নামেননি কর্মীরা। যদি সেই সময় খনির ভেতরে কর্মীরা অন্যদিনের মতো থাকতেন তাহলে তারাও তলিয়ে যেতে পারতেন। একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেও পারতো । জল ঢুকে যাওয়ায় গত তিনদিন ধরে ঐ খনির পশ্চিম দিকের গ্যালারি থেকে কয়লা কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে ।
সোদপুর এরিয়ার সিটু নেতা তথা পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য সুজিত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, কিভাবে বেআইনি কয়লা খনি এক সরকারি খনির সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তার মধ্যে দিয়ে জল ঢুকেছে । এর ফলে খনির একাংশ জলে ডুবে গেছে। যন্ত্রপাতিও জলের তলায় ।শুধু এবারই নয়, তিনি বলেন, দুই বছর আগে একই ঘটনা ঘটেছিল। ম্যানেজার নন্দদুলাল সিংয়ের নেতৃত্বে এক তদন্ত কমিটি তদন্ত করে লিখিতভাবে একটি রিপোর্ট ইসিএলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। অবৈধ খনির মধ্যে দিয়ে যেভাবে আলো-বাতাস ঢুকছে তাতে খনির ভেতরে যেমন আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই এইভাবে বৃষ্টির জল ঢুকে গেলে যে কোন মুহূর্তে খনিতে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।এই কথারও উল্লেখ ছিল রিপোর্টে।
সুজিতবাবু আরও বলেন, “বুধবারই এই বিষয়ে ইসিএলকে চিঠি লিখে অবিলম্বে দাবি করেছি এলাকার অবৈধ খনিগুলো বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি যে বিপুল পরিমান জল ঢুকে পড়েছে তা পাম্প দিয়ে বার করে কয়লা খনি চালু করার ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে কিছুদিন পরেই ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইন্স সেফটি বা ডিজিএমএস জল জমার কারণ দেখিয়ে খনি বন্ধ করে দেবে । কর্মীরা তখন সমস্যায় পড়বেন। বর্তমানে এই কোলিয়ারিতে ৬০০রও বেশি কর্মী কাজ করেন। গড়ে কয়লা উৎপাদন হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টন ।
অন্যদিকে ভারতীয় মজদুর সংঘের রাজ্য সম্পাদক জয় শংকর চৌবে বলেন, “খুব বড় ধরনের বিপদ থেকে কর্মীরা রক্ষা পেয়েছেন। তবে তার জন্য যেমন ইসিএলের দায় রয়েছে , তেমনিই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও রাজ্য সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না । দায়িত্ব এড়াতে পারেন না জনপ্রতিনিধিরাও । রাজ্য সরকার ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সব জায়গায় অবৈধ খনি বন্ধ করে প্রমাণ করেছিল যে, সরকার ইচ্ছে করলে তা পারে”।
সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার যোগেন্দ্র বিশওয়াল বলেন, “মঙ্গলবার রাতে ৭০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি যে আটটি অবৈধ খনি বন্ধ করেছিলাম সেগুলোর মুখগুলো খুলে যায়। সেখান দিয়ে বিপুল পরিমাণ জল খনির ভিতরে পশ্চিম দিকের গ্যালারিতে ঢুকে পড়েছে । তিনি আরও বলেন, “এর আগে আমরা বেশ কয়েকবার এলাকার অবৈধ খনি গুলি ভরাট করে দিয়েছিলাম পুলিশ ও সিআইএসএফকে সঙ্গে নিয়ে। যদি বৃষ্টির সময় খনির ভেতরে কর্মীরা থাকতেন তাহলে হয়তে কিছু ঘটনা ঘটতে পারতো”।