fbpx
গুরুত্বপূর্ণপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

ফালাকাটায় উপনির্বাচন : বিজেপির উত্থান তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ 

সব্যসাচী ঘোষ, ফালাকাটা : ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সম্ভাবনা প্রবল। বাম জমানার অবসানের পর ২০১১ সাল থেকে ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন অনিল অধিকারী। ২০১৯ এ শাসকদলের জনপ্রিয় এই বিধায়কের আকস্মিক প্রয়াণ ঘটে। ফালাকাটা শুরু হয় উপনির্বাচনের গুঞ্জন ও তোড়জোড়। তারপরই করোনার আগমনের সঙ্গে উপনির্বাচন প্রসঙ্গ অপ্রাথমিক হয়ে পড়ে ফালাকাটায়।

আনলক ২ শুরু হতেই উপনির্বাচনকে পাখির চোখ করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ফালাকাটায় সক্রিয় হতে শুরু করে। তার প্রধান কারণ জনপ্রিয় বিধায়কের প্রয়াণে ফালাকাটায় শাসক দলের নেতৃত্বহীনতা ও প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে কোন্দলের সম্ভাবনা প্রভৃতি রাজনৈতিক জটিলতা দূর করে পুনরায় বিধানসভা দখল করা। কিন্তু গত দুবারের মতো এবার শাসক দলের পক্ষে ফালাকাটা বিধানসভা ধরে রাখা সহজ নয় কারণ গত লোকসভা ভোটের নিরিখে ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রে রাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রের শাসক দলের চেয়ে ২৭৬৪৩ ভোটে পিছিয়ে আছে। এই কেন্দ্রে যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভায় সম্মানজনক ভোটে জয়ী হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির উত্থান শুরু হতেই ২০১৯ এ লোকসভা ভোটে বিজেপি ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্র সহ আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে শাসকদলের থেকে বিপুল ভোটে লিড নেয় ও জয় লাভ করে।

দিল্লির তখত-এ বিজেপি অদ্বিতীয় হলেও পশ্চিমবঙ্গে ঢাল তলোয়ারহীন বিজেপি প্রচারহীন হয়েও ২০১৯ সালের পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের চোখে চোখ রাখতে শুরু করে ও ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে শাসকদলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করে। ২০২১ এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে উপনির্বাচন হলে রাজ্যের ফার্স্ট গার্ল ও সেকেন্ড বয়ের কাছে এই উপনির্বাচন যে সেমিফাইনালের মত তা দু’দলের কাছেই পরিষ্কার। সেই কথা মাথায় রেখেই আনলক ২ শুরু হতেই ফালাকাটা সহ আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপির রাজনৈতিক দখলমুক্ত করতে রাজনৈতিক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী বনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় ও এসএফআইয়ের একসময়ের দক্ষ সংগঠক ঋতব্রত ভট্টাচার্যকে আলিপুরদুয়ার জেলায় দায়িত্ব দিয়ে পাঠাতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ফালাকাটা সহ আলিপুরদুয়ার জেলায় শাসক দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক স্বচ্ছতাকরনের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার জেলার বুথে বুথে দক্ষ সংগঠক দের দায়িত্ব দেওয়ার উপর জোর দেন।

 

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যাওয়ার পরপরই দলের সংগঠনকে চাঙ্গা করতে জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার বুথে বুথে চষে বেড়ান ঋতব্রত ভট্টাচার্য। কিন্তু তারপরও ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্র যে সহজলভ্য নয় তা ভালো করেই জানেন ফালাকাটা ব্লক ও আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। গত পঞ্চায়েত ভোটের ফালাকাটা ব্লকে ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টি তে শাসক দল নিজের দখল রাখলেও দু’বারের বিধানসভা জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস ভালোভাবেই জানে পঞ্চায়েত ভোটে সম্মান রক্ষা করতে তারা কতটা জনসংযোগে পরিশ্রম দিয়েছেন আর কতটা টুকলি করে উতরেছেন। যার পরিণামে লোকসভা ভোটে ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্র সহ আলিপুরদুয়ার লোকসভা তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে।

 

সেই কারণেই কি আগাম প্রস্তুতি ও দলীয় সংগঠনকে জনসংযোগে জোর দিতে বার্তা দেওয়া ? আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের মাথায় রাজ্য নেতৃত্বের দুঁধে রাজনীতিবিদদের বসিয়ে জনসংযোগ বাড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুরু হয়েছে রাগ-অভিমান ভাঙিয়ে বিজেপিতে গা ভাসানো দলীয় কর্মী ও অনুগামীদের দলে ফিরিয়ে আনার রাজনৈতিক যুদ্ধ। কিন্তু তারপরও বিজেপির উত্থান কে প্রতিহত করে কতটা মাটি পায়ের তলায় ফিরিয়ে আনতে পারবে শাসক দল তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায় কারণ প্রায় প্রতিদিনই দলে দলে বিজেপি ও অন্যান্য দল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে জল মেশানোর দিকেই আঙুল তুলছেন বিরোধী শিবির ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রেও যদি তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক ও জেলা স্তরের নেতৃত্ব হোমটেক্স না করেই নেত্রীর থেকে গুড পেতে সব ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলে যান তবে ২০০৯-২০১১ তে বামেদের মতই হোঁচট খেতে হতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসকে তা এক কথায় স্পষ্ট। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি তাদের জনসংযোগ কর্মসূচি সফল ও আগামী দিনে নির্বাচনে তা প্রমাণিত হবে। অপরদিকে লোকসভা নির্বাচনের সেকেন্ড বয় ফাস্ট গার্লকে হোঁচট খাইয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন বলেই রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।

 

ঢাল তরোয়াল হীন বিজেপি গত পঞ্চায়েত ভোটে ও লোকসভা ভোটে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে যেভাবে নাকানি চোবানি খাইয়েছে কোন প্রচার ও জনসংযোগ ছাড়া তা কী করে সম্ভব হল তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন চিহ্ন রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতবর্ষে বিজেপির মিডিয়া সেল সোশ্যাল মিডিয়াকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছে সেখানে পশ্চিমবঙ্গে টেকনিক্যালি অনেকটাই পিছিয়ে গেছে ডিজিটাল মিডিয়া সড়গড় না হওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। শুধুমাত্র ডিজিটাল প্লাটফর্ম কে ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট যে দখল করা সম্ভব নয় তা ভালোভাবেই জানে কেন্দ্রের শাসক দল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের মতো তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে।

 

বিজেপির নেতাকর্মীদের দাবি পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদল করলেই মিথ্যা অভিযোগে দলীয় কর্মীদের ফাঁসিয়ে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে এবং বিরোধীদলের অনুগামীদের ভয় দেখিয়ে দলে টানার চেষ্টা চলছে তাই বিজেপি জনসংযোগ ও দলীয় প্রচারের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখছে। সবকিছু মিলিয়ে একুশের বিধানসভা ভোটের পূর্বে ফালাকাটা উপনির্বাচন ক্ষেত্র তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির দুই দলের রাজনৈতিক লীলা ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এখন দেখার বিজেপি ডিজিটাল ব্রহ্মাস্ত্র করে ফালাকাটা উপনির্বাচনে লোকসভা ভোটের মত শাসক দলকে মাত দিয়ে দখলদারি রাখতে সমর্থ হয় না প্রশান্ত কিশোরের টোটকা নিয়ে শাসক দল গত দুবারের বিধানসভা নির্বাচনের মতো এবারও ফালাকাটায় ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এই প্রশ্নের উত্তর দেবে আগামীদিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আপামর ফালাকাটাবাসী।

Related Articles

Back to top button
Close