আমি না জিতলে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন, আমায় মুখ্যমন্ত্রী রাখতে ভোট দিন: মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি: মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টির জন্য প্রচার করতে পারেননি ভবানীপুরের তৃণমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বুধবার প্রচার করলেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই। সাফ জানিয়ে দিলেন, ভবানীপুরের উপনির্বাচনে তিনি না জিতলে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সেইসঙ্গে একবালপুরের পথসভায় বিজেপিকে হুঙ্কার দিয়ে বলেন,”তোমাকে বধিবে যে, ভবানীপুরে বাড়িছে সে”। অর্থাৎ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিদায়ে তিনি নিজেই যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবেন, সেটাই কার্যত বুঝিয়ে দিলেন। বুধবার চেতলাতেও প্রচার করেন তিনি। সেখানে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘আমি না জিতলে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী রাখতে ভোট দিন। আমার কাছে প্রতিটি ভোট দামি।’’ তিনি বলেন, ‘‘২০২১-এর নির্বাচনে কৃষক আন্দোলনের জায়গা নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। তাই দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে কীভাবে হারানো হয়েছে তা প্রকাশ্যে আসবে। আদালতে মামলা চলছে। জানা যাবে, আমার বিরুদ্ধে সেখানে কী করা হয়নি! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হলে ভবানীপুর থেকেই হবে। এটা ভাগ্যের খেলা। আপনাদের ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’ সেই সূত্রেই তিনি বলেন, ‘‘অনেকে ভাবছেন দিদি এমনিই জিতে যাবে। কিন্তু প্রতিটি ভোট দামি। একটা ভোট না দিলে আমার ক্ষতি হবে। ভোট না দিলে আমাকে পাবেন না।’’ এদিন
পথসভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘আমি মোদি-শাহকে দাদা-ভাই বলতে পারি। এটা সৌজন্য। কিন্তু তাই বলে দেশে তালিবানি শাসন মেনে নেব না। দেশে সকলে থাকবে। দেশকে টুকরো করতে দেব না। রাজ্যকেও টুকরো করতে দেব না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভাজন আসতে দেব না।’’ আর ত্রিপুরায় রাতারাতি ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ত্রিপুরা, অসম, গোয়া এবং উত্তরপ্রদেশেও খেলা হবে।’’ মমতার বার্তা, ‘‘আপনাদের এক একটা ভোট আগামিদিনে দিল্লির পথে পা বাড়াতে সাহায্য করবে। আপনাদের ভোট দাঙ্গাবাজদের রুখে দিতে সাহায্য করবে। এখানে গাছ পুঁতলে দিল্লিতে গিয়ে গাছ বড় হবে। এখানে গাছের চারাটা পুঁতে দিন।’’ পাশাপাশি বিজেপি-কে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ যদি মনে করো তোমরা বুনো ওল, তা হলে আমরা কিন্তু বাঘা তেঁতুল।’’
সেখান থেকে বিজেপিকে দেশ ছাড়া করার ডাক দিলেন তিনি। বললেন, “আপনাদের একটা ভোট দিল্লির দিকে এগিয়ে দেবে আমাদের।”
এদিন একবালপুরের সভার শুরুতেই বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপিকে তুলোধনা করেন মমতা। তিনি বলেন, “ত্রিপুরায় তৃণমূল নেতারা গেলেই মারধর করা হচ্ছে। কোনও কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূল যাচ্ছে জানতে পারলেই ১৪৪ ধারা জারি করা হচ্ছে।” অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরাকে ইডির তলব নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন,” কেন রাজ্যের মামলা দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হল?”
উল্লেখ্য ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর উপনির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেই জিতে এসেছিলেন মমতা। কেন ভবানীপুরকে বেছে নিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গ এদিন নিজেই তুলে ধরেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তাঁর মায়ের ইচ্ছাতেই প্রথমবার ভবানীপুরে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। চেতলার কর্মিসভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “আমি এখানেই ছোট থেকে বড় হয়েছি। মা একদিন বলেছিল, তুই এখানে একবার দাঁড়াতে পারিস তো। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন? মা বলেছিল, তাহলে আমি তোকে একটা ভোট দিতে পারি। আমারও তো মেয়েকে ভোট দিতে ইচ্ছে করে।” সেইসঙ্গে মমতার মুখে উঠে আসে সিপিএমের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সংগ্রামের কথা। মমতা বলেন, “হাজরা মোড়ে আমাকে মেরেছিল, আপনারা তো জানেন। সেবার ভোটে দাঁড়ানোর মতো শারীরিক ক্ষমতা আমার ছিল না। তবু দলের অনুরোধে এখান থেকে দাঁড়াই। এখান থেকে ( দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র) আমি ৬ বার সাংসদ হয়েছি। ২ বার বিধায়ক হয়েছি। অন্য জায়গায় দাঁড়ালেও আমার মন তো এখানে পড়ে থাকে। এই এলাকা তো আমি চষে বেড়াই। পুজোর সময় আসি। সব অনুষ্ঠানে আসি।” এরপরই তিনি এলাকার উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি বিজেপির উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “ভবানীপুরেও বহিরাগতরা ঢুকে পড়েছে। ভিতরে কেউ নেই। শুধু বহিরাগতরা প্রচার করছে। ওঁদের জিজ্ঞাসা করুন, মানুষের জন্য কী করেছে? বলুন, আগে গ্যাসের দাম দিয়ে যান, তার পর ভোট চান।”