
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন আর এক তৃণমূল বিধায়ক। হাওড়ার শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ির মন্তব্য, পিকে আসার পর দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি নিজে প্রথম প্রথম কথা শুনেছেন। তারপর আর নির্দেশ শোনেননি। দলনেত্রীকে বলেও লাভ হয়নি বলে দাবি তৃণমূল বিধায়কের।
দীর্ঘ আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি জড়িত হাওড়া তথা বাংলার রাজনীতিতে। তবুও এই শেষ বয়সে এসেও এবার সরব হলেন নিজের জন্য, দলের ভালোর জন্য আর অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। পাঁচবারের বিধায়ক এই প্রবীণ মানুষটি আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। সংবাদমাধ্যমের সামনেই উগড়ে দিলেন নিজের ক্ষোভ। যার কেন্দ্রে অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেস। মমতার স্তুতি গেয়েই কাঠগড়ায় তুললেন মুকুল রায় ও প্রশান্ত কিশোরকে। তিনি জটু লাহিড়ি। হাওড়া শহরের মধ্যে থাকা শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পাঁচবারের বিধায়ক। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনি টানা ১০ বছর ছিলেন কংগ্রেসের বিধায়ক। তারপর ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের বিধায়ক এবং ২০১১ থেকে আগামী ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তিনিই থেকে যাচ্ছেন শিবপুরের বিধায়ক। সেই জটু লাহিড়িই এবার সরব মুকুল রায় থেকে পিকে-র কর্মপদ্ধতি নিয়ে।
এই প্রবীণ বিধায়ক অভিযোগ প্রথমেই তুলেছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে। সাফ জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে, ‘যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে হাওড়ার পুরনিগমের মেয়রের পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর সেটা করেছে মুকুল রায়। ২০১৩ সালে আমাকে বলা হল কোনও বিধায়ক আর কাউন্সিলর হতে পারবে না। এটা নাকি দলের নীতি নেওয়া হয়েছে। আমি আর তাই কথা বাড়াইনি। কিন্তু এই নীতি নিয়ে মনে প্রশ্ন জেগেছিল। মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। হাওড়া পুরনিগমের খুঁটিনাটি আমার চেয়ে বেশি দ্বিতীয় কেউ জানে না। ২০১৩ সালে এই মুকুল রায় বলেছিল, দিদি বলেছেন কোনও বিধায়ক কাউন্সিলর হবেন না। অথচ কলকাতা পুরনগমে বিধায়কই দাঁড়ালেন। সল্টলেকেও তাই হল। আমার বেলাতেই খালি হল না। তার মানে আমাকে বাদ দেওয়ার জন্যই এটা হয়েছিল। আমি থাকলে মেয়রের দাবিদার হয়ে যাব। নিশ্চিতভাবে পরিচালন ব্যবস্থায় গলদ হয়েছিল। অথচ কলকাতা ও সল্টলেকে এটা হল না।’
আরও পড়ুন: ডিসেম্বর মাসেই ফের ধেয়ে আসছে প্রবল বৃষ্টি, জারি হলুদ সতর্কতা
প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে এবার সরব হলেন জটু লাহিড়ি। তাঁর কথায়,”হঠাৎ শুনলাম দলকে পরিচালনার জন্য ভোট বিশেষজ্ঞ আসছেন। পিকে না কে কী নাম! মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর যা ক্ষমতা আছে, বাইরের কাউকে দরকার নেই। মানুষ বিশ্বাস করেছে, এ আমাদের অধিকার রক্ষা করবে। বাইরে থেকে কাউকে আনার প্রয়োজন নেই। আমার নিজের ধারণা, পিকে-কে আসার পর থেকে আমাদের দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি নিজেই অপমানিত বোধ করেছি। একটা ইয়ং ছেলে এসে বলছে, আপনাকে এই মিছিলটা করতে হবে। তাঁর সঙ্গে আসলেন এক ভদ্রমহিলাও। তিনি নাকি জেলার কী! সে এসে বলল, অমুক করতে হবে, মিছিল করতে হবে, রাত জাগতে হবে। প্রথম প্রথম করেছি। টিকিয়াপাড়ায় একটা বাড়িতে ছিলাম। আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে, এটা ঠিক নয়।”
টিম পিকে-র সঙ্গে কাজ করে তিনি অপমানিত বোধ করছেন বলেও জানিয়েছেন প্রবীণ বিধায়ক। বলেন,”মমতা ব্যানার্জিকে দেখে সারা বাংলার মানুষ মনে করেন, ইনি পারবেন। বাইরে থেকে ভাড়া করে আনার দরকার নেই। বিনা পয়সায় তো করছে না। যে ছেলেটা আসত ৩০ হাজার টাকা মাইনে পেত। ভদ্রমহিলা আসতেন, তিনি ৪৫ হাজার টাকা পান। এসব টাকা কে দিচ্ছে? বাংলা জুড়ে কত লোক এভাবে টাকা-পয়সা পাচ্ছে! মমতা একাই একশো। এসব কাউকে দরকার ছিল না। আমি নিজে অপমানিত হয়েছি। মাস দু’য়েক আগে বলেছে, তিনটে যাত্রা করতে হবে। তুমি বলার কে? সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত শুক্লা আছেন। তার বাইরে কারও নির্দেশ শুনব না। আমার কাছে আর আসবে না।”