ফের চিনকে বড়সড় ধাক্কা, দেশীয় প্রযুক্তিতে জোর দিয়ে ফ্রিজ, এসি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি ভারতের

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: ফের চিনকে ধাক্কা দিল ভারত। এবার ফ্রিজ, এসি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত সরকার। প্রসঙ্গত ইন্দো-চিন সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনাকর্মী শহিদ হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে প্রতিবেশী দেশের পণ্য বয়কটের ডাক ওঠে দেশের অভ্যন্তরে। দেশীয় উৎপাদনে জোর দিতেই ক্রমশ কড়া পথে হাঁটছে ভারত সরকার।
এর আগে জুলাই মাসে টিভি সেট আমদানির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম জারি করা হয়। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড-এর কাছ থেকে আমদানিকারকদের লাইসেন্স নেওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। তবে ফ্রিজ-সহ এয়ার কন্ডিশনারের যে কোনও ধরনের আমদানির উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে এও বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র ফ্রিজ-সহ এয়ারকন্ডিশনার আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, স্প্লিট পদ্ধতির এবং অন্যান্য এয়ার কন্ডিশনের উপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলবে না।
প্রসঙ্গত, ভারতের আমদানিকৃত পণ্যসম্ভারের মধ্যে বৃহৎ অংশ দখল করে রেখেছে চিন। বিশেষ করে মধ্যবর্তী পণ্য বা উপাদান ও কাঁচামালের ক্ষেত্রে এই আধিপত্য। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ, পারমাণবিক চুল্লি, জৈব এবং অজৈব রাসায়নিক, সার, যানবাহন-যন্ত্রাংশ এবং আনুষাঙ্গিক পণ্যগুলির শীর্ষ রফতানিকারক দেশও চিন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে, ভারতের কাছে এই পণ্যগুলির দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশগুলির তুলনায় চিনের ‘অবদান’ অনেক বেশি।
২০২০ অর্থবর্ষে ভারত চিন থেকে ৪৬.৯ কোটি ডলার এবং থাইল্যান্ড থেকে ২৪.১ কোটি ডলার মূল্যের এ ধরনের এয়ার কন্ডিশনার আমদানি করেছিল। ভারতে আমদানি করা বেশিরভাগ এয়ার কন্ডিশনারেই রেফ্রিজারেন্ট থাকে। এই একই সময়ে চিন এবং থাইল্যান্ড থেকে যথাক্রমে ১.৪ কোটি এবং ১.৮ কোটি ডলারের উইন্ডো এয়ার কন্ডিশনার আমদানি করে ভারত।
গত জুন থেকে মাস থেকে লাদাখে ২০ জন সেনা জওয়ানের শহিদ ও যুদ্ধের আবহের পর থেকেই চিন থেকে আমদানি অথবা বিনিয়োগের ব্যাপারে গৃহীত নীতিগুলি চিনকে চাপে ফেলেছে। এই ব্যপারে দেশীয় প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
ভারতের মোট ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ৪৫ শতাংশই প্রতিবেশি দেশটি থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। সিআইআই-এর তথ্য অনুসারে, ভারত বিশ্ব থেকে যে পরিমাণ যন্ত্রাংশ ক্রয় করে থাকে তার এক তৃতীয়াংশ করা হয় চিন থেকে। জৈব রাসায়নিক ক্ষেত্রে এই পরিমাণ দুই পঞ্চমাংশ। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ এবং সার সহ এমন অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলিতে ভারতের আমদানির ২৫ শতাংশের বেশি চিন থেকে আমদানিকৃত।বলা যায় যে, ভারতে প্রস্তুতকারী মোবাইলের ৯০ শতাংশ উপাদানই আসে চিন থেকে।
এমনকী রফতানি ক্ষেত্রেও ভারতের অন্যতম ভরসা চিন। পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে চিন ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য। অঙ্কের হিসাবে এই পরিমাণ ১৫.৫ বিলিয়ান মার্কিন ডলার। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানেইজেশনের তথ্য অনুসারে, চিনে মোট রফতানির মাত্র দুই শতাংশ ভারতে হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:“এই গ্রামে আমরা সুরক্ষিত নই”, সরকারের কাছে আবেদন হাথরাস কাণ্ডের নির্যাতিতার পরিবারের
লাদাখে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর থেকে চিনের অনড় মনোভাবের পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্কে চিড় আরও বাড়তে থাকে। তারপরেই চিনা মাল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার দাবি ওঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ এমনকী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিনা সামগ্রী পোড়ানোর ছবি ওঠে। চিনের সেনার হাতে শহিদ হওয়া ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সীমান্তে যেমন তৈরি হচ্ছে বাহিনী, তেমনই চিনার ব্যবসায় ঘাটতির জন্য চিনা পণ্যের বাড়বাড়ন্ত বন্ধের দাবি তুলছেন দেশের সাধারণ মানুষ৷ আর সেই পথেই হেঁটেই দেশীর সামগ্রীর ওপর জোর দিচ্ছে ভারত।