জামালপুরে চকলেট খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ, শুরু তদন্ত
প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: করোনা আতঙ্কের জেরবার ভারত সহ গোটা বিশ্ব। তারই মধ্যে আবার চকলেট খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগ ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। ঘটনা বিষয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে অসুস্থ হয়ে পড়া পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার রাণাপাড়ার এক শিশুর পরিবার। অভিযোগ পাওয়ার পরেই প্রশাসনিক কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন।বিষয়টি নিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরকে তদন্তের জন্য আবেদন করছে ব্লক প্রশাসন। পাশাপাশি শিশুর অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত ।
জামালপুর ব্লকের আবুজহাটি ২ পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম রানাপাড়া। এই গ্রামেই বসবাস করেন লক্ষণ কোঙার ও তাঁর পরিবার। একটি নামি সংস্থার চকলেট খেয়ে নাবালক ছেলের অসুস্থ হয়েপড়েছে বলে দাবি করে লক্ষণ বাবু সোমবার জামালপুর থানা, বিডিও ও ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই শুরু হয়েছে তদন্ত।
প্রশাসনকে লক্ষণ বাবু জানিয়েছেন, রানাপাড়া মোড়েই রয়েছে স্থানীয় সেখ জহিরউদ্দিন মোল্লার দোকান। গত ৭ আগস্ট ওই দোকান থেকে তিনি দুটি ক্যাডবেরি চকলেট কেনেন। দোকানদার প্রতিটি চকলেটের মূল্য নেন ২০ টাকা। লক্ষন বাবু ও তাঁর স্ত্রী লতাদেবী বলেন, পরদিন সকালে ক্লাস ওয়ানে পড়া তাঁর ছেলে রাজদীপ ওই চকলেটের একটি খায়। এর পরেই রাজদীপ শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়েপড়ে বলে পরিবারের অভিযোগ। লক্ষণ বাবু প্রশাসনকে জানিয়েছেন, চকলেট খাওয়ার পরেই তাঁর ছেলের মুখ বেকে যেতে থাকে। গা হাত পা ফুলে যায়। সারা শরীরে র্যাস বেরিয়ে গিয়ে চুলকাতে শুরু করে। এর পরেই তিনি ছেলেকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়েযান। ওই চিকিৎসক ছেলের চিকিৎসা করেন।
চিকিৎসক জানিয়েদেন, চকলেট খেয়ে ‘ফুড পয়জেন’হওয়ার কারণেই রাজদীপ অসুস্থ হয়ে পড়েছে । লক্ষণ বাবু জানান, ওই চকলেট খেয়ে এলাকার আরও কয়েকজন শিশু একই রকম ভাবে অসুস্থ হয়েছে। রাজদীপের মা লতাদেবী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ,“হয়তো নামি ব্র্যান্ডেড কোম্পানির মোড়কে নকল ক্যাডবেরি চকলেট বিক্রী হচ্ছে । যা খেয়ে তাঁর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে । ”
দোকান মালিক সেখ জহিরউদ্দিন এদিন বলেন, লক্ষণ বাবু তাঁর দোকান থেকেই দুটি ক্যাডবেরি চকলেট কিনেছিলেন। কেনার পরদিন সকালে তিনি জানান ওই চকলেট খেয়ে তাঁর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। যদিও চকলেটের এক্সপায়ারি ডেট এখনও হয়নি বলে লক্ষণ বাবুও জানিয়েছেন। কি কারণে এমনটা হল তা জানা নেই। জহিরউদ্দিন বলেন , সোমবার দোকানে পুলিশ তদন্তে এসেছিল। পুলিশ জানিয়েছে ,ওই চকলেট টেস্টিংয়ে পাঠাতে হবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দোকান খোলা যাবে না বলে পালিশ জানিয়ে দিয়ে গেছে ।সেই কারণে দোকান বন্ধ রেখেছেন। জহিরউদ্দিন জানান ,যে কোম্পানি ওই চকলেট তাঁকে সরবরাহ করেছে তাদের লোকজনকেও তিনি ঘটনার কথা জানিয়েছেন।
জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিএমওএইচ চিকিৎসক আনন্দমোহন গড়াই বলেন, “শিশুর বাবা লিখিত ভাবে ছেলের অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছে। তবে চিকিৎসার জন্য তিনি ছেলেকে হাসপাতালে আনেননি। চকলেট খেয়েই শিশুর ফুড পয়জেন হয়েছে কিনা তা চিকিৎসা না করে বলা সম্ভব নয়। তবে প্রশাসন নিশ্চই চকলেট টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করবে। রিপোর্ট আসলে জানা যাবে চকলেটে ক্ষতিকারক কোন উপাদান ছিল কিনা ।”
বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ” শিশুর বাবা ব্লক অফিসে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তবে এই ধরনের অভিযোগের বিষয়গুলি রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর দেখাশুনা করে। তাই শিশুর পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি বুধবার জেলার ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের অ্যাসিন্ট্যান্ট ডাইরেক্টারের কাছে পাঠানো হচ্ছে। ওনারা ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। ”