লকডাউনের সুযোগে, দামোদরে রমরমিয়ে চলছে অবৈধ বালির কারবার! শিকেয় নজরদারি

জয়দেব লাহা, দুর্গাপুর: লকডাউনে গোটা দেশ যখন স্তব্ধ, তখন থেমে নেই তখন অবৈধ বালির রমরমা কারবার। দামোদরের বুক চিরে চলছে অবৈধ বালির চোরা কারবার। গ্রীন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নদীর পাড়ে কেটে হচ্ছে বালিঘাটের রাস্তা। বর্ষার আগে বালি তুলে চলছে মজুত।
দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ নদী দামোদর। বাঁকুড়া জেলায় পড়লেও পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা সীমানা প্রান্তে অবস্থিত। নদীর বালিঘাটের অনুমতির রাশ মূলত বাঁকুড়ার জেলার ওপর। নদীর উত্তর পাড়ের পরই অন্য জেলা।
গলসি-১ নং ব্লকের শিল্লাঘাটে বৈধঘাটের পাশাপাশি দেদার রয়েছে অবৈধঘাট। আবার সোদপুর মানা, কসবা মানা, রনডিহা, শাকুড়িতে একাধিক অবৈধঘাট। একইরকমভাবে কাঁকসার সিলামপুর, আইমা এলাকায় বৈধঘাটের পাশাপাশি চলছে অবৈধঘাট। সম্প্রতি লকডাউন একটু শিথিল হতেই শ’য়ে শ’য়ে ঢুকছে লরি, ডাম্পার। সন্ধ্যার অন্ধকার নামতেই লাইন দিয়ে পাচার হচ্ছে ২ নং জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে হাওড়া, কলকাতায়। গ্রীন ট্রাইবুনালের কড়া নির্দেশিকা রয়েছে, নদী পাড়ের কাছাকাছি বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এছাড়াও বর্ষায় নদী গর্ভে বালি তোলার ওপরও নিষেধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আছে মেশিন দ্বারা বালি উত্তোলনে।
কয়েকদিন আগে সিলামপুর ঘাটে ওভারলোডিং বালির লরি উল্টে মৃত্যু হয় এক খালাসির। তাছাড়াও মেশিন বসিয়ে বালি তোলায় বিশালাকার খাদ তৈরি হয়। জল পূর্ণ ওই খাদে স্নান করতে নেমে তলিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তারপরও প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। দৈনিক এক একটি ঘাট থেকে ২০০-২৫০ লরি বালি উঠছে। যার বেশিরভাগই অবৈধ। আবার বুদবুদের রনডিহা, শাঁকুড়ি, শালডাঙ্গা এলাকায় বর্ষার আগে চলছে বালি মজুত। আর প্রশ্ন উঠেছে এখানেই। রয়েলটি না দেওয়ায় কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান হচ্ছে রাজ্য সরকারের।
নদী বাঁকুড়া জেলায় হওয়ায় নজরদারি শিকেয় উঠেছে। অভিযান চালাতে হলে প্রায় ৮০-৯০ কিলোমিটার ঘুরপথে ওই জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের আসতে হবে।
বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ-সভাপতি রমণ শর্মা জানান,” মাস কয়েক আগেই শাঁকুড়ি, রনডিহা এলাকায় অবৈধ বালি ঘাটের রাস্তা তৈরি দেখে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিছুদিন বন্ধ ছিল। লকডাউনে খুল্লামখুল্লা বালি উঠছে নদী থেকে। সম্পূর্ণটাই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। শাসকদলের মদতেই ওইসব অবৈধ বালির ঘাট চলছে। গ্রামের রাস্তায় ওভারলোডিং বালির লরি যাতায়াত চলছে অবাধে। ভেঙে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। নির্বিকার প্রশাসন। প্রতিবাদ করলেই পাল্টা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে।”
যদিও তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি সমীর বিশ্বাস জানান,” অবৈধ বালিঘাট বন্ধ হওয়া দরকার। প্রাচুর রাজস্ব লোকসান হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কাছে জানাব।”
বাঁকুড়া জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ জানান,” অভিযোগ শুনেছি। দুই জেলার যৌথ উদ্যোগে অভিযানের চিন্তাভাবনা নেওয়া হয়েছে।”