করোনার থাবায় আর্থিক মন্দায় ফিকে হয়েছে লক্ষী পুজোর জৌলুশ – ক্ষোভে ফুঁষছেন ভক্তরা

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: দুর্গোৎসবেই মায়ের সঙ্গে এসেছিলেন মর্তলোকে । দেবীপক্ষের কয়েকটা দিন মা উমার ভক্তদের সঙ্গে কাটিয়ে আবার মায়ের সঙ্গেই ফিরে গিয়েছিলেন সেই কৈলাশে । ভক্ত কুলের কাছে ধন ও ঐশ্বর্য্যের দেবী রুপেই তাঁর পরিচিতি । তিনি হলেন দেবী লক্ষী । আর্থিক মন্দা থেকে পরিত্রান লভে তিনিই একমাত্র ভরসা । এবার কোজাগরী পূর্ণীমায় একাকি মর্তলোকে আবির্ভূতা হবেন লক্ষীদেবী ।করোনা অতিমারির কারণে মর্তলোকে আর্থিক মন্দা যাই থাক না কেন বাঙালির লক্ষীদের প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তিতে যদিও কোন ভাটা পড়েনি । তাই ধন ও ঐশ্বর্য লাভ কামনায় শুক্রবার কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমার দিন ধনদেবী পূজিতা হবেন বাঙালির ঘরে ঘরে।
সাইনিং ইন্ডিয়া গড়তে নোট বন্দির পর লাগু হয়েছে জিএসটি।এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীদের ।তা সামলে উঠতে না উঠতেই দেশ জুড়ে থাবা বসায় করোনা ভাইরাস । তার কারণে টানা লকডাউন চলায় কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে বাজার অর্থনীতি ।আনলক পর্বেও বাজার অর্থনীতির মন্দা কাটেনি । দেশের এই অবস্থার চললেও পুঁজির ভান্ডার হাতিয়ে নিয়ে এখনও বিদেশে গা ঢাকা দিয়েছে বীজয় ভিত্তাল মালিয়া , নীরব মোদি , নেহু চোকশি প্রমুখ ধনকুবেররা । ভারত রাষ্ট্রের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রাতাদের স্নেহধন্য এই সব ধনকুবেরদের কীর্তিকলাপে দিনের পর দিন তলানিতেই পৌছাচ্ছে জিডিপি রেট । এতসবের পরেও বাঙালি ভক্তকুলের বিশ্বাস লক্ষীদেবীর কৃপা লাভ ছাড়া আর পরিবার কিংবা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক হাল পুনরুজ্জীবিত হওয়া সম্ভব নয় ।এমন বিশ্বাসে দৌলতেই বাংলায় লক্ষী দেবীর গ্ল্যামার ও জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে রয়েছে। দেবীর কৃপা লাভের প্রত্যাশায় ভরকরে বাংলা এখন ভাসছে লক্ষী উন্মাদনায়।
ভক্তকুলে আর্থিক মন্দার প্রভাব এতটাই যে কৈলাশে পৌছাতে না পৌছাছাতেই অর্থিক দুর্দশায় জর্জরিত অগুনিত ভক্ত অনুরাগীর আমন্ত্রন বর্তায় ভরেগেছে লক্ষীদেবীর দফতর। আমন্ত্রন প্রত্যাখানেরও উপায় নেই । ভক্তদের স্পেশাল আমন্ত্রন বলে কথা । বাঙালির ঘরে ঘরে নিজের জনপ্রিয়তা অটুট রাখতে তাই মর্তলোকে আবারও আসতে হচ্ছে লক্ষী দেবীকে। স্পেশাল আমন্ত্রন সফরে তাঁর সঙ্গে মর্তলোকে আসার চান্স মিলেছে শুধু মাত্র এক জনেরই । তিনি হলেন দেবীর বিশ্বস্ত সচীব পেঁচা । দেবী কোন কোন ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন সেই বিষয়টি সচীব মহাশয় ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত করে ফেলেছেন ।
দেশে পুঁজির ভাণ্ডার কমতে শুরু হলে যা হয় তাই হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভ্রান্ত অর্থনীতিকে আঁকড়েই রাষ্ট্রের আর্থিক সংস্কারের পথ বাছা হয়েছে । আর সে কারনে বাজার অর্থনীতি যত তলানিতে পৌছাচ্ছে লক্ষী দেবীর জনপ্রীয়তা ও গ্ল্যামার ততই হুহু করে বাড়ছে । রাষ্ট্র নায়কদের প্রতি ভরসা হারিয়ে একমাত্র লক্ষীদেবীর উপরই সবকিছু সোঁপে দিয়েছেন বাঙালি । আর্থিক মন্দা থেকে মুক্তি লাভের প্রত্যাশায় বাঙালি এখন দেবী লক্ষীর কৃপা লাভেই ভরসা রেখেছেন ।
