ডিসেম্বর জুড়েই রাতের আকাশে আতসবাজি, উল্কাবৃষ্টি ‘ জেমিনেডের’ দেখা পেতে পারে কলকাতাও

শরণানন্দ দাস,কলকাতা: পৃথিবীর অতিথি হয়ে এসেছে সে। নাম তার ‘ জেমিনিড’। রাতের আকাশে সেই ৪ ডিসেম্বর থেকে দেখা যাচ্ছে এই উল্কাবৃষ্টি। কখনও একটা, কখনও দুটো আলোর রেখা রাতের আকাশ চিরে বেরিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাতের আকাশে দেখা যাবে এই উজ্জ্বলতম আলোর ফুলঝুরি। উত্তর গোলার্ধেই বেশি দেখা যাবে এই মহাজাগতিক দৃশ্য, তবে দক্ষিণ গোলার্ধেও রাত ২ টোর পর থেকে ভোর অবধি দেখা যাবে। এ শহরও বঞ্চিত হবে না, যদি না কুয়াশা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কোথা থেকে এলো রাতের অতিথি ‘ জেমিনিড?’ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘ জেমিনিড এসেছে ৩২০০ ফায়থন নামে এক পাথুরে গ্রহাণু থেকে। ফায়থন কোন গ্রহাণুর বিচ্ছিন্ন অংশ যা সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করার সময়, ধুলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের টানে খুব কাছে এসে পড়লে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে আগুন জ্বলে ওঠে।
নাসা জানিয়েছে, ‘জেমিনিড মেটিওর শাওয়ার’ সারা আকাশ জুড়ে আলো ছড়ায়। উত্তর পূর্ব আকাশের জেমিনি নক্ষত্র পুঞ্জের কাছ থেকে ছুটে আসে এই উল্কারা, তাই এর নাম ‘ জেমিনিড।’ গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৮ হাজার মাইল বা সেকেণ্ডে ৩৫ কিলোমিটার। দৃশ্যমানতা ভালো থাকলে, মেঘের বাধা না থাকলে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৬০ টি উল্কাবৃষ্টি দেখা যেতে পারে।
প্রশ্ন হলো উল্কা আসে কোথা থেকে? মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেন,’ মহাশূণ্যে এক শীতলতম জায়গা রয়েছে। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি কিলোমিটার।
সৌরমণ্ডলের বাইরে সেই জায়গা প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।একেই বলে কুইপার বেল্ট। এখানে ধুলো আর গ্যাসের ঘনত্ব খুব কম।পাথর আর বরফের টুকরোয় ভরা এই কুইপার বেল্টের মধ্যেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে ধূমকেতুরা। বছরে একবার সূর্যকে সেলাম জানাতে আসে তারা। তখনই সূর্যের তেজে এদের শরীরের কিছু অংশ উল্কা হয়ে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে। গত মাসেই পৃথিবীর অতিথি হয়ে এসেছিলো ‘ লিওনেড।’ সে ‘ টেম্পল টাটল’ নামে ধূমকেতুর অংশ। যে আবার ওই সুদূর ‘ কুইপার বেল্টের’ বাসিন্দা। প্রতি ৩৩ বছরে একবার সূর্যকে পাক খেয়ে যায়। আর সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় প্রচণ্ড উত্তাপে ধূমকেতুর মাথার খানিকটা অংশ ছিটকে বেরিয়ে উল্কা হয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। শুধু যাওয়া আসা, শুধু তারা খসা।