কাঁকসার শিবপুর-দেউলে বিপন্ন বনানীর সড়ক….. জঙ্গলে অবৈধ বালি বোঝাই লরি চলাচল বন্ধে কড়া বার্তা বনমন্ত্রীর

জয়দেব লাহা, দুর্গাপুর: ‘জঙ্গলের রাস্তায় কোনওরকম অবৈধ ভারী যান চলাচল নয়। অবৈধ বালি বোঝাই লরি যাতায়াত বন্ধে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শুক্রবার কাঁকসার দেউলে ট্রেকিং করা পর্যটকদের বিশ্রামাগার উদ্বোধনে এসে এমনই কড়া বার্তা দিলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি পর্যটক টানতে দেউলকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কাঁকসার জঙ্গলমহল বলতে শিবপুর, মলানদীঘি, বনকাটি এই অঞ্চলকে বোঝায়। পরিধি ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। শাল, মহুয়া, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, শিমূল, সেগুন, নিম, হরিতকি সহ নানান গাছ গাছড়ার সমাহার। দূষণমুক্ত ঘন জঙ্গল যেমন তেমনই রয়েছে জঙ্গলে হরিণ উদ্যান, ময়ূর সহ নানান পশু পক্ষীর আবাস স্থল। আবার মাঝে মধ্যে গজরাজেরও আগমন হয় এই জঙ্গলে। এরকম যদি মনোরম পরিবেশ হয়। এসবের মাঝে সবুজ অরণ্যকে উপভোগ করতে উদ্যোগ নেয় পূর্ব বর্ধমান আঞ্চলিক বনবিভাগ। শিবপুর-দেউল জঙ্গলে পর্যটকদের পায়ে হেঁটে ট্রেকিং ব্যবস্থা করেছে বনবিভাগ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিবপুর থেকে দেউল পর্যন্ত রয়েছে ট্রেকিং রুট। জঙ্গলের বুক চিরে চলে গেছে লাল মোরামের রাস্তা। তার মাঝে জঙ্গলে বেশ কিছু মনোরম দৃশ্য। যা পর্যটকদের হাতছানি দেয়। বেশ কয়েকটি জলাশয়। যেখানে পরিযায়ী পাখিদের আগমন হয়। জঙ্গলেই রয়েছে বল্লাল সেনের প্রতিষ্ঠিত শ্যামারূপার মন্দির। যেখানে বছরে সবসময়ই পুণ্যার্থীদের আগমন হয়। প্রাচীন ওই মন্দির এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ্ টাওয়ার। এছাড়াও রয়েছে অজয় নদীর তীরে দেউল পার্ক। সেখানে জমিদার ইছাই ঘোষের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন শিবমন্দির। পার্কের ভেতর বিশাল জলাশয়ে বোটিং ব্যবস্থা, টয়ট্রেন। নানান ফুলের উদ্যান। পিকনিকের মরশুমে উপচে পড়া ভিড় হয় পিকনিক প্রেমীদের। তার পাশেই হরিন বাটিকা।
আরও পড়ুন:বিজেপি সভাপতির ওপর ভোজলির হামলা, ধৃত ১
২৮ হেক্টর এলাকাজুড়ে ওই বাটিকায় রয়েছে ৭৫ টি চিতল হরিণ। এছাড়াও টিয়া, ময়ুর, বন বিড়াল, বন মোরগের মুক্তাঞ্চল। মাঝে মধ্যে দেখা যায় হুড়োলও। রয়েছে পেঙ্গোলিন। এছাড়াও হাতি থাকার অনুকুল পরিবেশ। সম্প্রতি দেউলে নতুন করে বিশ্রামাগার তৈরী করছে বনবিভাগ। ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ট্রেকিংয়ে আসা পর্যটকরা বিশ্রাম নেবে। সেখানে আবার থাকছে ক্যান্টিন, আর্ট গ্যালারি, বনজ দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র। বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের তৈরি নানান হস্তশিল্পের সম্ভার থাকবে। শুক্রবার দেউলে বিশ্রামাগার উদ্বোধন করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন গলসীর বিধায়ক অলোক মাঝি।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে বর্ধমান আন্তঃরাজ্য পাচারকারীদের হাত থেকে প্রায় সাড়ে ৭০০ টিয়া পাখি ও হিল ময়না আটক করে বন দফতর। এদিন আটক হওয়া ওইসব পাখির কিছু সংখ্যক দেউল জঙ্গলে ছাড়া হয়। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘করোনা আবহে পর্যটন শিল্প বাঁচানোর বড় চ্যালেঞ্জ। সংক্রামক রুখতে হবে। পাশাপাশি বহু বিদেশি পর্যটক আসে। তাতে বৈদিশিক মুদ্রা সরকারের অর্জন হয়। প্রচুর রাজস্ব আদায় হয় পর্যটনের মাধ্যমে। তাই পর্যটন শিল্প উন্নত করতে হবে। দেউলকে ঘিরে পর্যটনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তার জন্য দেউলকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রেকিং যেমন রয়েছে। তেমনই সৌন্দর্যায়নে ওয়াটার বডি করার চিন্তাভাবনা নেওয়া হয়েছে। রাত্রিনিবাসের জন্য অতিথিশালা তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্যও চিন্তাভাবনা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেউল জঙ্গলের রাস্তা বেহাল দশায়। কোথাও বড় বড় গর্ত হয়ে জলাশয়ের আকার নিয়েছে। আবার কেথায় গর্ত ভরাট করে লরি যাতায়াতের সুবিধার জন্য কারখানার কালো ছাই ফেলা হয়েছে। অভিযোগ অজয় নদীর দেউল ঘাট থেকে বালি বোঝাই লরি, ডাম্পার ওই রাস্তা দিয়ে আনাগোনা করে। বেশিরভাগই যাতায়াত করে রাতের অন্ধকারে। আর তাতেই বিপন্ন সবুজ বনানীর বুক চিরে যাওয়া লাল রাস্তা। আর প্রশ্ন এখানেই। যে জঙ্গলের সৌন্দর্যকে দেখতে রাজ্য বনদফতর ট্রেকিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে জঙ্গলের ওভারলোডিং বালি বোঝাই লরি ডাম্পার যাতায়াত করে কিভাবে?
আরও পড়ুন: শারীরিক অবস্থার অবনতি করোনা আক্রান্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের
এদিন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিয়ে বলেন,” জঙ্গলের রাস্তায় কোনরকম অবৈধ ভারী যান চলাচল নয়। অবৈধ বালির কারবার বন্ধ করতে হবে। জঙ্গলের রাস্তা যাতে নষ্ট না হয় তারজন্য অবৈধ বালি বোঝাই লরি যাতায়াত বন্ধে কড়া হাতে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে। জঙ্গলের পশুপক্ষীদের কোনও সমস্যা না হয়। সেটাও নজর রাখা হবে।” তিনি বলেন,”স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার জন্য বলব, যাতে অবৈধ বালির লরি যাতায়াত বন্ধ হয়।”