
শরণানন্দ দাস, কলকাতা: করোনার আবহে সঙ্কটে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা। সরকারি হাসপাতালে শয্যার অভাব, অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার অভিযোগ। বেসরকারি হাসপাতালেও ছবিটা আলাদা কিছু নয়, উপরন্তু করোনা চিকিৎসায় বিপুল বিলের অভিযোগ। সমস্যাটা আরও বেশি যাঁরা করোনা না হলেও অন্য অসুখের চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। এই সমস্যায় আশার আলো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বাঁচবো হিলিং টাচ’। মূলত যাঁরা প্রবীণ নাগরিক, তাঁদের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে ‘বাঁচবো’।
সংগঠনের সভাপতি ডাক্তার ধীরেশ চৌধুরী জানালেন, ‘ করোনার এই সঙ্কটের সময় সমস্যায় পড়ছেন যাঁরা অন্য অসুখে ভুগছেন। অনেকেরই হার্ট বা অন্য সমস্যা রয়েছে, অনেক সিওপিডি রোগি রয়েছেন। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে প্রথম গুরুত্ব পাচ্ছে করোনা রোগি। ফলে বিপদে পড়েছেন অন্য অসুখে আক্রান্ত রোগিরা। বিশেষ করে প্রবীণ মানুষেরা। অনেকেই একা থাকেন, এক্ষেত্রে তাঁদের জন্য আমরা বাড়ি গিয়ে পরিষেবা দিচ্ছি। আমাদের ডাক্তার, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সহ অন্য চিকিৎসা সরঞ্জামসহ আমরা প্রবীণ মানুষটির বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হল রোগিকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা। তার কারণ হলো, হাসপাতালে প্রবীণরা গেলে অন্য সংক্রমণের ভয় থাকে। একান্ত বাধ্য না হলে আমরা রোগিকে হাসপাতালে পাঠাই না।’
বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ধীরেশ চৌধুরীর দাবি পূর্ব ভারতে তাঁরাই প্রথম বাড়িতে গিয়ে প্রবীণদের চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করেন। ‘২০০৭ সাল থেকে এই পরিষেবা শুরু করি। অবশ্য যখন আমি ডাক্তারি পড়ছি সেই সময় থেকেই বস্তিবাসীদের মধ্যে মেডিক্যাল ক্যাম্প করতাম সহপাঠীদের সঙ্গী করে। আমরা কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিশিং এর ‘প্রণাম’ প্রকল্পের সঙ্গেও জড়িত। লকডাউনের গোড়ার দিকে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আমরা হেল্প ডেস্কও চালু করেছিলাম।’
ডাক্তার চৌধুরী জানালেন, ‘ যাঁরা বাঁচবো হিলিং টাচের সদস্য, তাঁদের তিনটি ভাগ রয়েছে- গোল্ডেন, ডায়মন্ড ও সিলভার। গোল্ডেনের ক্ষেত্রে বছরে ২ বার রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, প্রতি দু মাসে একবার ডাক্তার বাবু বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। বছরে ১ বার মনস্তত্ত্ববিদ মানসিক সুস্থতার পরীক্ষা করবেন, ডায়টিশিয়ানও বছরে ১ বার খাদ্যতালিকা ঠিক করে দেবেন। করোনা পরিস্থিতিতে সদস্যদের প্রতিমাসে দুবার টেলিমেডিসিন চেক আপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডায়মন্ডের ক্ষেত্রেও বছরে দু’বার রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি করা হবে। এছাড়াও ডায়টেশিয়ান বছরে ১ বার খাদ্য তালিকা ঠিক করে দেবেন। সিলভারের ক্ষেত্রে প্রতি ২ মাসে একবার ডাক্তারবাবু বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন।’
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গুলি! আহত এক পুলিশ, বাড়ল নিরাপত্তা
সদস্যদের মধ্যে কেউ করোনা পজিটিভ হলে এবং মৃদু উপসর্গ থাকলে তাঁকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন তাঁরা। কোভিড নির্দেশিকা মেনে রোগি করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর তাঁর ঘরটিও স্যানিটাইজ করে দিচ্ছেন।
‘বাঁচবোর’ সদস্য বিশিষ্ট অভিনেত্রী শকুন্তলা বড়ুয়া বলেন, ‘ ওঁরা দুর্দান্ত কাজ করছেন। এই সময়ে যা অবস্থা টেলিভিশনে খবরে দেখছি তাতে শিউরে উঠছি। মেয়ে মারা গিয়েছে, বাবা জানেন না। ট্রলির টিকিট নম্বর দেখে জানতে পারলেন ওই মৃতদেহটি তাঁর মেয়ের। কী মর্মান্তিক! ‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়েরা বাইরে থাকে, তাই চিন্তা করে খুব। আমি বলেছি , ধীরেশ আছে, চিন্তার কিছু নেই। ওঁরা সত্যিই একটা খুব বড়ো সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন।’ রাতবিরেতে শারীরিক সমস্যার হলে প্রবীণেরা যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে- ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬। পাশে পাবেন ‘ বাঁচবোকে’। ১০ জন ডাক্তার, ৭ জন নার্স আর বাকিদের নিয়ে ২৫ জনের মানবিক ‘ মুখ’ তৈরি।