
অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: ‘ঘনবসতি এলাকা নিয়ন্ত্রণে। তবে সংক্রমণ বেশি হাইরাইজ বিল্ডিং গুলোতেই।’ দাবি করলেন পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। সোমবার পুরসভায় এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘উঁচু বাড়ি গুলির ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশি খবর মিলছে। কিন্তু সেটা আসছে কোথা থেকে জানতে পুরসভা যখন মাইক্রো প্লানিং এর সাহায্য নেয়। জানা যায় বাজার গুলি থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। তাই বাজার গুলিকে এবার টার্গেট করে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বাজারগুলোতেও সোয়াবটেস্ট ও র্যাপীড টেস্ট করানো হবে দোকানদারদের। এছাড়াও সচেতনতার জন্য লাগানো হবে হোর্ডিং।’ এছাড়াও পুরসভার পক্ষ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে কলকাতাকে করোনা মুক্ত করার জন্য। এবার থেকে আর শুধুমাত্র জ্বর বা সর্দি কাশি দেখা হবে না তার পাশাপাশি থাকবে সিমটম দেখা। যাদের সিমটম আছে তাদের মাইক্রো প্ল্যানিং অনুযায়ী অক্সিজেন লেভেল চেক করা হবে। কার্ডিয়াক প্রবলেম আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট ওষুধ দেয়া হবে। তাতেও যদি না কমে তার পরে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
এদিন ফিরহাদ হাকিম সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা কলকাতাকে বেঁধে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু অবশ্যই সাধারণ মানুষের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। বিধি নিষেধ না মেনে অহেতুক মেলামেশা করা যাবে না। সব মানুষকে বুঝে চলতে হবে। পাশাপাশি দোকান বাজার খুলে যাওয়াতে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স না নষ্ট হয় তাও মাথায় রাখতে হবে। মার্কেট যারা দোকান খুলবেন তাদের মাস্ক স্যানিটাইজর ও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স মেনে চলতে হবে। নাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে কোরোনা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা দিতে হুএর সঙ্গে গাঁটছড়া বেধেছে কলকাতা পুরসভা। করোনার মোকাবিলায় ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে এ বার লড়াইয়ে নামছে কলকাতা পুরসভা। গোটা রাজ্যে করোনার প্রকোপের নিরিখে কলকাতার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তাই, আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ-পরিষেবা হাতিয়ার করেই এগোতে চায় রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: রাজ্যে প্রথম ভার্চুয়াল জনসভায় অমিত শাহ
এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভাকে করোনা-মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণে যাবতীয় সহায়তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেবে। গত সোমবার, ২৫ মে স্বাস্থ্য ভবনে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম পুরকর্তাদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করেন। তাতে কলকাতা পুরসভার নোডাল অফিসার এসকে থাড়ে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মহানগরীর করোনা-পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ জুড়েই জনজীবনের নানা ক্ষেত্রে এখন লকডাউনের আগড় শিথিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় কলকাতায় করোনার প্রকোপ যাতে নতুন করে আশঙ্কার কারণ হয়ে না-দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে চায় স্বাস্থ্য ভবন। সেই জন্যই তাদের মত হল, কলকাতা পুরসভা করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা নিক।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যে সব এলাকায় সারি ও জ্বর-সর্দি-কাশি শনাক্তকরণে হাউস সার্ভে বা বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার ব্যাপ্তি ৫০ শতাংশর কম, সেই সব তল্লাটে আরও নিবিড় সমীক্ষার কাজ বাড়াতে হবে। সমীক্ষা চলার সময়ে যাতে বয়স্ক ও কোমর্বিডিটির মানুষরা বাড়িতে থাকেন, তার চেষ্টা চালাতে হবে। কনটেনমেন্ট এলাকায় প্রতিটি সারি ও জ্বর-সর্দি-কাশির পরীক্ষা বা টেস্ট করার সব রকম পদক্ষেপ করতে হবে। করোনা মোকাবিলার স্বার্থে নিবিড় ও সার্বিক প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর লক্ষ্যে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা কমাতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।