জল বাঁচাও দিবসে…দুর্গাপুর-ফরিদপুরে ‘উষরমুক্তি’ প্রকল্প সবুজায়ন ও জীবিকা উন্নয়নের দিশা দেখাচ্ছে

জয়দেব লাহা, দুর্গাপুর: খনি অঞ্চল। তার ওপর খরা প্রবণ। হু হু করে কমেছে ভুগর্ভস্ত জলস্তর। শীতের অন্তিম লগ্ন থেকেই টান পড়ে ভুগর্ভস্ত জলের। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় কূপ, নলকুপ। আর ওই খনি অঞ্চল দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে ‘উষরমুক্তি’ প্রকল্পে সাফল্যের নজিরসৃষ্টি করেছে। প্রকল্পে জল-মাটি সংরক্ষণের পাশাপাশি সবুজায়ন ও জীবিকা উন্নয়নের পথ দেখাচ্ছে।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে উষরমুক্তি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য অনুর্বর জমিকে উর্বর চাষ যোগ্য করে সম্পদ তৈরী করা। রাজ্যে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান জেলায় কাজ শুরু হয়। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সালানপুর, রানীগঞ্জ, অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কাঁকসা ব্লকে কাজ শুরু হয়। এইসমস্ত ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর অনেক নীচে। ফলে শীতের শেষ থেকে চরম জলকষ্ট দেখা দেয়। তবে বিগত তিনবছরে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণে উষরমুক্তি প্রকল্প নজির সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে মাটি সংরক্ষণ দুর্গাপুর- ফরিদপুর ব্লক খনি অঞ্চল বলেই চিহ্নিত।
আরও পড়ুন:বর্ধমানে তেজগঞ্জে বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় এখনও অধরা অভিযুক্ত, আঁকা হবে সন্দেহভাজনের স্কেচ
ওই ব্লকের প্রতাপপুর, গৌরবাজর, ইছাপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ডাঙ্গা জমিতে গত তিনবছরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ফলের বাগান। প্রতাপপুর পঞ্চায়েতে ১৪০ হেক্টর ও গৌড়বাজার পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছে আমৃরপালি, ল্যাঙড়া, হিমসাগর, মল্লিকা প্রজাতির আম, কুল, পেয়ারা, লেবু গাছ। চলতি বছর ফলন ধরতে শুরু করেছে। এমজিএনআরইজিএস মাধ্যমে শ্রমদিবস তৈরী করা হয়েছে। ওইসব গাছের বাগান দেখভাল করছে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। গাছ লাগানোর ফলে ডাঙা জমিতে মাটি ক্ষয় ঠেকানো গেছে। আবার জল সংরক্ষণের জন্য নানা পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়েছে। কয়েক’শ মিটার লম্বা সমোচ্চশীল রেখায় মাটি কাটা হয়েছে। তাতে সাময়িক দিনের জনয বৃষ্টির জল আটকে থাকে। কোথাও ‘৩০-৪০’ মডেল ব্যাবহার হয়েছে। ৩০ ফুট চওড়া, ৪০ ফুট লম্বার ভাগ করে মাটি কাটা হয়। তার মাঝে চুয়াডোবা কাটা থাকে মাটির পাড়ে গাছ লাগানো হয়। বৃষ্টির জল ওই চুয়াডোবায় ধরে রাখে। এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:গুজরাত প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতির পদে হার্দিক প্যাটেল
উষরমুক্তি প্রকল্পের আধিকারিক সত্যনারায়ণ সর্দার বলেন,” এই প্রকল্পে একাধিক সাফল্য এসেছে। জলবিভাজিকার ভাবনার মধ্যে মাটির নীচে জলস্তর বৃদ্ধি করা। দুর্গাপুর- ফরিদপুর ব্লকে গত তিনবছরে ভূগর্ভস্থ জলস্তর প্রায় ১ মিটারের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়েছে। জল- মাটি সংরক্ষণের পাশাপাশি সবুজায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। ল্যাজোলার মতো ঘাস চাষ হচ্ছে। পাশাপাশি জীবিকার উন্নয়ন হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,” ইতিমধ্যে বিভিন্ন গাছের বীজ বসিয়ে চারা তৈরীর কাজ চলছে। পান্ডবেশ্বরে আড়াই হাজার ও কাঁকসার দেউলে এক হাজার আমের বীজ বসানোর কাজ চলছে। ছ’মাস পরে ওইসব চারা গাছ কলম করা হবে। তারপর বিভিন্ন জমিতে লাগানো হবে।”