fbpx
কলকাতাগুরুত্বপূর্ণদেশপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

Exclusive: NEP2020: শিক্ষায় বেসরকারিকরণ ‘আত্মনির্ভর’ না পুঁজি-নির্ভরতা? কি বলছে ছাত্র সংগঠনগুলি?

স্বর্ণার্ক ঘোষ, কলকাতা: নিউ এডুকেশন পলিসি বা নয়া শিক্ষা নীতি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। এরমধ্যে বুধবার নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হল এসএফআই এবং আইসার মত বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। এদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিওয়ালের কুশপুতুল দাহ করে শুরু হয় প্রতিবাদ। দুপুর দুটো থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত চলে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি।

নয়া শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রনেত্রী গীতশ্রী সরকারের কথায়, এই শিক্ষানীতিতে সরকারি প্রভাব হ্রাস বেসরকারিকরণ এবং ডিজিটালাইজেশনের যে ভূমিকা দেখা যাচ্ছে তা আদতে জনকল্যাণমূলক নয়। তিনি বলেন পৃথিবীর সমস্ত দেশের কাঠামো আর্থিক কাঠামো বিভিন্ন প্রকার। ‌ ভারতের সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু বর্তমানে সরকারের এই পদক্ষেপ জনসাধারণের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করছে বলেই তিনি জানান। শিক্ষায় বেসরকারীকরণ আগামীদিনে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেও দাবি এই ছাত্রনেত্রীর।

তার কথায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ কমিয়েছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার। ৪.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩.৫ শতাংশ করা হয়েছে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ। তিনি আরও বলেন শিক্ষার দায়িত্ব সরকারের কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিয়ে শিক্ষা সংকোচন কমাতেই ব্যস্ত বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রক্রিয়ায় তিনি ২০১৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্রীকরনের দিকে আঙুল তুলেছেন। ‌ পাশাপাশি শিক্ষায় ডিজিটাইজেশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বাম সংগঠন গুলি। ‌ নেত্রীর কথায়, দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পড়ুয়ারা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নন। তাছাড়া ডিজিটালে আনুষঙ্গিক ব্যায়ভার চালানোর ক্ষেত্রেও আর্থিকভাবে সক্ষম নন দেশের অধিকাংশ ছাত্র সমাজ। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের একপ্রকার জোরজবস্তি করে চাপিয়ে দিতে চাইছে বলেই কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছে বামেরা। এছাড়াও নয়া শিক্ষানীতিতে ধ্রুপদী ভাষা বা মাতৃভাষা শিক্ষাদান প্রসঙ্গে গীতশ্রী বলেন, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হওয়া উচিত। বাংলারও ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত কিন্তু কেন্দ্রের শিক্ষানীতিতে পালি প্রকৃতি ও সংস্কৃত ভাষা জন্য আলাদা গুরুত্ব পেলেও অবহেলিত দেশের অন্যান্য ভাষাগুলি। সদ্য ঘোষিত শিক্ষানীতিতে তিনি কেন্দ্রের ভাষা নীতিকে এক কথায় বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্য-বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

অন্যদিকে বাম ছাত্র সংগঠনের তত্ত্বকে খারিজ করে কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবিভিপি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবিভিপি সভাপতি উৎসব চক্রবর্তীর কথায়, ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও অগ্রসর করবে এই নতুন শিক্ষানীতি‌। শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশনের পক্ষে তিনি বলেন বর্তমানে দেশের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছেই রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ এবং মোবাইল ফোন। তাই আগের মত এখন ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ খুব জটিল নয়। শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশনের যেমন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে তেমনি দেশের বাড়াবে বিদেশি বিনিয়োগ

ডিজিটালাইজেশনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন কেন্দ্রে নীতির ফলে চিনের বিভিন্ন অনলাইন সংস্থাগুলো ভিয়েতনাম কিংবা কম্বোডিয়ায় চলে গিয়েছিল এই ডিজিটালাইজেশনের ফলে সেগুলিও বিনিয়োগ এবার ভারতে সহজে আসবে। যা অর্থনীতির পক্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক। পাশাপাশি তিনি বলেন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও স্বতন্ত্র করে তুলতে সাহায্য করবে। তবে জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকারের নজর রাখার দায়িত্ব সরকারের বলেও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন বর্তমানে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষায় বেসরকারিকরণের নীতি নিয়েছে। সেক্ষেত্রে তার দাবি সীমান্ত সংঘাত থাকলেও মোদি সরকার আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে চিনাপন্থা ই অবলম্বন করেছে বলে দাবি তাঁর। নতুন শিক্ষানীতি ধ্রুপদী ভাষা স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধুমাত্র সংস্কৃত তামিল ছাড়া ভারতবর্ষের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার তকমা দেওয়া যায় না। যদিও ওড়িশা কন্নড়সহ একাধিক ভাষার এই তকমা ইতিমধ্যে জুটলেও শুধুমাত্র রাজ্যের উদ্যোগের অভাবেই বাংলা ভাষা এই স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি বলে রাজ্য প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন এবিভিপি সভাপতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি নয়া শিক্ষা নীতি বা নিউ এডুকেশন পলিসি ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। এই নয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতকে গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে আরও অগ্রসর করবে বলেই দাবি কেন্দ্রের। দেশের অন্যতম কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি এই নয়া শিক্ষানীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে যার ফলে আগামীতে শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ত্বরান্বিত হবে বলেই আশাবাদী কেন্দ্র। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হিসেবে ভারতে প্রায় ৩৩ কোটি শিক্ষার্থী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।

যদিও কেন্দ্রে এই নয়া শিক্ষাব্যবস্থায় বেসরকারিকরণ বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বাম নেতৃত্ব ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলি। এই নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংসদে যথেষ্ট আলোচনাই হয়নি। এবং শিক্ষা রাজ্যের আওতাভুক্ত বিষয়। কেন্দ্র এই নীতি প্রয়োগের রাজ্যগুলির সঙ্গে বিনা বাক্য বিনিময় লাভ করেছে যা দেশের ফেডারেল স্ট্রাকচার বিরোধী বলেও আখ্যায়িত করেছে বাম নেতৃত্ব। পাশাপাশি এই শিক্ষানীতি আদতে হিন্দি ও সংস্কৃতি চাপানোর একটি প্রক্রিয়া বলেও কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছে তামিলনাড়ুর ডিএমকে প্রধান স্তালিন।

Related Articles

Back to top button
Close