কোলাঘাটে ঝুড়ি শিল্প করোনার জন্য থমকে
বাবলু ব্যানার্জি, কোলাঘাট: লকডাউন প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে , হাতে কাজ না থাকায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে ঝুড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারিগররা। পান ও ফুলের মার্কেট না থাকায় এদের তৈরি ঝুড়ি বিক্রি একপ্রকার বন্ধ। কবে এই লকডাউন থেকে মুক্তি পাবে তা নিয়ে এই এলাকার কারিগররা বাড়িতে বসে দিন গুনতে শুরু করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট ব্লকের পুলশিটা অঞ্চলের ধর্মবেড় গ্রামের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি পরিবার এই শিল্পের উপর নির্ভর করে তাদের অন্ন জোগাড় করেন। এরা প্রত্যেকেই তপশিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত। ঝুড়ি বিক্রি না হওয়ায় বর্তমানে চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে এরা দিন কাটাচ্ছেন।
এদের তৈরি ঝুড়ি জেলার কাঁকটিয়া, মেছেদা,বুরারি, নারকেলদা, রামনগর সহ বেশ কয়েকটি বাজারজাত স্থানে ব্যবহৃত হয়। এই বাজারগুলি থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানি হয় দেশের রাজস্থান ,মহারাষ্ট্র ,তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে। এছাড়া এদের তৈরি ঝুড়ির মাধ্যমেই বাংলাদেশ,নেপাল, ভুটান, ইংল্যান্ড, দুবাই দেশে পণ্য রফতানি হয়। এর থেকে বিদেশী মুদ্রাও অর্জন হয়। ফুলের ক্ষেত্রে ও একইভাবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
করোনা ভাইরাস এর জন্য ভারতবর্ষ জুড়ে লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকেই কারিগরদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য বজায় রেখে এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখলেও দিন যত যাচ্ছে ঝুড়ির কারিগরদের আগ্রহ কমছে এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে।
এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হিমাংশু মাজি বলেন, এই শিল্পের জন্য যে বাঁশের প্রয়োজন তা জোগাড় করার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয় গ্রামীণ এলাকায়।এছাড়া একটি বাঁশ ১০০ টাকা দিয়ে কিনে মাত্র চারটি ঝুড়ি তৈরি করে যে অর্থ পাওয়া যায় তাতে তাঁদের পারিশ্রমিক হচ্ছে না। সংখ্যার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন পাইকারিরা একটি ঝুড়ি মাত্র ৭০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়, একটি বাঁশ থেকে চারটি ঝুড়ি বাবদ ২৮০ টাকা উপার্জন হয় এখন একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক মূল্য ৩০০ টাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে টাকা পান সেই টাকায় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পরছে বর্তমানে। বাধ্য হয়েই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছেলেমেয়েরা ব্যবসা করতে চাইছে না।এই আক্ষেপের সুর স্বরূপ পাত্র,কার্তিক পাত্র ,গণেশ পাত্র , নীলমণি বারিকের মুখেও।
কারিগরদের মুখে আক্ষেপের সুর বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা যেখানে রফতানি করে সরকারের কাছে আসে সেখানে কোনওরূপ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা যায়নি তাঁদের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।