সাড়ে তিনশো বছরের ক্ষীরণী গাছের সংরক্ষণ জরুরি

ভাস্করব্রত পতি, তমলুক: গাছটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘মানিলকারা হ্যাক্সনডারা’। পরিচিত নাম ‘ক্ষীরনী’। গাছটির আনুমানিক বয়স প্রায় ৩৫০ বছর। পরিধি ও উচ্চতা যথাক্রমে ১৫ ফুট ও ৫০ ফুট। প্রায় ২৫০০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে অবস্থিত এবং চিরসবুজ। এখন রাস্তা তৈরির অছিলায় কেটে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে সেটির।
এখানেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন মশাগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা গাছটির প্রতিবেশী চাঁদকুড়ির শান্তনু অধিকারী। তিনি জানান, এ ধরনের গাছ সচরাচর দেখা যায় না। তাই এমতবস্থায় এটিকে কেটে নষ্ট করে দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। এটিকে বাঁচাতে যতদূর যাওয়ার দরকার যাব। তিনি বলেন, গাছ মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এরমধ্যে কিছু প্রাচীন ও পরিণত গাছ সব সময় প্রকৃতি ও মানুষের কাছে সবসময় বিশেষ আদরণীয় ও বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে থাকে। এই ক্ষীরণী গাছ সেরকমই। অথচ সরকার সেটা জানে না। এবং মানে না।
গাছটির আদুরে নাম অবশ্য ‘ক্ষীরকুল’। এই নামেই স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। এই ঐতিহ্যবাহী গাছটি নিয়ে সমীক্ষা ও গবেষণা করতে সবংয়ের চাঁদকুড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলার কাপগাড়ী সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান তথা পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ তথা ‘টিয়া’র সম্পাদক ড. প্রণব সাহু।
আরও পড়ুন:যাত্রী সুবিধার কথা ভেবে আজ থেকে শুরু হল স্পেশাল ট্রেনের যাত্রা
‘ক্ষীরাত্মিকা হল ‘ক্ষীরাই গাছ’। ঘাসের মধ্যে জন্মে। গাছ ভেঙে দিলে দুধ বের হয়। যেসব গাছ থেকে ‘ক্ষীর বা ‘তরুক্ষীর’ বা ল্যাটেক্স (LATEX) বা দুধ বের হয় তাই ক্ষীরাত্মিকা। তবে এটি ঘাসের মধ্যে জন্মায় না। এটি বড় এবং বৃক্ষ। অসংখ্য অর্কিড, টেরিডোফাইটস, ছত্রাক, লাইকেন ও নানান পরাশ্রয়ী ও পরজীবী উদ্ভিদ গাছটিতে বেঁচে আছে আশ্রয় করে। প্রচুর ধরনের পোকামাকড়, সরীসৃপ, পাখি, জীবজন্তু রয়েছে গাছটিতে। এটি একটি আদর্শ বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য স্থান। যা প্রাকৃতিক জীব গবেষণাগার। বায়ো ডাইভারসিটির চরম উদাহরণ।
পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের তেমাথানি পর্যন্ত রাস্তার সম্প্রসারণে ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তারই মাঝে চাঁদকুড়ি বাসস্ট্যান্ডে রাস্তা থেকে প্রায় ১০ ফুট দূরে এই গাছটির অবস্থান। তবুও পি. ডাবলু. ডি. কতৃপক্ষ এটিকে কেটে দিতে চায়। কিন্তু জীববৈচিত্র্য নিয়ে বেঁচে থাকা গাছটিকে নষ্ট হতে দিতে চাননা পরিবেশবিদরা। তাছাড়া স্কুল ছাত্রছাত্রীদের কাছেও সমীক্ষার বিষয় এটি। গাছটিকে একটি ‘পবিত্র গাছ’ বা ‘স্যাক্রেড ট্রি’ হিসেবে স্থানীয় মানুষজনও মানেন।
আরও পড়ুন:নিশানায় সারা আলি খান রকুলপ্রীত সিং! NCB-র জেরায় বিস্ফোরক অভিযোগ রিয়ার
অধ্যাপক ড. প্রণব সাহু তাঁর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে জানান যে, গাছটি বছরে প্রায় ২১ হাজার লিটার অক্সিজেন উৎপাদন করে এবং বায়ুমন্ডল বিশুদ্ধ রাখে। এই ধরনের সামান্য কিছু প্রজাতির প্রাচীন গাছকে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা আশু প্রয়োজন। এরাই প্রকৃতির মূল স্তম্ভ। তাই এটির সংরক্ষণে সবাই একজোট।