লকডাউনে সাগরদিঘী ছমু গ্রামে বাবা ও ছেলের বেঁচে থাকার লড়াই
কৌশিক অধিকারী, বহরমপুর: কখনও গরম ভাতের কোল ঘেষে একটু লাল শাক, আলু-পটলের তরকারী ঝোল গড়িয়ে চলছে সাদা ভাতের দিকে, পাশে এক বাটি টলটলে ডাল। কানা উঁচু ভাতের থালাটা কোলের কাছে টেনে নিয়েই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলছেন বাবা ও ছেলে। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী ছমুগ্রামে লকডাউনের জেরে আটকে পড়া বাবা ও ছেলের অদম্য লড়াই। যা এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এলাকায়।
গঙ্গার উপরে ফরাক্কায় শুরু হয়েছে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজগ্রাম থেকে সেখানেই কাজ করতে এসেছিলেন এই শ্রমিকরা, অন্যান্য শ্রমিকের মতো কাজ করতেন পিতা বুবাই রায় ও ছেলে আকাশ রায় সাথে থাকতেন। কিন্তু ২৫শে মার্চ থেকে দেশ জুড়ে লক ডাউন শুরু হতেই ঠিকাদার জানান তাদের ভাত জুটবে না। ফলে ২৭শে এপ্রিল রওনা দেন পায়ে হেঁটে। পিতা ও পুত্র দুজন মিলে রেল লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করে আহিরন হল্ট ষ্টেশনে আটকে দেন গ্রামের বাসিন্দারা। পরে সাগরদিঘী ছুমুগ্রামে কাছে আসতেই স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন।
আরও পড়ুন: লকডাউন উঠলে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়, হবে পরীক্ষাও: পার্থ চট্টোপাধ্যায়
কিন্তু গ্রামে দেখতে পান গরু চুরি করছে কিছু দুস্কৃতীরা এবং বাঁশ নিয়ে তাড়া করা হয়েছে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের লোকজন মারমুখি চেহারা দেখে সিঁটিয়ে গিয়ে ছিলেন যদি মেরে দেয়। তারপর এই এক চিলতে বারান্দা হয়ে ওঠে তাদের লকডাউনে প্রধান ঠিকানা। স্কুলের জল খেয়ে বারান্দায় দিন কাটাচ্ছিলেন বাবা ও পুত্র। প্রথম দিকে জল খেয়ে আড়াই দিন কাটিয়ে এখন সাগরদিঘী ছুমুগ্রামে স্কুলে অস্হায়ী ঠিকানা তৈরী করেছেন। তারা বর্তমানে সেখানেই দিন কাটাছেন পরিবারের সদস্যরা।
অবশেষে এলাকার বাসিন্দারা এগিয়ে এসে খাওয়ার ব্যবস্থা ও জোগান দিয়েছেন। এখন বাড়ি ফিরতে চাইছেন শ্রমিক বুবাই রায়। শ্রমিক বুবাই রায় জানান, এলাকার বাসিন্দারা এগিয়ে এসেছেন আমাদের পাশে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি যাতে অতি শীঘ্রই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও এলাকার বাসিন্দারা পাশে থাকাতে খুশি প্রকাশ করেছেন এই শ্রমিক।অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব তাকে বাড়ি পাঠানো হবে।