fbpx
পশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

ছিটমহল…. দু’মাসের মধ্যেই স্থায়ী আবাসনগুলির পলেস্তারা খুলে আসতে শুরু করেছে

জেলা প্রতিনিধি, দিনহাটা: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় হয়। বিনিময় মাস তিনেক পর ওই বছরই ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সিটমহল দাসিয়ারছড়া থেকে ৫৮ টি পরিবার দিনহাটায় আসে। তাদের জন্য অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয় দিনহাটার কৃষি মেলায় অস্থায়ী সেটেলমেন্ট ক্যাম্পে। একটানা পাঁচ বছর তারা সেখানে থাকার পর গত ১৩ অক্টোবর তাদের স্থায়ী আবাসনে নিয়ে আসা হয়। দিনহাটা ভিলেজ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হিমঘর এলাকায় গড়ে ওঠে তাদের স্থায়ী আবাসন। সাবেক ছিটমহলের এই বাসিন্দাদের স্থায়ী ঠিকানা এখন সেটাই। প্রথমদিকে নতুন বাড়িতে যাওয়ার আনন্দই ছিল আলাদা। দু’মাসের মধ্যেই সেই বাড়ির পলেস্তার খুলে আসতে শুরু করেছে। উঠে যাচ্ছে রং। পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। আর এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সাবেক ছিটের এই বাসিন্দাদের মধ্যে। সাবেক ছিটের এই বাসিন্দারা বলেন, তাদের জন্য যে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। মাত্র দু মাসের মাথায় ঘরের রং যেমন নষ্ট হয়ে পড়ছে তেমনি পলেস্তার খুলে যাচ্ছে। নতুন এই বিল্ডিংয়ের এখনই যে অবস্থা তাতে তারাও কার্যত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা নরেশ বর্মন বলেন,”অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। বাংলাদেশ ফেলে আসা জমির আজও কোন মূল্য পাইনি।দু’মাসের মধ্যে ঘর বেহাল হয়ে পড়ছে। পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে জল টেনে আনতে হয়।”

বাসিন্দাদের কৃষ্ণ অধিকারী বলেন,”প্রথমদিকে নতুন বাড়িতে যখন তাদের নিয়ে আসে তখন খুব আনন্দ হচ্ছিল। কিন্তু মাত্র দু মাসের মধ্যেই তাদের ঘরের পলেস্তারা খুলে পরছে। যে জল সরবরাহ করা হয় তা পানের অযোগ্য। বাইরে থেকে অধিকাংশ সময় জল কিনে আনতে হয়। এ দেশে আসার সময় তারা যে জমির রেখে এসেছেন সেটাও নানাভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। তাদের ফেলে আসা জমি বিক্রির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের কাছে একাধিকবার জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। যদি তাদের ঘরের সমস্যা না সমাধান হয় তাহলে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুক। ”

একই অভিযোগ করেন লক্ষীবালা মহন্ত। তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। ছিটমহল বিনিময়ের পর দুই দেশের সরকারের আশ্বাসে তারা এখানে আসেন।তাদের জন্য স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হলেও সেই আবাসনের দেওয়াল থেকে প্লাস্টার খুলে পড়ছে। শুধু তাই নয় পানীয় জলের সমস্যা ও বিরাট আকার ধারণ করেছে। যে জল দেওয়া হয় তা পান করা যায় না। দুমাসে প্রশাসনের কর্তারা একবার এসে খোঁজ নেননি তাদের। এভাবে তাদেরকে গরু-ছাগলের মতো এনে ফেলে রেখে যা হয়েছে। তাদের নানাভাবে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

প্রবীণ বাসিন্দা কাসেম আলী বলেন,”দুইটি মাত্র ঘর। সেখানে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে পাঁচ ছেলে ও তাদের স্ত্রীরা। রয়েছে নাতি-নাতনিরা। দুইটি ঘরের মধ্যে ২০ জন অনেক কষ্টে রয়েছেন। সেই ঘরের ও রং উঠে যাওয়ার পাশাপাশি পলেস্তারা খুলে পড়ছে। প্রশাসনকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এই কষ্টে থাকার চেয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়া অনেক ভাল।”

বিষয়টি নিয়ে দিনহাটা মহকুমা শাসক হিমাদ্রি সরকার বলেন,”সাবেক ছিটমহলবাসীদের নতুন আবাসন নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

Related Articles

Back to top button
Close