আলিপুরদুয়ারে গাড়ি ধাক্কায় প্রাণ গেল বনবিড়ালের… উদ্ধারের আগেই গায়েব মৃত প্রাণীর দেহ

জেলা প্রতিনিধি, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারে গাড়ির ধাক্কায় মারা পড়ল অতিবিরল প্রজাতির পূর্ণবয়স্ক একটি লেপার্ড ক্যাট। বাংলায় যাকে বনবিড়াল। তবে উদ্ধারের আগেই গায়েব হয়ে যায় বনবিড়ালের দেহ। এদিকে আগেই উৎসাহী জনতা বনবিড়ালের দুর্ঘটনার ছবিটি ফোনবন্দি করে। ইতিমধ্যেই দেহ উদ্ধারের জন্য তল্লাশি শুরু হয়েছে।
আলিপুরদুয়ারে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া ৪৮নম্বর এশিয়ান হাইওয়েতে বৃহস্পতিবার সাতসকালে হলং বাজারের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এদিন আশ্চর্যজনকভাবে বনবিড়ালটি মারা গেলেও ঘটনার অল্প কিছু সময়ের মধ্যে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মৃত বন্যপ্রাণীর দেহটি সড়ক থেকে উধাও হয়ে যায়। আর তাতেই তোলপাড় শুরু হয় বনদফতরে।
উল্লেখ্য, আগেও দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় বেশ কয়েকটি হরিণ, বাইসন, লেপার্ডের যেমন মৃত্যু হয়েছে তেমনি আহত হয়েছে বিশালকায় হাতিও। এবার তাতে এই সিডিউল-১ তালিকায় থাকা বন্যপ্রানীটির নাম সংযোজন হল। মনে করা হচ্ছে সাতসকালে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকার জন্য গাড়ির চালক রাস্তা পার হওয়ার সময় ঠিকমতো দেখতে পায়নি প্রাণীটিকে। তবে রাস্তা থেকে মৃত বন্যপ্রাণীটির দেহ উধাও হয়ে যাওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকাজুড়ে। মৃতদেহটির খোঁজ পেতে একসঙ্গে তিনটি ট্রাকার ডগ নামানো হয় ঘটনাস্থলে। আশপাশের সব কটি গ্রাম-বনবস্তি এলাকায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেন বনকর্মীরা। যদিও বিকেল ৫টা অবধি খবর দেহটি উদ্ধার করা যায়নি।
উত্তরবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন,”লেপার্ড ক্যাট সিডিউল-১ পর্যায়ের বন্যপ্রাণী। অতিবিরল। এমন একটি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হলে তার দেহের ময়নাতদন্ত করা বাধ্যতামূলক। সেজন্য দেহটির খোঁজ চলছে। যদি এলাকার কারোর কাছ থেকে দেহটি উদ্ধার হয়,তাহলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সাতসকালে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের হলং বাজারের কাছে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় একটি পূর্ণ বয়স্ক লেপার্ড ক্যাটের। পথচলতি মানুষ কিছু ছবিও তুলে ফেলে। একঘন্টার মধ্যেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায় সোস্যাল মিডিয়ায়। দ্রুত জলদাপাড়ার বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন।তবে বন্যপ্রাণীটির মৃতদেহ আর দেখতে পাননি বলে দাবি বনদপ্তরের।তবে রাস্তার মাঝে ছিল চাপচাপ রক্তের ছাপ। এরপর নামানো হয় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের দুই জার্মান শেফার্ড গোয়েন্দা কুকুর রাণী আর ট্রফিকে। সঙ্গে তল্লাশি শুরু করেন একদল বনকর্মী। দুপুর একটা পর্যন্ত তাঁরা লেপার্ড ক্যাটের খোঁজ মেলেনি। এরপরে ডাক পরে বনদফতরের সব থেকে বিশ্বস্ত দেশের এক নম্বর প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা কুকুর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের করিমের। হলং বস্তির বেশ কয়েকটি বাড়িতে বারকয়েক গন্ধ শুঁকে ঢুকেও পরে ওই তিন গোয়েন্দা কুকুর।
আরও পড়ুন: সোনা কান্ডের মামলার দ্রুত শুনানির চায় আদালত
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মাংস ও চামড়ার লোভে দেহটি গায়েব করে দেওয়া হতে পারে। আবার জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া কোন গাড়িও তুলে নিয়ে যেতে পারে মৃত বন্যপ্রাণীটির মৃতদেহটি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে হাতে গোনা লেপার্ড ক্যাটের অস্তিত্ব রয়েছে। এইভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায়না। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিন, জলদাপাড়া, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, চিলাপাতা, গরুমারার মত এলাকায়।