
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপির দাপুটে নেতা মনীশ শুক্লা খুনে টুইট করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মনীশের হত্যাকে রাজ্যপাল ‘কাপুরুষোচিত হত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণেই এই হত্যা হয়েছে বলে রাজ্যপাল মনে করছেন। তার প্রেক্ষিতেই যে স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি-কে তিনি তলব করেছেন, তাও রাজ্যপাল স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছেন। টুইটে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্যই ভয়াবহ খুনের ঘটনা, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তলব করা হয়েছে রাজ্যের দুই প্রধান আধিকারিককে। আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যেই রাজভবনে তাঁদের তলব করেছেন রাজ্যপাল।স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং ডিজি বীরেন্দ্র সোমবার রাজভবনে যাবেন কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে মণীশ-হত্যাকে কেন্দ্র করে রাজভবন-নবান্ন সঙ্ঘাত যে আবার নতুন মাত্রায় পৌঁছতে পারে, তার আভাস রবিবার রাতেই মিলছে।
ACS Home @MamataOfficial and DGP @WBPolice have been summoned at 10 am tomorrow in the wake of worsening law and order situation leading to dastardly killing of Manish Shukla, Councillor, Titagarh Municipality in political party office.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) October 4, 2020
বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। সোমবার এলাকায় ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। মূল শহরে বনধের তেমন প্রভাব না পড়লেও, শিল্পাঞ্চল এলাকা রীতিমতো থমথমে। বন্ধ দোকানপাট, যান চলাচল হাতে গোনা। ভর সন্ধেবেলা থানার সামনে যেভাবে ভিড়ের মাঝে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে ঝাঁজরা করে দেওয়া হল তাঁর দেহ, সেই খবর জানতে পেরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রাজ্যপাল ।
বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং গত লোকসভা ভোটের আগে দলবদলে বিজেপি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সেই অশান্তির পারদ আরও চড়েছে। তবে রবিবার থানার সামনে অর্জুন ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতার খুনের ঘটনায় যেন কেঁপে গিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, কর্মী থেকে আমজনতা – সকলে। জানা গিয়েছে, টিটাগড় থানার সামনে বাইকে চড়ে একদল দুষ্কৃতী দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে মণীশ শুক্লাকে লক্ষ্য করে পরপর নাগাড়ে ৭ রাউন্ড গুলি চালায়। তাতেই কার্যত ঝাঁজরা হয়ে যান অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ তরুণ নেতা। তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়।
রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে খুন হয়েছেন বিজেপি নেতা তথা বিদায়ী কাউন্সিলর মণীশ। তাঁর উপর হামলার খবর ছড়ানো মাত্রই রাজনৈতিক শিবিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেনন থেকে শুরু করে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ— প্রত্যেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করেন। আর যাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে মণীশ পরিচিত ছিলেন, ব্যারাকপুরের সেই সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি অর্জুন সিংহ প্রকাশ্যেই হুমকির সুর শুনিয়ে দেন। টুইটারে মণীশকে নিজের ‘ভাই’ সম্বোধন করে অর্জুন লেখেন, ”এই কুকর্মের ফল তৃণমূলকে, তৃণমূলের নেতাকে এবং পুলিশকে এখানেই পেতে হবে।”
তৃণমূলও পাল্টা বয়ান দিয়েছে। জেলা তৃণমূলের সামনের সারির নেতা তথা শিল্পাঞ্চলেরই বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেছেন, ”তৃণমূলকে বদনাম করা বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের একমাত্র কাজ। তাই মণীশ হত্যার দায় অর্জুন তৃণমূলের উপরে চাপাতে চাইছেন।” মণীশ বিজেপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন বলে নির্মলের দাবি। কিন্তু শুধু নেতাদের বয়ান পাল্টা বয়ানের মধ্যে উত্তেজনা সীমাবদ্ধ থাকেনি। যেখানে মনীশের উপরে গুলি চলেছিল, সেই টিটাগড়ে বিজেপি কর্মীরা বড় সংখ্যায় রাস্তায় নামেন। থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিটি রোড অবরোধও করা হয়।