বামেদের বনধ্ কৃষক বিরোধী! বলছে গ্রামবাংলা

রক্তিম দাশ, কলকাতা: সংসদে পাশ হওয়া কৃষি বিলের বিরুদ্ধে ডাকা বামেদের ডাকা বনধ্ কৃষক বিরোধী। গ্রাম বাংলার কৃষকরাই একথা বলছেন বলে দাবি করেছে বিজেপি। এই বনধ্ বাংলার গ্রাম-গঞ্জে সাড়া পড়বে না বলেও দাবি গেরুয়া শিবিরের।
বিজেপির কৃষান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন,‘সংসদে তিনটি ধাপে কৃষি বিল পাশ হয়েছে। এতদিন দেশের কৃষকরা যে পদ্ধতিতে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে লাভ করত সেটা এই কৃষি বিল নিয়ম অনুযায়ী থাকছে না। এখন থেকে কৃষক ভাইয়েরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল সরাসরি বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে বিক্রি করতে পারবে। তার সম্পূর্ণ দাম কৃষকই পাবে। মাঝখানে কোন সিন্ডিকেট দালাল রাজ আর চলবে না। কোনও সরকার এতদিন ধরে কৃষকদের কথা ভাবেনি। তাদের কষ্টের দাম তারা পায়নি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকদের কথা মাথায় রেখেই এই বিল করেছেন। তাই বাংলার কৃষকরা এই বনধ্ প্রত্যাক্ষান করছেন।’
মহাদেববাবুর দাবি,‘ কৃষকদের কৃষি পন্য মজুত করার ক্ষেত্রে আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারবে কৃষকরা। যা বিগত ৭০ বছর ধরে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করবার ক্ষেত্রে কোনও সরকার করেনি। পঞ্জাবের কিছু ধনী কৃষক এই বিলে তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে বলে বিরোধীতায় নেমেছে কিন্তু বাদবাকি দেশের অনান্য রাজ্যের কৃষকরা এই বিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। কৃষি বিল নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।’
কৃষি বিজ্ঞানী মানবেন্দ্র রায় বিলের বিরোধীতা বামেদের ডাকা বনধকে সমলোচনা করে বলেন,‘ এতদিন কৃষকদের জন্য কেউ ভাবেনি। বামেরা দীর্ঘদিন বাংলায় আর কংগ্রেস কেন্দ্রে শাসন করেছে। কৃষকদের কি উন্নতি হয়েছে? উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের কৃষকরা ঋণগ্রস্থ হয়ে আত্বহত্যা করেছেন। বাংলা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের সংখ্যা বেশি। এরা আতহত্যা না করলেও এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাংলা ছেড়ে যাচ্ছেন। এটা ভয়ঙ্কর। এর ফলে আমাদের কৃষি উৎপাদন কমে যাবে।’
কৃষকদের বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করে মানবেন্দ্রবাবু বলেন,‘কৃষি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। কৃষক বিনিয়োগ করে তার নায্যমূল্য পান না। বৈরি আবহাওয়া, ফসলের রোগ আর ফড়ে-দালালদের দৌরাত্বর পাশাপাশি প্রশাসনিক অব্যবস্থা ফলে বাংলার কৃষকদের নাভিশ্বাস উঠছে। এর থেকে তাঁরা পরিত্রান চান। কেন্দ্রে এই কৃষিনীতি এসব দূরবস্থার বিরুদ্ধে কৃষকদের রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করবে। কৃষকরা সরাসরি ফসলের দাম পাবেন। প্রশাসনিক সমস্যা থাকবে না। চুক্তিবদ্ধ কৃষি হলে ফসলবীমার সুযোগ পাবেন তাঁরা। এর ফলে উপভোক্তারাও নায্যমূল্যে কৃষিজাতদ্রব্য কিনতে পারবেন বাজার থেকে।’
কিষাণ মোর্চার জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য এবং শ্রমিক সংগঠন বিজেএমটিইউ-ও সভাপতি বাবান ঘোষের দাবি,‘এই বনধ্ কর্মনাশা। জনজীবনের দুর্ভোগ বাড়াবে। বামেরা ৩৪ বছর ধরে এই সংস্কৃতি বাংলায় চালিয়ে কৃষি থেকে শিল্প সবটার বারোটা বাজিয়েছেন। যে কারণে তাঁদের মানুষ ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আবার তাঁরা বাংলায় বনধ্ সংস্কৃতির আমদানি করতে চাইছে। একুশে হারানো জমি পেতে এটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা। বাংলার কৃষক-শ্রমিক এই বনধ মানছেন না। বামেরা বাংলাকে পিছিয়ে দিয়েছিল আর তৃণমূল তাকে তলানিতে নিয়ে গিয়েছে। এর ফল একুশের বিধানসভায় তাঁরা দেখতে পাবেন।’