
যুগশঙ্খ ডিজিটাল কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক সংগঠনগুলির ডাকে দিল্লি যাওয়ার সময় হরিয়ানাতে আটকানো হয়েছে কৃষক মিছিলকে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে যখন জলকামান ছোড়া হচ্ছে, আম্বালার এক প্রতিবাদীকে দেখা গিয়েছিল, লাফ দিয়ে পুলিশের সেই ভেহিকলে উঠে জলকামানটি বন্ধ করে দিতে। ঘটনার আকস্মিকতায় পুলিশও হকচকিয়ে যায়। অতীতে কোনও বিক্ষোভ দমনে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি পুলিশকে।
কৃষক মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে জলকামান। আর ঠিক তখনই দেখা গেল এই দৃশ্য। পুলিশের লাঠিকে উপেক্ষা করে সেই জলকামানে চেপে পড়লেন এই যুবক। তারপর তা বন্ধ করে দিলেন। ততক্ষণে তাঁকে ধরার জন্য গাড়ির উপর উঠে এসেছেন এক পুলিশ। কিন্তু ধরার আগেই সেই গাড়ি থেকে এক লাফে একটি ট্রাক্টরে গিয়ে পড়লেন তিনি। এই কাজের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে হরিয়ানা পুলিশ। জানা গিয়েছে, ওই যুবকের নাম নবদীপ সিং। বাড়ি হরিয়ানার আম্বালাতে। এক কৃষক সংগঠনের নেতা জয় সিংয়ের ছেলে নবদীপ।
২৬ বছরের নবদীপের এই কাজকে সমর্থন করেছে নেটিজেনদের অনেকেই। ঠান্ডার মধ্যে যেভাব জলকামান দিয়ে কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করা হচ্ছিল তাতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। রাতারাতি কৃষকদের কাছে হিরোতে পরিণত হয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের কাছে তিনি অপরাধী হয়ে উঠেছেন। সূত্রের খবর, নবদীপের বিরুদ্ধে কোভিড ১৯ নিয়ম ভাঙা ও দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে। এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে তাঁর।
প্রতিবাদীর নাম নবদীপ সিং। নবদীপ জানিয়েছেন, ‘আমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরে আমি বাবার সঙ্গে চাষবাস শুরু করি। আমার বাবা একজন কৃষক নেতা। আমি কোনও দিন কোনও বেআইনি কাজ করিনি। কিন্তু যেভাবে প্রতিবাদীদের উপর জলকামানের ব্যবহার হচ্ছিল সেটা সহ্য করতে না পেরে আমি সাহস করে এই কাজ করেছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলাম। দিল্লির দিকে যাওয়ার রাস্তা চাইছিলাম আমরা। সরকারকে প্রশ্ন করার সব অধিকার আমাদের রয়েছে। যদি কোনও মানুষ-বিরোধী আইন পাশ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’ কৃষক সংগঠনের নেতা জয় সিংয়ের ছেলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যায়, প্রবল উত্তেজনার মাঝে নবদীপ একটি নীল রঙের জলকামানে তরতর করে উঠে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে জলকামনটি বন্ধ করে, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক্টরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই জলকামানটি থেকে সেসময় আন্দোলনরত কৃষকদের দিকে তাক করে জল ছোড়া হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে বরযাত্রী বোঝাই বাস উল্টে আহত ১৮
নবদীপ আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানান, আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান থেকে সেসময় ঠান্ডা জল ছোড়া হচ্ছিল। কৃষকদের রক্ষা করতেই তিনি তত্পরতা দেখান। জলকামানটি বন্ধ করে দেন। কৃষক নেতার ছেলের কথা অনুযায়ী, পড়াশোনার ফাঁকে তিনিও চাষ করেন। নবদীপ মনে করেন, তিনি কোনও বেআইনি কাজ করেননি বা তাতে প্ররোচনা দেননি। এই ঠান্ডায় জলকামানের জলে আন্দোলনরত কৃষকদের কষ্ট হচ্ছিল। তাই কৃষকদের রক্ষা করতেই তিনি জলকামানে উঠে কলের মুখটি বন্ধ করে দেন।
কৃষক সংগঠন নেতার ছেলে নবদীপ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, জনবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সবরকমের অধিকার আমাদের রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই আমাদের প্রতিবাদ চলছিল। আমরা দিল্লিতে ঢুকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ব্যারিকেড করে, কাঁটাতার ফেলে রাস্তা আটকে দেয়। সরকার যদি জনবিরোধী আইন পাস করে, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলার সবরকম অধিকার আমাদের রয়েছে।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান উপেক্ষা করে কৃষকরা তাঁদের আন্দোলনে অনড় রয়েছেন। বিগত কয়েক ঘণ্টা ধরে দিল্লির একাধিক সীমানায় তাঁরা অবস্থান করছেন। এর মধ্যে একাধিক বার ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানী অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টাও করেছেন। কৃষক সংগঠনগুলোর বক্তব্য, কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার না-হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কৃষকদের অনড় মনোভাবের কারণে শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের দিল্লিতে ঢোকার অনুমতি দেয়। তবে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দেওয়া হয়নি। বুরারির নিরঙ্কারী ময়দানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভে শামিল আর এক কৃষকের কথায়, ‘কোভিড-১৯ গাইডলাইনের কথা বলে পুলিশ আমাদের প্রতিহত করতে চেয়েছিল। কিন্তু, আমরা সমস্তরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই দিল্লি অভিযানে শামিল হয়েছি। কেন্দ্রীয় আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।’