
অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: ধর্মগত বিভেদ থাকলেও মানবিকতা যে সমস্ত কিছু মুছে দিতে পারে, তার প্রাজ্জ্বল উদাহরণ শুক্রবার সকালে হাওড়া ব্রিজ। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে বাঁচাতে হিন্দু বাবাকে সাহায্য করলেন মুসলিম সিভিক ভলেন্টিয়ার। প্রমাণ করলেন, ধর্ম মানুষের যাই হোক, রক্তের রং সকলের সমান। তার কোনও জাত হয় না।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্য রক্ত জোগাড় করতে হাওড়া মালিপাঁচঘড়ার শুভেন্দু ভুক্ত দ্রুতগতিতে মোটরবাইক নিয়ে কলকাতা শহরে আসছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সকাল ১১ টা নাগাদ তখন শহরে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দিনের লকডাউন। দ্রুত গতিতে আসতে হাওড়া ব্রিজের ওপরে স্কিড করে পড়ে যান। ক্ষতবিক্ষত হয়ে যান বাবা। কিন্তু তার পরেও শরীরে জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে ওই অবস্থাতেই ফের শহরে আসছিলেন শুভেন্দু।
এদিকে হাওড়া সেতুর মুখে চলছিল কলকাতা পুলিশের নাকা চেকিং। থামানো হয় হাওড়ার দিক থেকে শুভেন্দুবাবুর বাইক। আরোহীর গায়ে রক্তের দাগ দেখে স্বাভাবিক ভাবেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা বাইক আরোহীর কাছে জানতে চান কেন তাঁর শরীরে, জামা-কাপড়ে রক্তের দাগ?
শুভেন্দুবাবু পুলিশকে জানান, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ১১ বছরের ছেলে সুপ্রিয়র জন্য এক বোতল রক্ত আনতে হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থেকে কলকাতার পদ্মপুকুরে একটি ব্লাড ব্যাঙ্কে আসছিলেন। ২০ দিন অন্তর ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয়। শুক্রবার ছিল সুপ্রিয়র ব্লাড ট্রান্সফিউশনের দিন। কিন্তু এবারে করোনা পরিস্থিতির জন্য স্বেচ্ছা-রক্তদাতা না পেয়ে শুভেন্দু ঠিক করেন, ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে বিনিময়ে ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত আনবেন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে বেরিয়ে তাড়াহুড়োয় হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখেই দুর্ঘটনায় পড়েন। রাস্তায় বাইকের চাকা কোনও ভাবে পিছলে যায়। তাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পোশাকে রক্তের দাগ লাগে।
গোটা ঘটনা শোনার পরে হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার মহম্মদ নিয়াজুদ্দিন এগিয়ে এসে আহত শুভেন্দুবাবুকে আশ্বস্ত করে বলেন, এই শরীর নিয়ে তাঁর রক্ত দেওয়ার দরকার নেই, তার বদলে তিনিই শুভেন্দুবাবুর সন্তানের জন্য রক্ত দেবেন। নিয়াজুদ্দিনের এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই নাকা চেকিংয়ে উপস্থিত অফিসারেরা তাঁকে শুভেন্দুর সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেন। পদ্মপুকুরে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে ‘এ পজিটিভ’ রক্ত দেন মহম্মদ নিয়াজুদ্দিন। পরিবর্তে ছেলের জন্য ‘ও পজিটিভ’ রক্ত নিয়ে হাওড়ার হাসপাতালে ফেরেন শুভেন্দু। রক্ত পায় ১১ বছরের সুপ্রিয়। আর এভাবেই মুসলিম রক্ত সমস্ত বিভেদ পার করে মানবিকতার বন্ধনে মিশে যায় হিন্দু শিশুর শরীরে।