fbpx
অফবিটহেডলাইন

করোনা আবহে কীভাবে পুজো উপভোগ করবেন গাইডলাইন চিকিৎসকদের

দোয়েল দত্ত: দুর্গা পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে শহর জুড়ে সাজো সাজো রব। করোনা আবহেও ঘরে আসছেন উমা।   আতঙ্ককে সঙ্গী করেই শহরের বুকে সুর উঠেছে দেবীর আগমনবার্তা। এরই মধ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে জারি করা হয়েছে সরকারি নির্দেশও। সরকারি নির্দেশ মেনেই পুজোর আয়োজন করছেন বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা।

করোনাকালে পুজোতে কীভাবে সতর্কতা নেবেন

 করোনা আবহের মধ্যে সময় তো আর থেমে থাকে না৷ কালের নিয়মে দুর্গাপুজো উপস্থিত৷ কিন্তু সমস্যা হল ইদানীং অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই করোনা নিয়ে একটা ঢিলেঢালা মানসিকতা লক্ষ করা গেছে ৷ অনেকেই মাস্ক ছাড়া বের হচ্ছেন ৷ সামাজিক দূরত্ববিধি মানছেন না।  যার ফলে উৎসবের মরসুমে করোনার গ্রাফ  ক্রমশ ঊর্দ্ধমুখী হচ্ছে।  কিন্তু এমনটা তো কাম্য নয়৷ কী করা যায়, আর কীভাবে সতৰ্কতা নিতে হবে সেই বিষয়েই জানতে আমরা হাজির হয়েছিলাম বিশিষ্ট ডায়াবেটোলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস মিত্র-র কাছে৷ মুখোমুখি দোয়েল দত্ত

পুজো তো এসেই গেল৷ এদিকে কোভিড পরিস্থিতিও  মারাত্মক ৷ সবদিক বাঁচিয়ে মানুষ কি এবার ঠাকুর দেখতে বেরোতে পারবেন না নির্ভয়ে?

দেখুন এই বছরটা আমরা সকলকেই বলছি বাড়ির বাইরে না বেরোতে, বাড়িতে বসে টেলিভিশনে পুজো পরিক্রমা দেখাই ভালো৷ আর একান্ত দেখতে হলে সকালে বা দুপুরে দেখুন, ওই সময়টা ভিড় তুলনামূলকভাবে কম থাকে৷ সন্ধ্যাবেলা ঠাকুর দেখাটা অন্তত এই বছরের জন্য এড়িয়ে যান৷ তখন বড্ড ভিড় হয়৷  কলকাতার উপর শহরতলির যে মূল ভিড়টা পড়ত, সেটাও এবারে আর ততটা হবে না৷

ঠাকুর দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা বা বিশেষ করে অঞ্জলি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলতে হবে?

বরাবরের মতো এইসময়েও মাস্ক পরবেন এবং যেখানেই যাবেন সঙ্গে অবশ্যই স্যানিটাইজার রাখবেন৷ ব্যাগে একটা অতিরিক্ত মাস্ক রাখুন৷ মুখেরটা ছিঁড়ে গেলে ওটা দিয়ে কাজ চালানো যাবে৷ প্যান্ডেলে ঘুরুন৷ তবে কোনও কিছু ধরবেন না৷ একটু ঠেকা লাগলেই হাত সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজ করে নিন৷

আর অঞ্জলির ক্ষেত্ৰে বাড়ি থেকে ফুল নিয়ে যেতে পারলে সবথেকে ভালো৷ না হলে তিনবার অঞ্জলির পরে হাত ভালো করে স্যানিটইজ করুন৷ মনে রাখবেন ফুল হাতে অঞ্জলি চলাকালীন কখনওই তা চোখে-মুখে দেবেন না৷ হাত ধুয়ে স্যানিটাইজ করে তবেই প্ৰয়োজনে মুখে দেবেন৷ আর অঞ্জলি দেওয়া বা প্যান্ডেল হপিং-এর সময়ে মুখ থেকে কোনওমতেই মাস্ক খোলা চলবে না৷

আর যানবাহন, সেখানকার ভিড় থেকেও তো করোনা ছড়াতে পারে?

হ্যাঁ পারে, এখন তো অনেকে অ্যাসিম্পটোমেটিক ক্যারিয়ার মানে উপসৰ্গবিহীন রোগী আছে, যাদের বাইরে থেকে বোঝা যায় না৷ এই কটা দিন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এড়িয়ে চলুন৷ নিজের গাড়ি ব্যবহার করুন, নয়তো ভাড়া নিন৷ মেট্রোতে ওঠার কথা ভাববেন না৷ আর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরার সময়ে স্যানিটাইজিং বোতল ক্যারি করতে ভুলবেন না৷

অনেকে তো আবার প্রবল গরমে একটু বিশ্রাম নিতে শপিংমলে ঢুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটান৷ কোভিড আবহে এসিতে থাকাটা কি আদৌ নিরাপদ?

বাইরের গরমে ঠাকুর দেখে শপিংমলে বা অন্যত্ৰ কোথাও এসি-তে ঢুকল সর্বনাশ৷ খানিকক্ষণ থাকলে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু খুব বেশিক্ষণ থাকলে ঝুঁকি হতে পারে৷ কেননা এসব জায়গায় প্রচুর লোক থাকে আর দ্বিতীয়ত এখানকার এসিগুলি অধিকাংশ সময়েই ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না, ফলে করোনার জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে৷

পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বাইরে খাওয়া, এই সময়ে সেটা কতটা নিরাপদ?

দেখুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না করলে সেটা খেতে কোনও অসুবিধে নেই৷ খাবার থেকে করোনা ছড়ায় না৷ তবে এসি রেস্তোরাঁতে গাদাগাদি করে বসবেন না৷ বাড়িতে নিয়ে এসে খান৷ তবে এখন তো বিপুল পরিমাণে খাবার  তৈরি হচ্ছে না, আশা করা যায় তার গুণমান ততটা খারাপ হবে না৷ তবে রাস্তার ধারের কাটা ফল এড়িয়ে চলুন৷ বাইরে থেকে জল কিনবেন না৷ সিলড জলের বোতল থেকে করোনা ছড়ায় না, তবে আপনি যে টাকার লেনদেন করছেন সেই স্পর্শ থেকে মারণ ভাইরাসটি ছড়াতে পারে৷ এজন্য ব্যাংককর্মীদের বেশি বেশি করে করোনা হতে আমরা দেখেছি৷ এর থেকে ভালো পেটিএম ব্যবহার করা৷

একদিকে করোনা, অন্যদিকে ঠান্ডা গরমের এই সময়টা ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ আরও নানা রোগের প্ৰকোপ দেখা যাচ্ছে৷ সেগুলোকে কী করে সামলাব?

দিনের বেলা গরম থাকলেও ঋতু পরিবৰ্তন হতে শুরু করে দিয়েছে৷ তাই সকালে ঠাকুর দেখতে বেরোলে ছাতা, জল ও বাড়ি থেকে ওআরএস ওয়াটার ক্যারি করুন৷ সঙ্গে বিস্কুট ।খুব বেশি বাইরের খাবার খাবেন না৷ এতে ডায়ারিয়া হয়ে উলটো বিপত্তি ঘটবে৷ যতটা পারবেন মুখরোচক বাড়ির খাবারের উপরেই ভরসা রাখুন৷

আবার এই সময়টা ডেঙ্গু, টাইফয়েডের সিজন৷ তার জন্যও তো ব্যবস্থা নিতে হবে?

বাড়িতে যাতে মশা না আসে সেজন্য রাত্রে মশারি টাঙানো, জানালায় নেট লাগানো, লিক্যুইডেটার জ্বালানো, বাড়ির বাইরে ও ভিতরে যাতে জল না জমে, বিশেষ করে কয়েকদিনের পরিষ্কার জল সেদিকে খেয়াল রাখা, spray করা  ট্যাংক, ফুলদানি, বালতির জল  নিয়মিত জল পালটানো বাইরে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর মতো ব্যবস্থাগুলোও করতে হবে৷ করোনা এসেছে বলে এই রোগগুলিকে ক্লিনচিট দিয়ে গেছে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই৷

এইসময়ে বাচ্চা বা বয়স্কদের জন্য বিশেষ কোনও সতর্কতা ?

এদের পুজোর ভিড় থেকে দূরে থাকাই ভালো৷ অন্তত এই একটা বছরের জন্য৷

আর ডায়াবেটিসের রোগীরা করোনাকালে পুজোতে কী কী সতর্কতা নেবেন?

আগে থেকে যাদের ডায়াবেটিস ছিল  তাদের যেসব নিয়ম মেনে চলতে হতো, এখনও সেগুলিই মানতে হবে৷ করোনার একটা নতুন বিষয় দেখা যাচ্ছে রোগ সেরে যাওয়ার পরেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে ডায়াবেটিস হচ্ছে৷ এবং সেখানে রক্তশর্করা খুব উচ্চমাত্রায় উঠে যাচ্ছে৷ ফলে চিকিৎসকের পরামৰ্শমতো তাঁদের ওষুধ, ইনসুলিনের ডোজ ও ডায়েট চাৰ্ট মানতে হবে৷ পুজো তো পাঁচদিন বলে সেই চার্টের অন্যথা করলে চলবে না৷ একটা বছর না হয় একটু কষ্ট করলেন৷

আর কারও যদি জ্বর হয়?

সঙ্গে সঙ্গে কোভিড পরীক্ষা করতে হবে৷ কেননা কোনটা ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর আর কোনটা করোনাজনিত জ্বর তা বাইরে থেকে দেখে প্ৰথমেই বোঝা যায় না৷ তাই পরীক্ষা মাস্ট৷ দেখছি, দেখব করে সময় নষ্ট করবেন না৷

এসময়ে বাড়িতে কোন কোন ওষুধ মজুদ রাখা দরকার?

অ্যান্টাসিদ, এনজাইম, প্যারাসিটামল ১০০০, ইলেকট্রল৷ বাইরে বের হলে ইলেকট্ৰলের জল নিতে  পারেন৷ জ্বর হলে বা কোথাও পড়ে গেলে ব্যথা লাগলে প্যারাসিটামলই ভরসা৷

আচ্ছা যারা পুজোর কাজের সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িত, যেমন কর্মকর্তারা, তাদের কি হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইনের  একটা ডোজ নিয়ে রাখা ভালো?

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর এখন আর হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইন খেতে বলছে না৷ করোনা হলে হোম আইসোলেশনে থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হচ্ছে। বর্তমানে ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন দিয়ে একত্রে চিকিৎসা করা হচ্ছে৷ আর প্রয়োজনে  অ্যান্টি ভাইরাল র‍্যাবিপিরাভির দিয়েও চিকিৎসা করা হয়৷ সবশেষে বলব সতর্ক থাকুন, সস্থ থাকুন, পুজো উপভোগ করুন৷

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫

 

Related Articles

Back to top button
Close