পথশ্রী’র অজানা কথা, রাস্তা অমিল, আল পথই ভরসা, ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি এলাকাবাসীর

জয়দেব লাহা,দুর্গাপুর: ঢালাই রাস্তা দুঃস্বপ্ন। মোরাম রাস্তাটুকুও জোটেনি। শীত গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কাদা মাখানো আলপথই একমাত্র ভরসা। স্বাধীন ভারতে যখন আদর্শ গ্রাম, নির্মল গ্রাম নিয়ে গালভরা ফিরিস্তি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে পথশ্রী অভিযানের সুচনায় বিভোর যখন গোটা রাজ্য। তখনও চরম বঞ্চনার প্রতিবাদে আবারও ভোট বয়কটের ডাক দিল পুর্ব-বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম ২নং ব্লকের বাবলাবনি, আমানিডাঙ্গার গ্রামবাসীরা।
কুনুর নদীর পাড়ে বহু পুরোনো গ্রাম আমানিডাঙা, বাবলাবনি। আউশগ্রামের দেবশালা পঞ্চায়েতের ওই গ্রামদুটির ৩০ পরিবারের বসবাস। বেশীরভাগই আদিবাসী সম্প্রদায়ের দিনমজুর। গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দুরে কাঁকসার পিয়ারীগঞ্জ। সদর বাজার কিংবা কাঁকসার হাসপাতালে যেতে হলে কর্দমাক্ত আলপথ দিয়ে আড়াই কিলোমিটার দুরে পিয়ারীগঞ্জ যেতে হয় বাসিন্দাদের। তারপরে ১০ কিমি দূরে হাসপাতাল। বছরখানেক আগে বীরভুম থেকে ফেরার পথে পিয়ারীগঞ্জ স্কুলের সামনে ক্ষুদে পড়ুয়াদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। সেখান থেকেই রাজ্যে ক্ষুদে পড়ুয়াদের জুতো দেওয়ার কথা ঘোষনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো জুতো পেলেও রাস্তা না থাকায় হাতে জুতো নিয়ে স্কুলে যেতে হয় আমানিডাঙ্গা, বাবলাবনির পড়ুয়াদের। পড়ুয়াদের সবুজ সাথীর সাইকেলও জুটেছে। তবে সেটা চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার উপায় নেই। কাদা মাখানো মেঠো আলপথে জুতো পরে চলা দায়। তেমনই সাইকেল চালানো দায়।
[আরও পড়ুন- রাজনীতিতে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী! ডিসেম্বরে ঘোষণা নতুন দলের]
গ্রামের পঞ্চায়েত দেবশালা। সেটাও আবার আলপথ দু-কিলোমিটার। বড় কোন গাড়ী যাতায়াতের রাস্তা নেই। গ্রামে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য খাটিয়ায় ভরসা। খাটিয়াতে রোগীকে চাপিয়ে আলপথে আড়াই কিলোমিটার নিয়ে গিয়ে তারপর চওড়া রাস্তা। গ্রামের মধ্যে মোটরগাড়ী তো দুরঅস্ত সাইকেল রিক্সা যাতায়াতের রাস্তাটুকু নেই। এমনকি গ্রামের রাস্তাতেও মোরামের দানা পর্যন্ত পড়েনি। গত ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাস্তার দাবীতে ভোট বয়কট করেছিল। তারপর কুনর নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। সামনে ২০২১ আরও একটা নির্বাচন। চার বছর পরও গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা হয়নি। আর তাই ক্ষোভে ফুঁসছে ওইসব আদিবাসী গ্রাম। দিন দশেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথশ্রী অভিযানে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের সুচনা করেন।তাছাড়াও গ্রামীন সড়ক তৈরীতে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকারই তৎপর। আদিবাসী গ্রামে ঢালাও উন্নয়নের ফিরিস্তি শোনা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা তাপস সোরেন, গনেশ মুর্ম্মু, সোম সোরেন, সনাতন সোরেন শুকুল হেমব্রম প্রমুখ তরুনরা জানান,” উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনে ক্লান্ত। ২০১৬ সালে ভোট বয়কটের পর বছর খানেক হল বিদ্যুৎ পেয়েছি। বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেও যাতায়াতের রাস্তার অভাবে মিটার রিডিং নিতে আসেনা। আন্দাজে বিল নেয়। রাস্তার দাবীতে বহুবার আবেদন করেছি। আজও জোটেনি। গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে খাটিয়াতে দোলা করে নিয়ে যেতে হয়। বর্ষায় গ্রামবন্দি জীবন কাটে। প্রশাসনকে বলেছি, ঢালাই কিংবা পিচ রাস্তার দরকার নেই। রিক্সা, ভ্যান ঢোকার মত মোরামের রাস্তা হলেই চলবে। চাষজমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা টাকা পেলে দু-ফুট করে জমি ছেড়ে দেবে। সরকার যদি সেই দাম দেয়, আমরা এক’শ দিনের কাজে রাস্তা তৈরী করে নেব। কিন্তু তাতেও সরকারের কোন সাড়া পায়নি।”
বাসিন্দারা কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,” এযাবৎকাল খোঁজখবর নিতে কোনও নেতা বিধায়ক আসেনি। তাই রাস্তা না পেলে আবার ভোট বয়কট করব। নাগরিক পরিষেবা যদি না পায়। তখন ভোট দেওয়ার প্রয়োজন কি?” আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার সাফাই দেন,” গ্রামে বাসিন্দারা সারা বছর থাকি না। চাষের সময় আসি। তবুও বিষয়টি দেখছি।”