
উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বড় হয়ে ওঠা। বর্তমানে মুম্বইয়ের বাসিন্দা তিনি। গত ১৪ থেকে ১৫ বছর বলিউডে একজন গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, কম্পোজার হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। মুম্বইয়ের অন্যতম প্লেব্যাক সিঙ্গার, সঙ্গীর সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক অঙ্কিত তিওয়াড়ির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন যুগশঙ্খ ডিজিটালের প্রতিনিধি বিপাশা চক্রবর্ত্তী। এক সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় উঠে গেল মুম্বইয়ের এই শিল্পীর জীবনের নানান ওঠাপড়ার কথা।
প্রশ্ন: জীবনের এতগুলো বছর পার করে আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। সেই জার্নিটা কিরকম ছিল?
অঙ্কিত: উত্তরপ্রদেশে কানপুরে বড় হয়ে ওঠা। আমার মা ভক্তিমূলক সঙ্গীত গাইতেন, সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পাই। শৈশব থেকেই একজন ভালো গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। বলা যেতে পারে আমাদের গোটা পরিবার গানের সঙ্গে যুক্ত। কাজেই ছোটবেলা থেকে সঙ্গীতের আবহে বড় হয়ে ওঠা। গায়ক হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারিনি। গুরু-শিষ্য পরম্পরাও বলা যেতে পারে। এই সমস্ত কিছুই আমার জীবনে অন্যতম অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। আর পরিবার থেকে খুব সহযোগিতা পেয়েছি। এরপর পরবর্তীকালে মুম্বইতে আসা। প্রথমে একটা অ্যাড ফিল্ম দিয়ে কাজ শুরু করি। পরিচালক প্রদীপ সরকারের হাত ধরে আমার কাজ শুরু। যার নাম ছিল ‘জিঙ্গেল’। বাংলা ভাষাতেই কাজ করি। তারপর আমি আমার জীবনের পথে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
প্রশ্ন: গানের জগতে সবচেয়ে প্রিয় বাদ্যযন্ত্র কি?
অঙ্কিত: পিয়ানো। কেন আমার এত পিয়ানো বাজাতে ভালো লাগে জানি না, তবে যখনই কোনও সুর কম্পোজ করি তখন পিয়ানোই আমার সবচেয়ে প্রিয়।
প্রশ্ন: মুম্বইতে খুব স্ট্রাগল, ফাস্ট লাইফ। আপনাকে কি ধরনের অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল?
অঙ্কিত: যেকোনও পেশার মধ্যেই স্ট্রাগল আছে। যদি মানুষ স্ট্রাগলই না করে তাহলে সাফল্যের মজা বোঝা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: নেপোটিজ্যম নিয়ে কি বলবেন?
অঙ্কিত: নেপোটিজ্যম নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে নেপোটিজ্যম হল আপনাকে খুব কাছাকাছি সাফল্যের সামনে নিয়ে যায়। কিন্তু আপনার মধ্যে যদি সেই যোগ্যতা না থাকে, তাহলে সেই সাফল্য বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: মুম্বইতে শুরুর দিকে কোনওদিন কি মনে হয়েছে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আবার কানপুর ফিরে যেতে?
অঙ্কিত: অনেকবার মনে হয়েছে যে, আর নয় আর পেরে উঠছি না। এবার সব ছেড়ে দেব। কিন্তু আবার সেই মনকে বুঝিয়েছে, নিজের স্বপ্ন নিয়ে ভেবেছি। তখন মনে হয়েছে ঠিক পারব। আবার লড়াই শুরু করেছি নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য। হার মানেনি, ভেঙে পড়িনি।
প্রশ্ন: এত ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারকে কিভাবে সময় দেন?
অঙ্কিত: কাজ, কাজের জায়গায় আর পরিবার, পরিবারের জায়গায়। কাজ আর পরিবারের মধ্যে কোনওদিন গুলিয়ে ফেলি না। যতটা সম্ভব ব্যালান্স করে চলার চেষ্টা করি। তবে আমার স্ত্রী এই ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করে।
প্রশ্ন: একাংশ মানুষের ধারণা আগে গানের সুর, কথায় যে মাধুর্য্য ছিল, সেই ধরনের গান এখন আর শোনা যায় না। কি বলবেন এই ব্যাপারে?
অঙ্কিত: একদিক দিয়ে দেখতে গেলে বলা যায় অনেক সময় ভালো ভালো সুরকার, গায়করা ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের জায়গা পান না। তার ফলে বেস্ট বা অরিজিনাল কাজটা দেবেন সেটা দিতে পারেন না।
কিন্তু শিল্পের স্থান যেখানে ছিল সেখানেই আছে। অনেক শিল্পী এই ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আরও অনেক নতুন উদ্যমী, প্রতিভাবান শিল্পীরা আসছেন। তবে বর্তমানে যে গানগুলি আসছে সেগুলি দর্শকদেরও ভালো লাগছে। সে রিমেকই হোক বা অন্য কোনও গান। তবে একজন গায়ক বা শিল্পী হিসেবে মনে করি কোথাও হয়তো কিছু খামতি আছে বা হচ্ছে। তবে আমি মনে করি সেই গানই বেশি হিট হয় যে গানগুলি দর্শকরা পছন্দ করে।
প্রশ্ন: ইন্ডান্ট্রিতে যারা নতুন যারা আসছে তাদের জন্য কি বলবেন?
অঙ্কিত: যে বিশ্বাস, স্বপ্ন নিয়ে তারা ইন্ডাস্ট্রিতে আসছে তাদের সেই লক্ষ্য যেন নির্দিষ্ট থাকে। বাধা আসলেও সাহস করে এগিয়ে যেতে হবে। একদিন নিশ্চিত সাফল্য আসবে।
প্রশ্ন: বাংলায় গান গাইতে আগ্রহী?
অঙ্কিত: ভীষণভাবে। এটাই আমার জীবনের অন্যতম স্বপ্ন।
ধন্যবাদ।