করোনা আবহের মধ্যেও অনেকেই খোয়াচ্ছেন নিজেদের গচ্ছিত টাকা, শিল্পাঞ্চলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা

শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল: করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় লক ডাউন পর্ব শেষ হওয়ার পরে, আপাতত আনলক চলছে। তারমধ্যেও প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের অনেক মানুষ ব্যাঙ্কে রাখা নিজেদের গচ্ছিত টাকা খোয়াচ্ছেন। চলতি আগষ্ট মাসে এখনো পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমান জেলার এই শিল্পাঞ্চলের চারটি ঘটনা ঘটেছে। আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের সাইবার অপরাধ সেল অভিযোগের ভিত্তিতে সেইসব ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি। তাই বলাই যেতে পারে যে, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে সাইবার অপরাধীরা।
তবে পুলিশের চিন্তার বিষয় একটাই, এখন আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাম করে পুরনো জিনিস কেনাবেচার নাম করে নতুন কায়দায় প্রতারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি, নিজে চালানোর জন্য একটি পুরনো গাড়ি একটি বহুজাতিক অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে কিনতে গিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খুইয়েছেন আসানসোলের কুলটির মিঠানির সজল চট্টোপাধ্যায়। এক ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে সজলবাবুর কাছ থেকে নানা অছিলায় ঐ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তা বুঝতে পেরেই সাইবার সেলের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
একইভাবে আসানসোলের রুপনারায়নপুরের নীলকান্ত সরকার একটি অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে ৫ হাজার টাকায় গিটার বিক্রি করতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা খুইয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের এক বাসিন্দা এক ব্যক্তি সেনাবাহিনীর অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে নীলকান্তবাবুর একাউন্ট থেকে ঐ টাকা হাতিয়েছেন।
দিন কয়েক আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের চেক ক্লিয়ার না হওয়ার অভিযোগ গুগলে দেওয়া টোল ফ্রি নম্বরে করতে গিয়ে ৬৪ হাজার টাকা খুইয়েছেন আসানসোলের রুপনারায়নপুরের সীমান্তপল্লীর প্রসেনজিৎ দেব। তিনি সালানপুর থানার মাধ্যমে গোটা ঘটনার কথা আসানসোলের সাইবার সেলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। প্রসেনজিৎবাবু বলেন, ১১ দিনেও চেক ক্লিয়ার না হওয়ায় আমি গুগলে সার্চ করে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করি। আমায় বলা হয়, একটা লিঙ্ক দেওয়া হচ্ছে, তাতে সব জানাতে। আমি তা জানাতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দু’দফায় আমার ৬৪ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। ভাবা যায়, গুগলে ব্যাঙ্কের নামেই প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ এটা জানেনা, তা নিশ্চয় নয়।
একইভাবে একটি ই- ওলায়েটের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক একাউন্টের কেওয়াইসি করতে গিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন আসানসোলের গৌতম বন্দোপাধ্যায়। তিনি একটি এ্যাপ ডাউনলোড করতেই তার টাকা উধাও হয়ে যায়। গৌতমবাবুর দাবি, তার কাছে কোন ওটিপি আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই এইভাবে একের পর এক প্রতারণার ঘটনা ঘটায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছন শিল্পাঞ্চলের মানুষ ।
এই প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষদের অনলাইন মাধ্যমের যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন। তার কথায়, একান্তই তা করতে বাধ্য হলে সতর্ক থাকুন। এ্যাপ ডাউনলোড করার সময় আরো সজাগ থাকবেন। কোন লিঙ্ক খোলার সময়ও সতর্ক থাকুন।