লক্ষীদেবীর মর্তলোকে আসার সফর সূচী ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত হয়েছে । দেবলোক সূত্রে খবর পঞ্জিকার বিশুদ্ধ মতের সময় সারণী মেনে শুক্রবার সন্ধ্যা ৫ টা ২০ মিঃ নাগাদ লক্ষীদেবী মর্তলোকে অবতরণ করবেন । কোজাগরি লক্ষী পূর্ণিমা তিথির পূর্ণ সময় কাটিয়ে শনিবার রাত্রি ৭ টা ২৮ মিনিটে ধনদেবী ফের কৈলাশে প্রস্থান করবেন । করোনা অতিমারির মধ্যে সফর সূচি যাতে দুর্গোৎসবের মতোই নর্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় তার তদারকি লক্ষীদেবীর সচীব পেঁচা নিজেই করছেন ।
আরও পড়ুন: হালকা শীত অনুভব করছেন রাজ্যবাসী! কবে জাঁকিয়ে শীত পড়বে বঙ্গে? জানাল হাওয়া অফিস
রাষ্ট্রের অর্থিক মন্দা দশা যাই থাক না কেন লক্ষিদেবী কোন কোন ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন তা অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে । দেবীর সচীব এখন শুধু নজর রাখছেন কোন ভক্তের বাড়িতে পুজো আয়োজনের জৌলুশ কতটা সেদিকে । সূত্রের খবর পুজো আয়োজনের জৌলুশ যাচাই করে বিশেষ বিশেষ ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন দেবী । যদিও ধনদেবী কোন কোন ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন তা জনপ্রিয়তা বজায় রাখার স্বার্থে দেবীর দপ্তর কর্তৃক একান্ত ভাবেই গোপন রাখা হয়েছে । ভক্তরা অবশ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না । সেরা আতিথেওতা দিয়ে লক্ষীদেবীর কৃপা লাভের মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাঙালি গৃহস্থ কুল ।
কালো টাকা উদ্ধারের আশ্বাস জুগিয়ে নোট বন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাষ্ট্র নায়করা । গোটা দেশবাসী এরজন্য চরম হয়রানির শিকার হলেও নোট বন্দির সিদ্ধান্ত পরবর্তি সময়ে “ফ্লপ শো” এর পরিচিতি পেয়েছে । নোট বন্দির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে রাষ্ট্র নায়কদের লাগু করা জিএসটির ধাক্কায় আরো বেসামাল হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা। তার উপর আবার করোনার থাবা । এমন পরিস্থিতিতেও গুডস এ্যন্ড সার্ভিস ট্যাক্স ছাড়া না করা যাবে ব্যবসা বানিজ্য, না কেনা যাবে লক্ষী আরাধনার উপকরণ । তারজেরে যাঁক জমক পূর্ণ ভাবে বাড়িতে লক্ষী পুজো আয়োজনের সাধ থাকলেও আর সাধ্যে কুলোচ্ছে না ভক্তদের । পুজো আয়োজনে কোন ঘাটতি রাখতে না চাইলেও বাধ সেধেছে মানি ঘাটতি । এই পরিস্থিতে দেবীর কৃপালাভ কিভাবে সম্ভব হবে সেই দুশ্চিন্তাই পিছু তাড়াকরে বেড়াচ্ছে ভক্তদের।
দশকর্মা থেকে শুরু করে প্রতিমা , ফল, ফুল ও আনাজপাতি সবেরই বাজার দর এখন অগ্নি মূল্য । পকেট গড়ের মাঠের চেহারা নেওয়ায় লক্ষী ভক্তদের অনেক মেনুই কাটছাঁট করতে হচ্ছে । গ্রাম থেকে শহর , দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সর্বত্রই । বাঙালি পরিবার গুলিতে লক্ষী পুজো আয়োজনের জৌলুশ যতই কমছে ততই ক্ষোভ বাড়ছে বাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে থাকা এদেশের সরকার বাহাদুরের ওপর । ক্ষোভ বিক্ষোভ যে পর্যায়ে পৌছেচে তা যে বাংলায় আসন্ন গণতন্রের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবে ইভিয়েমে আছড়ে পড়বেনা এমনটা নিশ্চিৎ করে বলা যাচ্ছেনা । ভক্তদের কথায় একটা বিষয় পরিস্কার বোঝাযাচ্ছে , ধনদেবীর কৃপালাভ থেকে তারা যত বঞ্চিত হবেন তাতই রোষ আছড়ে পড়বে আসন্ন বিধানসভা ভোটের ইভিএমে।