পুজোর দিনগুলিতে কীভাবে করোনা বিধিনিষেধ মেনে আনন্দ করে কাটাব… জানালেন ডা: অর্চনা মজুমদার

ডা: অর্চনা মজুমদার: দোরগোড়ায় শারদ উৎসব। আর হাতে মাত্র কয়েকটা দিন। চতুর্দিকে একটা উন্মাদনার ভাব। করোনা আবহে বিগত ছয় মাস ধরে মানুষ এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। মায়ের আগমনের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সকলেই আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। কিন্তু করোনা দাপট অব্যাহত। আর দুর্গাপুজোকে ঘিরে মানুষের মধ্যে চিরাচরিত আবেগ, নস্টালজিয়াও সমানতালে রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে সমগ্র জাতিকে সুস্থ থাকতে হলে নিজের কথা নিজের পরিবারের কথা ভেবে সাবধানে থাকতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিধিনিষেধ পালন করতে হবে।
আমাদের দেশে জনঘনত্ব খুব বেশি। তাই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার ভয়ও বেশি। তাও সকলকে প্রথমে মাথায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্বের কথা। তাই পুজোর সময় ভিড় এড়িয়ে যেতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কারণ এতদিনে আমরা সকলেই জেনে গেছি, ড্রপলেট থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা। ঘন ঘন হাত ধোওয়া। যেখানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই সেখানে স্যানিটাইজার ব্যবহার করব।
কিভাবে নিজেকে ভালো রাখব
১। একজনের সঙ্গে অপরজনের ২ মিটার দূরত্ব মেনে চলুন।
২। খোলা, মুক্ত বাতাস, রোদ গায়ে লাগান।
৩। অন্য কোনও মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় মুখোমুখি না হয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে চলুন।
৪। বাড়ির বাইরে যারা বের হচ্ছেন তারা, ঘরে এসে সমস্ত কিছু স্যানিটাইজ করে নিজের পোশাক ধুয়ে ফেলুন। সেইসঙ্গে নিজেও গরম জলে স্নান সেরে ফেলুন।
৫। কারুর হাত স্পর্শ হলে, পরক্ষণেই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, যেখানে সাবান নেই সেখানে স্যানিটাইজার নিয়ে হাত জীবাণু মুক্ত করুন।
৬। পুজোর সময় সকলের ইচ্ছে করে নতুন পোশাক কিনতে, তাই এই সময় মলে না গিয়ে অনলাইন শপিং করুন।
৭। গণ পরিবহনগুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৮।বাইক, সাইকেল, পায়ে হেঁটে, নিজের বাড়ির গাড়ি বা কোনও গাড়ি নিজের মতো করে ভাড়া করে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৯। ইলেক্ট্রনিক বিজনেস কার্ড ব্যবহার করা ভালো।
১০। কারুর সঙ্গে জরুরি বিষয়ে কথোপকথনের ক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি কাজটি করার চেষ্টা করুন।
১১। ভাইরাসগুলি যে দেশে বা রাজ্যে বেশি সংক্রামিত হয়েছে সেই সমস্ত জায়গাগুলি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
১২। ব্যবসায়িক ভ্রমণগুলি নিয়ন্ত্রণ করুন।
১৩। মুখোমুখি না হয়ে অন্যদের সঙ্গে খাবার খেতে হলে পাশে বসে খান। পাশাপাশি এই সময়ে একে অপরের পাত্র থেকে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যে যার নিজের পাত্রে খাবার খান।
১৪। শাকসবজি, মরশুমি ফল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন।
১৫। কোনও রকম শারীরিক অসঙ্গতি দেখা দিলে অতি সত্ত্বর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
১৬। যখনই টয়লেটে যাবেন তখনই ভালো করে ফ্ল্যাশ করুন, সেইসঙ্গে জীবাণুনাশক লিক্যুইড দিয়ে ভালো করে বাথরুম পরিষ্কার করে ফেলুন।
সর্বোপরি জানিয়ে রাখা ভালো, সকলেই তাকিয়ে আছে ভ্যাকসিনের দিকে। তবে ভ্যাকসিনটি পুরোপুরি বিকাশ ও আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহারের জন্য আমাদের আরও এক বছর সময় লাগতে পারে। তাই ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করা শিখতে হবে। শরীরে থাকা অন্যান্য অসুখগুলি চিকিৎসা করাতে হবে। সুগার, প্রেসার, হার্ট, কিডনি বা ক্যান্সার থাকলে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। দুর্গাপুজোর কথা নিয়ে শুরু হয়েছিল, তাই মায়ের আরাধনা করব মন দিয়ে, অঞ্জলি দেব, তবে সব কিছুই করব সাবধানতা মেনে।
লেখক ভারত সরকারের পূর্বঞ্চলীয় স্বাস্থ্য আধিকারিক