সিএএ লাগু করতে এবার বিজেপির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা!

রক্তিম দাশ, কলকাতা: সংসদে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরনার্থীদের রক্ষাকবচ সিএএ বিল পাশ হওয়ার নয়মাস অতিক্রান্ত হলেও এখন কেন এই বিলকে আইন হিসাবে বাস্তবায়ন করা গেল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাংলার হিন্দুত্ববাদীরা। সিএএ-কে অবিলম্বে লাগু করতে তাঁরা এখন বিজেপির ওপর চাপ বাড়াতে আন্দোলনের নামার কথা চিন্তু করছেন বলে জানা গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রে মোদি সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য। শুক্রবার তিনি যুগশঙ্খকে বলেন,‘ দিল্লিতে সংসদ চলতে পারে, অসংখ্য বিল পাশ হতে পারে, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে কথাবার্তা হতে পারে কিন্তু সিএএ প্রয়োগের বিধি তৈরি হতে পারে না। এর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা আছে? হিন্দু সংহতি বিগত তিন বছর ধরে এনআরসি এবং সিএএ-র দাবিতে আন্দোলন করে এসেছে। আমরা উদ্বাস্তু হিন্দুদের কাছে বিজেপির হয়ে নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলাম। তাদের প্রতি আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমরা সেই দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারি না।’
দেবতনুবাবু বিজেপিকে সর্তক করে দিয়ে বলেন,‘গত লোকসভা নির্বাচনে আমরা সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করেছি, যেহেতু মোদিজী এবং অমিত শাহ এনআরসি এবং সিএএ বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন। সিএএ পাশ হয়ে যাওয়ার পরে দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে শুরু হয় মানুষকে বিভ্রান্ত করার খেলা। সেই সময়ে এককভাবে ছাড়াও অন্যান্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে রাজ্যব্যাপী সিএএ-র সমর্থনে মিটিং মিছিল করেছি। বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্বের ইস্যুতে বিজেপি আজ পিছু হটছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বোঝা উচিত যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানে উদ্বাস্তু হিন্দুদের একটা বিশাল অবদান আছে। তারা যদি সিএএ বাস্তবায়নে গড়িমসী করে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই উদ্বাস্তু ভোট বিজেপির পক্ষে থাকবে না।এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আমাদের আলাপ আলোচনা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবো।’ সিএএ দ্রুত লাগু করার প্রশ্নে একমত পোষন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তও।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর আমার বিশ্বাস আছে। সবাইকে বলছি এই বিশ্বাসটা রাখুন। আমি আশাবাদি তিনি যথাযথ সময়ে সিএএকে লাগু করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।’ বিষিষ্ট শিক্ষাবিদ অচিন্ত্য বিশ্বাস বলেন,‘ সিএএ লাগু হওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে আগত শরনার্থীরা বিজেপির দিকে তাকিয়ে আছে। আর এটা না হলে তারা প্রবল হতাশ হবে। তার ফল কিন্তু একুশের নির্বাচনে ভাল হওয়ার কথা নয়। আমার মনে হচ্ছে, সিএএ-ও বিষয়টা নিয়ে অল্প হলেও কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে চলছে। শরানার্থীদের একটা অংশ যাঁরা শিক্ষিত তাঁরা কিন্তু মনে করছে অন্য একটি গোষ্টির ভোটের কারণে এটা হচ্ছে। এই হতাশা বাড়তে থাকলে ভোটে এর অবশ্যই পড়বে। এটা ঠিক হচ্ছে না।’
এদিকে সিএএ দ্রুত লাগু করার দাবিতে উদ্বাস্তু আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা সুবোধ বিশ্বাস নাগপুর থেকে বাংলায় এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় এবং প্রবীন নেতা এবং প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সূত্রের খবর, তিনি মুকুল রায়কে এবং তথাগত রায়কে সাফ জানিয়েছেন, নয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও রুল পাস হয়নি। উদ্বাস্তুরা অনেক ঠকেছে। চুন খেয়ে গাল পুড়েছে। দই দেখলে ভয় হয়। এই নিয়ে উদ্বাস্তুদের মধ্যে ভয়ঙ্কর ক্ষোভ দানা বেধেছে। যদিও মুকুল রায় এবং তথাগত রায় তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছেন,‘আপনারা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপওে ভরসা রাখুন।’