নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রামীণ অর্থনীতিতে ছাগলপালনের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।এই রাজ্যে মূলত অর্ধমুক্তাঙ্গন পদ্ধতিতে ছাগল প্রতিপালন হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের উন্নতমানের ছাগল পালন করা হয়। এই ব্ল্যাক বেঙ্গলের বৈশিষ্ট্য হল এরা এক সঙ্গে ২-৩টি বাচ্চা প্রসব করে। প্রতি বছর শিশুর জন্ম দেয়| এছাড়া এদের মাংস খুবই সুস্বাদু এবং চামড়া উন্নতমানের , তাই ভালো দাম পাওয়া যায়| খড়াপ্রবণ এলাকায় সরকারি সাহায্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রাম্যমানুষেরা ছাগল প্রতিপালনে ক্রমশ উৎসাহী হচ্ছেন। এই ব্ল্যাক বেঙ্গল প্রতিপালনে অনেকেই লাভবান হয়েছেন।| প্রাণী দফতরের সহায়তায় ৯টি স্ত্রী ও একটি পুরুষ ছাগল, কৃমিনাশক ও খনিজলবণ প্রাণী পালককে দেওযা হয|
এবার বলা যাক একটি সদ্যোজাত ছাগশিশুর পরিচর্যার কথা| জন্মের পরেই শিশু ছাগলের মধ্যে থাকা শ্লেষ্মা পরিস্কার কাপড় দিযে মুছে দিতে হবে| যদি শ্লেষ্মা না বেরোয় তাহলে মাউথ টু মাউথ পদ্ধতিতে অর্থাৎ ছাগশিশুর মুখে জোড়ে শ্বাসবায়ু দিলে শ্লেষ্মা বেরিযে আসবে| এছাড়াও যদি ছাগলের পেছনের দুটি পা ধরে একটু নাড়া দেওয়া যায় তাহলে পুরো শ্লেষ্মাই বেরিযে আসে| এরপর সদ্যোজাতটির নেভালকর্ড পরিস্কার জীবাণুমুক্ত ব্লেডের সাহায্যে দেড়ইঞ্চি মতো রেখে কেটে দিতে হবে| এরপর ওই স্থানে জীবাণুনাশক লাগিয়ে পরিচর্যা করতে হবে| সম্ভব হলে ০.৫ মিলি হারে টিটেনাস ইনজেকশন দিতে হবে এবং ২১ দিন পর পুনরায় এই ইনজেকশন দিতে হবে|
জন্মানোর এক থেকে দেড় ঘন্টা বাদে ছাগশিশু দাঁড়াতে পারে| যদি না দাঁড়ায় তাহলে তখনই ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন এ কিংবা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইনজেকশন দিতে হবে| দাঁড়ানোর পরেই ছাগশিশুটিকে মায়ের কোলেস্টেরল বা গ্যাঁজলা দুধ খাওয়াতে হবে| মনে রাখতে হবে সদ্যোজাত শিশুটির ওজন যদি কিলো হয় তাহলে সেই ওজনের ১০ ভাগের ভাগ অর্থাৎ ১৫০-২০০ গ্রাম করে দুধ বাচ্চাটিকে খাওয়াতে হবে| মায়ের এই গ্যাঁজলা দুধে প্রচুর পরিমানে ইমিউনোগ্লোবিন থাকে যা শারীরিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে| দু থেকে আড়াই মাস বয়স পর্যন্ত এই দুধ খাওয়াতে হবে| এরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম খাদ্য, সবুজ ঘাস-পাতা ইত্যাদি খাওয়ানো শুরু করতে হবে| এই সময় হাসপাতালে গিযে ছাগলের ক্যাস্টেশন করিয়ে নেওয়া উচিত| মনে রাখবেন বাড়িতে মুক্ত পদ্ধতিতে নয়, হাসপাতালে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ক্যাস্টেশন করানোই উপযুক্ত|
ছাগল যেখানে প্রতিপালন করা হবে সেই জায়গাটি নিয়মিত পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা ব্লিচিং ছড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে| খামারের আশে পাশে যে গেজিং ল্যান্ড বা ফাঁকা জমি থাকে কারণ ছাগল চড়তে ভালোবাসে| গর্ভবতী ছাগলকে নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণে চড়াতে হবে যাতে ছাগলটি পড়ে না যায় এবং কোনও দূষিত খাবার না খায়| প্রসবের পরে মা ছাগলকে সুষম আহার দিতে হবে যাতে দুধ উত্পাদন ভালো হয়| প্রসবের সময় প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায় বলে এই সময় ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওযানো জরুরী| এই সময় মা ছাগলের পুষ্টির খেয়াল রাখতে হবে যাতে মায়ের দুধ খেয়ে ছাগশিশুরাও পুষ্টি দুধ খাওয়ার পর মায়ের বাটগুলি জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে| এর ফলে কোনওরকম সংক্রমণ হবে না| ধীরে ধীরে ছাগশিশু বড় হতে শুরু করলে নিয়মিত তার টিকাকরণ জরুরী| একটি পূর্ণবযস্ক ছাগলকে ৫-১০ মিলি অ্যালবেণ্ডাজোল নামক কৃমিনাশক সিরাপ প্রতি তিন মাস অন্তর খাওয়াতে হবে এবং পিপিআর ভ্যাক্সিন প্রতি বছর দিতে হবে| এইভাবে কোনও প্রাণী পালক ছাগল পালন করলে ৪-৫ বছরের মধ্যে একটি সুস্থ নিরোগ বিক্রি উপযুক্ত ছাগল পেতে পারেন| শুধু ছাগল বিক্রি নয়, তার দুধ, মাংস এবং চামড়া বিক্রি করেও অর্থোপার্জন করতে সক্ষম হবেন|