fbpx
কলকাতাগুরুত্বপূর্ণদেশপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থ সরকার: ডাঃ মজুমদার

নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারে বেশকিছু ব্যর্থতা চোখে পড়ে। ঘাটতি থেকে গিয়েছে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রেও। করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা তাই মোটেই সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন ভারত সরকারের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সিএমওএইচ ডাঃ অর্চনা মজুমদার। রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে তথ্য সহকারে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ এই স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘মার্চের শেষ দিকেই তো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৭৯ হাজার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রেডি। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

বলা হয়েছিল, স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন স্বাধীনভাবে তৈরি করবে কোভিড টেস্টিম কিট। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। সবই মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হয়েছে। ‘ ডাঃ মজুমদারের অভিযোগ, বাংলায় টেস্টিং-এর হার খুব কম। এপ্রিলেয় মাঝামাঝি অবধি ডেঙ্গির মতো কোভিডের মৃত্যু হারও চেপে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমি এর প্রতিবাদ করে এসেছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সার্বিক ব্যর্থতা, মৃতদেহ চেপে যাওয়ার রাজনীতি, সত্য লোপাটের চেষ্টাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না। তাই বারবার গণমাধ্যমে সরব হতে বাধ্য হয়েছি।

কোভিডে মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া নিয়ে টালবাহানারও সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর দাবি, প্রত্যেক চিকিৎসকই মৃত্যুর শংসা পত্র দেওয়ার অধিকারী। দেশের সংবিধান সেই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই অধিকারও খর্ব করতে চেয়েছে। সেইসঙ্গে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অপর্যাপ্ত পিপিই দেওয়ারও সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, অত্যন্ত নিম্নমানে পিপিই এখনও সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এরই কারণে ডাক্তার ও নার্সদের বাংলায় সংক্রমণের হার বাড়ছে।

সরকারি তথ্য তুলে ধরে ডাঃ মজুমদার বলেন, ‘বাংলাতেই ডাক্তার ও প্যারামেডিকাল স্টাফদের করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। কোভিড আক্রান্তের ১০ শতাংশই তাঁরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন পুলিশ ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবার লোকজন।’ তাঁর আরও অভিযোগ, কলকাতা জুনিয়র ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই ছাড়াই ডিউটি করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজ্য সরকারের উদাসীনতাতেই বহু হাসপাতালকে বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

কোভিড ও কো-মরিবিটি বিতর্ক নিয়েও মুখ খোলেন রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিনিয়ত নিজের প্রচারে ব্যস্ত। অথচ কাজের কাজ কিছু করছেন না। প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। মানুষ রেশন পাচ্ছেন না। মিলছে না সঠিক চিকিৎসাও। মানা হচ্ছে না আইসিএমআর-এর গাইডলাইন।

টেস্টিং কিট নিয়েও প্রকৃত সত্য গোপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনই অভিযোগ করে ডাঃ মজুমদারের দাবি, নাইসেড এবং আইসিএমআর প্রমাণ করে দিয়েছে টেস্টিং কিট নিয়ে রাজ্য সরকারের অভিযোগ অসত্য। তাঁর অভিযোগ, সেনাবাহিনী দেশ জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সম্মান জানাতে পুষ্পবৃষ্টি করেন। অথচ রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারণে সেনাবাহিনীর কাজেও অসহযোগিতা করেছে রাজ্য সরকার। পিএম কেয়ার ফান্ড নিয়েও বাংলার মন্ত্রী-বিধায়করা মিথ্যা প্রচারে নেমেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রেশন দুর্নীতি নিয়েও সরব ডাঃ মজুমজদার।

কোভিড পরীক্ষা ব্যর্থতায় বাংলার স্থান বিহারের পরেই। মাত্র ৯.৭৫ শতাংশ। প্রতিলাখে ৪০। এখন পরীক্ষা কিছুটা বাড়লেও সেটাও প্রয়োজন মতো হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। রাজ্যের ৬৮টি কোভিড হাসপাতালের মধ্যে ৫২টিই বেসরকারি। জেলা প্রশাসন রোগি পাঠানোর আগে থেকেই সেই হাসপাতালগুলিকে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত কার্ড থাকলে দুর্নীতি রোধ করে মানুষ প্রকৃত চিকিৎসা পেতেন বলেও তিনি মনে করেন। প্রশ্ন তোলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে কোভিড চিকিৎসার সুযোগ না থাকা নিয়েও। কন্টেইমেন্ট জোনে এখনও আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে পরীক্ষা হচ্ছে না। আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখাতেই ব্যস্ত রাজ্য সরকার। কোভিডের পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসা লাটে ওঠায়ও রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।

রাজ্য সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা, সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আর অদূরদর্শি সিদ্ধান্তের সঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতিই বাংলাকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, কেন্দ্রের গাইডলাইন মেনে এখনই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তরিক হতে হবে। সেইসঙ্গে একজন চিকিৎসক হিসাবে তিনি মনে করেন,  যুবকদের আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়ার কাজে অংশ নিতে এগিয়ে আসা উচিত। লকডাউনের মধ্যেই শুরু করতে হবে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

Related Articles

Back to top button
Close