fbpx
কলকাতাহেডলাইন

কোভিড আবহে ছট পুজোতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি ধরা পড়লো কলকাতার বুকে

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: ছটে সসম্মানে উত্তীর্ণ কলকাতা! অন্য উত্‍সবের সাক্ষী থাকলো তিলোত্তমা। কোভিড আবহে ছট পুজোতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি ধরা পড়লো কলকাতার বুকে। আর এই স্মৃতি দীর্ঘদিন থেকে যাবে মানুষের স্মৃতির কোঠায়। বাজি ছাড়া, বাজনা ছাড়া, ভিড় ছাড়া এ যেন এক নতুন ছট।

আদালতের নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে ছট পুজো রুখতে পুলিশবাহিনী নিয়োগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শনিবার সকালে তাই শহরের দুই বড় জলাধারে পুণ্যার্থীর ভিড় চোখে পড়েনি। গত বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো পালনের উপরে কলকাতা হাই কোর্টের জারি করা নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, শহরের আর এক ‘ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত সুভাষ সরোবরের ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাই কোর্টের বিভৈাগীয় বেঞ্চ। দুই জলাধারে ছট পুণ্যার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন পরিবেশবিদরা। শুক্রবার দুপুরে রবীন্দ্র সরোবরকে আড়াল করে তৈরি করা ব্যারিকেড জোর করে অতিক্রমের চেষ্টা করেন একদল পুণ্যার্থী। তাঁদের তাড়া করে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

হাইকোর্টের রায়ের পরেও পরিবেশবিদ থেকে আমজনতার একতা বড় অংশই সন্দিহান ছিল যে ছটপুজো আদালতের রায় ও কোভিড বিধি মেনে পালিত হবে কিনা তা নিয়ে। রায় না মানা বা কোভিড বিধি না মানার প্রবণতা যে একদম ছিল না তা নয়। তবে প্রশাসন ও পুলিশের কড়াকড়ি সেই সঙ্গে সচেতনার জন্য রাজ্য প্রশাসনের তরফে লাগাতার প্রচার এবারের ছট পুজোকে ব্যাতিক্রমী ভাবেই উত্‍রে দিয়েছে। শুক্রবার বিকালে তো বটেই, শনিবার ভোরেও সেভাবে বিধি ভঙ্গনের ছবি কোথাও সেভাবে ধরা পড়েনি। রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে যেমন কোনও ছট পুজো হয়নি তেমনি বাজেনি তীব্রস্বরে ডিজে, ব্যান্ডপার্টি, তাসাপার্টি। সেভাবে শোনা যায়নি বাজির শব্দও। রাস্তায় চোখে পড়েনি হাজার হাজার মানুষের স্রোত। গঙ্গার ঘাটগুলিতেও সেভাবে ভিড় চোখে পড়েনি। কার্যত আদালতের রায় ও কোভিডের আবহে মানুষও যে সচেতন হয়েছেন সেই ছবিও কিন্তু এইসব দৃশ্যের মাধ্যমে বেশ বোঝা যাচ্ছে।

কোভিড আবহে আদালতের রায় বজায় রেখে মানুষ যাতে ছট পুজো করতে পারে তার জন্য প্রথম থেকেই তত্‍পর হয়েছিল রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরনিগম। নতুন করে জলাশয় তৈরি করাই হোক কি অস্থায়ো ঘাট নির্মাণ সব দিকেই নজর ছিল রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরনিগমের। সেই সঙ্গে জোর দেওয়া হয়েছিল বাড়িতে বসেই ছট পুজো পালন করার জন্য। তার জেরে দেখা গিয়েছে কলকাতা পুরনিগম, কেএমডিএ ও রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া অস্থায়ী ঘাটগুলিতে, অস্থায়ী জলাশয়ে ভিড় জমিয়েছেন ছট পুজোর ভক্তেরা। শুক্রবার বিকাল বা শনিবার ভোরে যাতে কেউ কোনও ভাবেই রবীন্দ্র সরোবর বা সুভাষ সরোবরে ঢুকতে না পারে তার জন্য এই দুই জায়গাতেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল যা এদিন বিকাল পর্যন্ত থাকবে। রবীন্দ্র সরোবরের গেটে তাই ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তালা। বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে ঘিরে রাখা হয়েছে প্রত্যেকটি গেট। সেখানে বিকাল পর্যন্ত মোতায়েন থাকছে পুলিশ। সুভাষ সরোবরের পাশের রাস্তাতেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি কাউকে। বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করে গাড়ি অথবা লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানেও মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। গতকাল রবীন্দ্রসরোবরের ৩ নম্বর গেটের কাছে বিক্ষোভ হলেও গোটা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ভাবে মোকাবিলা করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: শুভেন্দু-সৌগত সহ দলে আসছেন ৫ TMC সাংসদ বিজেপিতে আসবেন’, বিস্ফোরক দাবি অর্জুন সিংয়ের

রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে শীতে বহু পরিযায়ী পাখির সমাবেশ হয়। তা ছাড়া স্থায়ী বাসিন্দা পক্ষিকুলও সেখানে রয়েছেষ পক্ষিবিদ সুদীপ  ঘোষ জানিয়েছেন, ‘চার বছর পরে রবীন্দ্র সরোবরে ডজন খানেক পেইন্টেড স্টর্ক এসেছে। তারা হ্রদের মাছের দ্বীপে বাসা বেঁধেছে। এ বছরে এখনও পর্যন্ত ১২২ প্রজাতির পাখি এই সরোবরে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্ল্যাক হেডেড কাক্কুশ্রাইক, ওয়ান লেগডবাজার্ড, চেঞ্জেবল হক ঈগল, সুইনহো’জ মিনিভেট, পায়েড হ্যারিয়ার ও ব্রাউন হেডেড গাল। ২০১৮-২০১৯ সালে ছটপুজোয় আতসবাজির দাপটে বেশ কিছু প্রজাতির পাখি এখান থেকে মুছে গিয়েছিল। আশা করি শনিবার সকালে তেমন কোনও বেআইনি ঘটনা ঘটবে না।’

প্রসঙ্গত, পরিবেশ দূষণ রোধে ২০১৮ সালে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গ্রিন ট্রাইবুনাল। সেই রায় বহাল রাখে কলকাতা হাই কোর্ট। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রতি বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোয় পুণ্যার্থীদের ভিড় জমে। অবাধে জলাধারে বর্জ্য ফেলা ও আতসবাজি ফাটানোর ধুম লেগে যায়। সে কারণেই এবার কড়া নির্দেশ জারি করেছে আদালত।

 

 

 

Related Articles

Back to top button
Close