হাইকোর্ট আরও আগে নির্দেশ দিলে আমরা লাখ লাখ টাকার বাজি কিনতাম না… এখন না খেতে পেয়ে মরতে হবে

অভিষেক আচার্য, কল্যাণী: নদিয়ার কল্যাণীর চর কাঁচড়াপাড়া বাজি শিল্পের জন্য পরিচিত। সেখানকার বাজি ব্যবসায়ী এক বয়স্কা মহিলা। হাইকোর্টের নির্দেশ, নিষিদ্ধ বাজি। কি বলবেন? প্রশ্ন করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বললেন,” আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে। গয়না বন্ধক দিয়ে বাজি কিনেছিলাম কয়েক লাখ টাকার। সবটাই জলে চলে গেল। না খেতে পেয়ে মরতে হবে।” পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আর এক মধ্যবয়স্কা মহিলা। তাঁকে সংসার কিভাবে চলছে জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,” স্বামী ক্যান্সার রোগী। বাজি বিক্রি করেই স্বামীর চিকিৎসা চলে। কিন্তু দোকানটাই বন্ধ। বাজি বিক্রি হবে কি করে? ধার করে বাজি কিনেছিলাম। এখন মরা ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
কল্যাণী-ব্যারাকপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওপর ঈশ্বর গুপ্ত সেতু থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলে দেখতে পাওয়া যাবে এই বাজি বাজার। দীর্ঘদিন ধরেই পঞ্চাশ জনের বেশি ব্যবসায়ী এখানে বাজি বিক্রি করেন। কালীপুজো এলেই উপচে পড়ত ভিড়। নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতেন না ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবছর চিত্রটা একেবারেই অচেনা। ভিড় তো দূর অস্ত। দোকানপাট সব বন্ধ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, নিষিদ্ধ বাজি। সেই কারণেই পুরো শুনশান চর কাঁচড়াপাড়ার বাজি বাজার।
কথা হচ্ছিল আর এক বাজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে বাজি তুলেছিলাম। হাইকোর্টের নির্দেশের পর বন্ধ দোকান। এখন তো সুদের টাকাই দিতে পারব না। খাব কি? আদালতের নির্দেশকে অমান্য না করেই বলছি, অন্তত কালীপুজোর দিন দু’ঘন্টা বাজি বাজার খোলার নির্দেশ দিক মহামান্য আদালত। তাহলে অন্তত ধারের টাকা শোধ দিতে পারবো। নাহলে শেষ হয়ে যাব”। একই বক্তব্য আরও এক বাজি ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, “কালীপুজোর সময় আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। শেষ সময়ে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, বাজি নিষিদ্ধ। এই নির্দেশ আরও আগে দিতে পারত। তাহলে আমরা লাখ লাখ টাকার বাজি কিনতাম না। এখন তো টাকা,বাজি দুটোই নষ্ট।”
ক্ষোভ, আক্ষেপ, হতাশা সবটাই রয়েছে বাজি ব্যবসায়ীদের। সবার একটাই দাবি, সময় রয়েছে এখনও। বাজি নিষিদ্ধ রায় পুনর্বিবেচনার করা হোক।
আরও পড়ুন: কলকাতায় ২৮ বছরের যুবকের ব্রেন ডেথ, অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিল পরিবার
ব্যবসায়ীদের সেই দাবি মানা হবে কি হবে না তা জানা নেই। তবে এটা স্পষ্ট দীপাবলীতে বাজি ছাড়া আলোর রোশনাই এবার থাকবে অনেকটাই ফ্যাকাসে।