গোয়ালা পরিবার ছাড়া লক্ষীপুরে কংগ্রেস অস্তিত্ব নেই,লড়তে পারেন সুস্মিতা

লক্ষীপুর: লক্ষীপুর কংগ্রেস যে গোয়ালা পরিবার ছাড়া অদূরা , তার প্রমাণ লক্ষীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ওলিগলিতে মিলছে l যদিও অবস্থানে ফিরে আসার তাগিদে মরিয়া প্রচেষ্টায় উপনীত হয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী সুস্মিতা দেব। তিনি পনেরো আগস্টের আগে লক্ষীপুর কংগ্রেসের একটি সভায় কর্মকর্তাদের নতুন করে ভীত গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । প্রয়োজনে ছোট সভাতেও উপস্থিত থাকার আশ্বাস দেন তিনি। তবে,সুস্মিতার এমন প্রয়াস শেষমেষ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা অবশ্যই সময় বলবে।
কিন্তু লক্ষীপুরের বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা বিজেপিতে যোগদান করছেন। এমন খবরের ভিত্তিতে যে লক্ষীপুর কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়েছে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কারণ,তাবড় তাবড় কংগ্রেস নেতারা দলত্যাগ করেছেন। এরপর কংগ্রেসের ভীত ধরে রাখতে সক্রিয় হন সুস্মিতা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই যেন হয় নি। তার প্রমাণ মিলল পনেরো আগস্ট সহ কয়েকটি ঘটনায়।
লক্ষীপুর শহর মন্ডল কংগ্রেসের স্থায়ী বেদী রয়েছে,বেদী নির্মাণ করা হয় শহরের মধ্যবাজারে। লক্ষীপুরের বিধায়ক তথা প্রয়াত মন্ত্রী দীনেশপ্রসাদ গোয়ালার আমল থেকেই ঠাই না পাওয়া ভীড়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এই বেদীতে। প্রবণতার সহিত উত্তোলন করতেন মন্ডল কংগ্রেস সভাপতিরা। কিন্তু প্রথমবারের মতো এবার দেখা গেল ব্যতিক্রম দৃশ্যl পনেরো আগস্টে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি এই বেদীতে।
লক্ষীপুর শহর মন্ডল কংগ্রেসের শেষ সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্র সিংহ ও সম্পাদক ছিলেন পিন্টুলাল রায়। এনিয়ে পিন্টুলাল রায় জানান,বর্তমানে তারা দলীয় পদবীতে নেইl এক বছর আগে একসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন l তাই জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না l মন্ডল কংগ্রেসের এক কর্মী জানান,অন্যবার জাতীয় পতাকা উত্তোলনে উপস্থিত থাকার খবর পাঠানো হত l কিন্তু এবার খবর পাঠানো হয় নি l বর্তমান সভাপতি কে ? বা কেন উঠানো হয় নি l সেই বিষয়েও তিনি কিছু বলতে পারেন নি l তবে,একপ্রকার জানিয়ে দেন,রাজদীপ গোয়ালা যেদিকে থাকবেন,সে দিকেই থাকবেন তিনি l
এছাড়া, ওল্ড লক্ষীপুর সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে কয়েকদিন আগে লক্ষীপুর সমষ্টি ভিত্তিক যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিন্নাকান্দি ব্লক কংগ্রেস সম্পাদক হানিফ আলম মজুমদারকে সরব হতে দেখা যায় l কিন্তু পরে তিনি জানান,প্রতিবাদ কংগ্রেস করে নি। করেছেন স্থানীয়রা l তাদের সঙ্গে তিনিও শামিল হয়েছিলেন l এমন পরিস্থিতিতে সবার একটাই প্রশ্ন l গোয়ালা পরিবার ছাড়া কি লক্ষীপুরে কংগ্রেস অস্তিত্ব নেই ? সুস্মিতার সক্রিয়তাও কি ফিকে পড়তে চলছে গোয়ালা পরিবারের সামনে ? নাহলে সুস্মিতা সক্রিয় হওয়ার পরও কেন লক্ষীপুর কংগ্রেসের সেই অবস্থান নেই ? এক সময় ঝাঁক বেন্দে আসা কর্মীরাও রাজদীপের পক্ষে থাকার মত প্রকাশ করছেন ? আবার পদবী থাকা হানিফ সড়ক সংস্কারের দাবিতে সরব হলেও বলছেন,প্রতিবাদ কংগ্রেস করে নি,করেছেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য,লক্ষীপুর বিধানসভা কেন্দ্র কংগ্রেসের দূর্গ হিসাবে পরিচিত। উনিশোতিরাসি-সাল থেকে কোনো দলই কোনোস্তরে কংগ্রেসকে টেক্কা দিতে পারে নি l অবশ্য,শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাজিমাত করে বিজেপি। পঞ্চায়েতস্তরের অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করে দলের মনোনীত প্রার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে দলের অনেকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছিলেন লক্ষীপুরের বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালার বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ ছিল,রাজদীপ গোয়ালার সক্রিয় ভূমিকা না থাকায় প্রথমবারের মতো লক্ষীপুরে বিজেপি বাজিমাত করতে সক্ষম হয়েছে l
অবশেষে,নিজের মুখে না বললেও রাজদীপ যে বিজেপিমুখী ছিলেন রাজ্য মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ঘোষনায় তা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে যায় l ঘোষনার পর থেকে রাজদীপকেও আর কংগ্রেসে সক্রিয় অবস্থানে দেখা যায় নি। বিপরীতে বিজেপিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার খবর পাওয়া গেছে l কিন্তু এখন পর্যন্ত কংগ্রেসও ছাড়েননি তিনি l যার জেরে সুস্মিতা দেবও লক্ষীপুরের একটি দলীয় সভায় ঘোষনা দেন,রাজদীপ দলে থাকলেও আর কংগ্রেস টিকেট পাবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,সুস্মিতার এই ঘোষনা কি ঠিকবে ? কারন,এখন পর্যন্ত রাজদীপ গোয়ালা নিজের মুখে বিজেপিতে যাওয়ার ঘোষনা করেন নি যদিও সামনেই একুশ বিধানসভা নির্বাচন l
তারমধ্যেই কংগ্রেসীদের এমন বেহাল অবস্থা l তাছাড়া অনেকে বলেন,লক্ষীপুরে গোয়ালা পরিবার ছাড়া বিকল্প নেই l তাই রাজদীপ গোয়ালা বিজেপিতে গেলে কংগ্রেসের কাছে একুশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী খোজাই এক চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে l অবশ্য কংগ্রেস মহলের একটি দাবি,রাজদীপ বিজেপিতে গেলে বিকল্প হিসাবে কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতাও লক্ষীপুর থেকে প্রতিদ্বন্দীতা করতে পারেন l তবে,সিদ্বান্ত নেওয়া হবে সময় সাপেক্ষ l