
অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: পুলিশের নাম শুনে হঠাৎ করে অভিজাত বহুতল আবাসনের ৪ তলা থেকে এক দুষ্কৃতীর ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার খবর শুনে শিউরে উঠেছিলেন স্থানীয় মানুষজন। এই ঘটনার তদন্তে নেমে রীতিমত চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের কাছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মী।
পুলিশ সূত্রে খবর, চিৎপুরের অভিজাত আবাসনে চার কামরার ফ্ল্যাটে শনিবার রাতে মদ্যপান ও ফুর্তির ঢালাও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। ওই ফ্ল্যাটটি মালদা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পায়েল খাতুনের নামে কেনা। এ-ও জানা গিয়েছে, শনিবার রাত থেকে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন পায়েলের স্বামী মহম্মদ ইয়াসিন। ফুর্তি করার জন্য সোনাগাছির যৌনপল্লি থেকে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসা হয়েছিল দুই তরুণীকে। প্রচুর মদ্যপানের সঙ্গে বাজছিল বিশাল আওয়াজে গানবাজনার শব্দও। প্রচুর মদ্যপানের পর গোলমাল ও ভাঙচুর শুরু হয়। ভাঙচুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় চিৎপুর থানার পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার দুপুরে। ওইদিন উত্তর কলকাতার চিৎপুরের অভিজাত বহুতল আবাসনের চার কামরার ফ্ল্যাটে চলছিল মদ্যপান ও ফুর্তি। আকুন্ঠ মদ্যপানের পর গভীর রাতে শুরু হয় গোলমাল। ওই ফ্ল্যাটে আশ্রয় নেওয়া কুখ্যাত হুগলির চাঁপদানির মোস্ট ওয়ান্টেড ও কুখ্যাত দুষ্কৃতী আবদুল হোসেন ওরফে শান্তিয়ার ধারণা হয়, পুলিশ তাকে ধরতে এসেছে। পুলিশের হাত থেকে পালাতে চারতলার ফ্ল্যাট থেকে লাফ দেয় সে।
আবাসনের সেক্রেটারি আশিস বসু জানান, রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁকে নিরাপত্তারক্ষী জানান, ওপর থেকে দুই যুবক নেমে এসেছেন, যাদের মধ্যে এক জনের ডান হাতে রক্ত। একজন নিজেকে পুলিশ এবং অন্যজন রাঁধুনি বলে পরিচয় দেন। তারা বলেন যে, ফ্ল্যাটে কয়েকজন ভাঙচুর করছে। আর ফ্ল্যাট মালিককে তাঁরা বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। ফ্ল্যাট মালিকই তাদের ডেকেছিলেন। এই দু’জন-সহ আরও ১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর আবাসনের অন্যান্য বাসিন্দারা ফ্ল্যাটের দিকে এগোতে থাকলে দেখেন, কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন দুই তরুণী। তাঁদের একজনের মাথা ফাটা। তাঁদের নিচে বসতে বলা হয়। এর মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষী সেক্রেটারিকে জানান, এক ব্যক্তি আচমকা ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছে এবং নিচে পড়ে রয়েছে। তাঁরা ছুটে গিয়ে উপুড় হয়ে থাকা ওই কুখ্যাত দুষ্কৃতী আবদুল হোসেন ওরফে শান্তিয়াকে তুলতেই দেখেন, তার মৃত্যু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পায়েল খাতুন নিজে শিলিগুড়িতে গিয়েছেন এবং তার স্বামী আজমের শরিফে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতায় আসার পরিকল্পনা করে হুগলির সুগন্ধা মোড় থেকে আবদুলকে গাড়িতে তুলে নেন। তারপর ওই ফ্ল্যাটে রাতভর পার্টি চলছিল। তবে পুলিশ বিমানবন্দর থেকে জানতে পেরেছে, শনিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটের বিমানে জয়পুর গিয়েছেন। আর তাঁর ফ্ল্যাটে রেখে যান সেন্টিয়া-সহ তাঁর গাড়ির চালক এবং ফ্ল্যাট দেখাশোনা করার এক কর্মীকে। রেজিস্টার অনুযায়ী ১৬ অক্টোবর রাতেই বেরিয়ে যান ইয়াসিন।
কিন্তু কে এই আবদুল হোসেন ওরফে সেন্টিয়া?
জানা যাচ্ছে, চাঁপদানি এলাকায় তোলাবাজি দিয়ে তার অপরাধ জগতে ঢোকে আবদুল। একসময়ে হুব্বা শ্যামলের শাগরেদ ছিল সে। হুব্বা শ্যামলের মৃত্যুর পর শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই নানা ধরনের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিল সেন্টিয়া বলে দাবি স্থানীয় সূত্রে। তবে পায়েলের স্বামীর সঙ্গে কী ভাবে তার যোগ সূত্র সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশ আবদুলকে গ্রেফতার করলে কোনও গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেত, সেই ভয়েই সে আত্মহত্যা করেছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।