হিজাব কাণ্ডের আঁচে জ্বলছে ইরান, মৃতের সংখ্যা ৫০ পার, বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা

যুগশঙ্খ, ওয়েবডেস্ক: হিজাব কাণ্ডের আঁচে জ্বলছে ইরান। পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সপ্তাহখানেকের বিক্ষোভ–সহিংসতায় এরই মধ্যে ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির কিছু এলাকায় ইন্টারনেট–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো সেবাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
কঠোর ইসলামি শাসনে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এই বিক্ষোভের সূচনা ১৬ সেপ্টেম্বর, কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির (২২) মৃত্যুর পর। ‘যথাযথ নিয়ম মেনে’ হিজাব না পরার অভিযোগে তিন দিন আগে তাঁকে আটক করেছিল তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’।
ইরানের কুর্দিস্তান থেকে পরিবারের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে গিয়েছিলেন মাসা আমিনি। আটকের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশি হেফাজতে তাঁর উপর অত্যাচার করা হয়েছে। আর এর জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। তবে সেই দাবি অস্বীকার করে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন আমিনি।
মাসা আমিনি’র বাবার দাবি তার মেয়ের কোনও রোগ ছিল না। এর প্রতিবাদে প্রথমে ইরানের কুর্দি–অধ্যুষিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হলেও তা পরে দেশটির অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের সিরাজ অঞ্চলের ৩৭ বছর বয়সী ফারাহ বলেন, ‘আমি বাইরে গিয়ে প্রতিবাদে যোগ দিতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ, তারা লোকজনকে হত্যা করছে। কিন্তু আমার বন্ধুরা বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে এবং তারা আমাকে এ বিষয়ে সব বলেছে। এটাই স্বাধীনতা ও শান্তি অর্জনের সর্বোত্তম উপায় কি না, তা আমি জানি না। তবে আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে তারা নারীদের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা আনতে পারে। এর আগে সব বিক্ষোভ মূলত পুরুষেরা করেছেন। কিন্তু এবারের ঘটনাটি খুবই আলাদা। নারীরা এটি শুরু করেছেন এবং পুরুষেরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুলিশ যখন নারীকে হিজাব পরতে বাধ্য করছে, তখন পুরুষ তাদের সঙ্গে লড়াই করছেন। অধিকাংশ বিক্ষোভকারী তরুণ, কিন্তু বয়স্করাও তাঁদের সমর্থন করছেন।’
ইরানে হিজাব-কাণ্ডে পুলিসের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে প্রতিবাদমিছিলে পা মিলিয়েছে সাধারণ মানুষ। তাতে এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি জনের প্রাণ গিয়েছে।
অসলো-ভিত্তিক ইরান মানবাধিকারের সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের উত্তর গিলান প্রদেশের রেজভাশাহর শহরে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন মারা গিয়েছেন।
এদিকে বিক্ষোভ সামাল দিতে ইরানের একাধিক জায়গায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফুঁসছে ইরান। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এতে উদ্বিগ্ন সমস্ত মহলই। উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সচিব আন্তোনিয়ো গুয়েতেরস। তিনি ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, সরকার-বিরোধী প্রতিবাদ দমন করতে গিয়ে তারা যেন অপ্রয়োজনীয় ভাবে শক্তি খরচ না করে।