fbpx
কলকাতাগুরুত্বপূর্ণপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

বাংলার মানুষ চাইলে দিলীপই মুখ্যমন্ত্রী, যুগশঙ্খকে বললেন মা পুষ্পলতা

রক্তিম দাশ, গোপিবল্লভপুর: বাংলার মানুষ চাইলে দিলীপই মুখ্যমন্ত্রী হবে। বললেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতির মা পুষ্পলতাদেবী।
কলকাতা ১৯৩ কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপিবল্লভপুর ২ পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম কুলিয়ানা। সেখানেই দিলীপ ঘোষের পৈতৃক ভিটে। জঙ্গলমহলে উন্নয়নের জোয়ার আসলেও এখনও পাকা রাস্তা নেই দিলীপবাবুর গ্রামে। হাইরোড থেকে কিছুদূর এসে পাকা রাস্তা থেমে গিয়েছে আচমকাই।

কুলিয়ান গ্রাম বেশ কয়েকবছর ধরেই বিজেপির দখলে। তাই রাজ্যের অসহযোগিতায় থমকে গিয়েছে উন্নয়নের কাজ। এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
বাড়ির সীমানায় প্রবাহিত সুর্বণরেখার নদীর এপার ওপার তোলপাড় করা গ্রামবাসীদের প্রিয় ‘নাড়ু’ এখন গেরুয়া শিবিরের বঙ্গ সেনাপাতি। প্রত্যন্ত এই গ্রামেই জন্ম তাঁর। এখন এখানেই থাকেন দিলীপবাবুর মা আর তাঁর কৃষিজীবী পরিবার।
যুগশঙ্খকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রবীণ পুষ্পলতা দেবী প্রথমেই বললেন,‘ আমার আবার সাক্ষৎকার কেন? আমি সাধারণ মানুষ। নেতা-মন্ত্রীতো নই। আমি কি বলব বলো?’

জানতে চেয়েছিলাম, আজকের দিলীপ ঘোষ জেদি একরোখা। আর ছোটবেলায় কেমন ছিলেন তা বলতে গিয়ে পুষ্পলতা দেবী বলেন,‘ আমার চার ছেলে ছোটবেলায় কেউই দুষ্টু ছিল না। দিলীপও তাই। খুব শান্তশিষ্ট ছিল। ছেলের জন্য কোনও দিনই প্রতিবেশী বা গ্রামবাসীদের অভিযোগও শুনতে হয়নি। আসলে ওর (দিলীপ) বাবা খুব রাগী ছিলেন। ছেলেরা খুব ভয় করত বাবাকে।’
ছেলের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া আজও কষ্ট দেয় পুষ্পলতাদেবীকে। বলেন, ‘ওঁর জন্য আজও আমার চোখের জল পড়ে। এটা আমার কাছে খুব কষ্টের যে, সংঘের কাজের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। এরপর সরাসরি বিজেপিতে এলেও আমার কাছে থাকতে পারে না কাজের চাপে।’

চোখের কোণায় জল নিয়ে পুষ্পলতা বলেন,‘ ছোট বেলায় মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত দিলীপ। ওখানেই আরএসএসের লোকরা আসত। সবাই ওকে ভাগনা বলত। মামাদের সঙ্গে শাখায় যেত। এভাবেই যুক্ত হয়ে গেল। মামার বাড়ি থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর, ঝাড়গ্রামে গিয়ে আইটিআই পড়ল। তারপর সংঘের বিস্তারক হল। আমার কাছে অনুমতি নিতে এসে বলল, শুধু শুধু ঘরে বসে থেকে কি হবে। আমি একটু ঘুরে আসি মা। ভেবেছিলাম কিছুদিনের জন্য যাবে। কিন্তু ও যে প্রচারক হয়ে ঘর ছেড়ে দেবে তা ভাবতেও পারিনি।’

আরও পড়ুন: অতিমারীর আবহে পরীক্ষা! ‘সুপ্রিম’ নির্দেশে ‘একজোটে’ সরব বাম ছাত্রসংগঠন, রায়কে স্বাগত ABVP’র

দিলীপ যে সংসারি হল না তার জন্য আক্ষেপ নেই পুষ্পলতাদেবীর। বললেন,‘ সংসার বিয়ে এসব করে অনেকেই সুখী হয় না। আমি ওকে কাছে পাই না। সেটাই আমার বড় দুঃখ। আমার ঘরে কত লোক এসে খেয়ে যায়। খাবার নষ্ট হয়। আমার ছেলে কখন খাচ্ছে, কখন খাচ্ছে না। এটাই ভাবতাম। এখন আর সেরকম কষ্ট নেই। সংঘ করার সময় ও অনেক কষ্ট করেছে। সহজে কিছু বলত না। কিন্তু আমি তো মা সবই বুঝতে পারতাম। ও খুব পিঠে খেতে ভালবাসে। এখনও বাড়িতে আসলে পিঠা বানিয়ে দিতে হয়। এখানে এসে এখন আর থাকতে পারে না। ওর সঙ্গে কত লোক থাকে। আমাদের ঘর-বাড়ি সেরকম নেই। গরীব আমরা। থাকতে দেব কোথায়? তাই রাতেই চলে যায়। ওর আর কেউ নেই। আমার খুব ওর কাছে গিয়ে সবসময় থাকতে ইচ্ছা করে।’
শান্ত দিলীপ আজ মুখচোরা। পুষ্পলতাদেবী বলেন,‘ও কেন চিল্লামিল্লি করবে না? আপনি যদি আমার ওপর চিল্লান, আমি চিল্লাব না? একটা শান্ত ছেলে অশান্ত হয়ে গেল। তাকে গালাগালি দিচ্ছে বলেই সেও দিচ্ছে। এটা আমার খুব খারাপ লাগে। আমি বিরক্ত হই। আমরা ধনী নই। আমার ছেলেরাও সুন্দর নয়। কিন্তু ওদের গুণ আছে। এই যে বিজেপির সভাপতি হয়েছে, সাংসদ হয়েছে গুণ আছে নিশ্চয়।’

বাংলায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন পুষ্পলতা দেবী। বলেন,‘বিজেপির সরকার আসবে আশা করি। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনাও করি।’ আর দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী হলে? এবার হাসির রেখা ফুটল মুখে। বললেন, ও মুখ্যমন্ত্রী হলে খুব ভালো লাগবে। বাংলার মানুষ চাইলে হবে। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি আমার দিলীপ আরও বড় হোক। আমাকে খাওয়াতে হবে না। আমি কিছু চাই না। আমার যা আছে চলে যাবে ঠাকুরের ইচ্ছায়। ও রাজ্যের মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করুক।’

Related Articles

Back to top button
Close