যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্কঃ রামায়নের মূলত লিখেছিলেন বাল্মিকী। সংস্কৃত ভাষায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই রামায়ণের বিবর্তন হয়েছে। রাজার ছেলে রাম হয়েছে ঘরের ছেলে। কখনও খল, কখনও আবার প্রেমিক–স্বামী। ভারতেই অন্তত ৩০০টি সংস্করণ রয়েছে রামায়ণের।
শুধু দেশ নয়, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছে রামায়ণকে। নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য মিশিয়ে দিয়েছে রামায়ণ। সেই মতো বদলেছে প্রেক্ষাপট। কখনও বদলেছে মূল গল্প। কখনও শাখা–গল্প। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশ এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য।
* বৌদ্ধ সংস্করণ: ‘দশরথ জাতক’। রামায়ণের বৌদ্ধ সংস্করণের নাম এমনটাই। সেখানে দশরথ আগে ছিলেন কাশীর রাজা, পরে অযোধ্যা। তবে বাল্মীকির রামায়ণ থেকে একটি মূল জায়গায় অনেকটাই সরে এসেছে দশরথ জাতক। সেখানে রামকে বনবাসে পাঠায় না দশরথ। বরং তৃতীয় স্ত্রী কল্যাণীর ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচাতে রাম, সীতা, লক্ষ্মণকে হিমালয়ে এক সাধুর আশ্রমে পাঠানো হয়। ১২ বছরের জন্য। এখানে কিন্তু সীতা হরণের কোনও উল্লেখই নেই।
* জৈন সংস্করণ: এখানে রাম অহিংসা পূজারি। তাই রাবণকে সে মারেনি। মেরেছে লক্ষ্মণ। তার পর তারা দু’জনেই নরকে গেছে। রাম সিংহাসন ত্যাগ করে জৈন সাধু হয়েছে। মোক্ষলাভের পথে হেঁটেছে। রামের ধারণা, রাবণ এবং লক্ষ্মণের পুনর্জন্ম হবে। তার পর তাদের মুক্তিলাভ হবে।
* মালয়েশীয় সংস্করণ: ‘হিকায়াৎ সেরি রামা’। রামায়ণের মালয় সংস্করণ। এখানে রামের থেকে মর্যাদা, বীরত্বে শ্রেয় লক্ষ্মণ। দাদার থেকে ভাইয়ের ভূমিকাও বেশি। মালয় কবিরা লক্ষ্মণকেই বেশি সাহসী করে গড়ে তুলেছেন।
* থাই সংস্করণ: ‘রামাকিয়েন’। থাইল্যান্ডে দারুণ জনপ্রিয়। দেশের জাতীয় মহাকাব্য বলে গণ্য করা হয়। থাই সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্পে এই রামায়ণের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। রামায়ণের এই সংস্করণ বাল্মিকীর লেখা সংস্কৃত মহাকাব্যর সঙ্গে পুরোটাই মিলে যায়। শুধু হনুমানকে এই থাই সংস্করণে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য রামের পুত্র কুশের থেকেই এসেছে থাইল্যান্ডের রাজবংশের ইতিহাস।
* বর্মার সংস্করণ: ‘ইয়ামা জাতদও’। রামায়ণের বর্মা সংস্করণের নাম। সরকারিভাবে নয়, তবে বেসরকারিভাবে এটাই দেশের প্রধান মহাকাব্য বলা যেতে পারে। বাল্মিকীর রামায়ণের সঙ্গে একেবারেই ফারাক নেই। প্লট, চরিত্র, চরিত্রদের বৈশিষ্ট্য, গল্প— সবই এক। শুধু নামগুলো ভিন্ন। সংস্কৃত নামগুলোর অনুবাদ করার জন্য একটু বদলে গেছে।