হারিয়ে যাছে কোচবিহারের খেলাধুলো, উদ্বিগ্ন ক্রীড়াপ্রেমী মহল

জেলা প্রতিনিধি, কোচবিহার: ইস্টবেঙ্গল থেকে মোহনবাগান, অসম, বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, এমনকী বাইচুং ভুটিয়া থেকে শুরু করে অতীত দিনের দিকপাল খেলোয়াড়রা কোচবিহারে এসেছিলেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে। শুধু ফুটবল নয় ক্রিকেট, ভলিবল, অ্যাথলেট মিট সবেতেই কোচবিহার দাগ কেটেছিল বাংলার বুকে। কোচবিহারের ছেলে শিব শংকর পাল তখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলার। দৈনিক ঘরে দেড়শ ছেলে মেয়ে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করছে কোচবিহার ময়দানে। শিব শংকর পালের হাত ধরেই তৈরি হল অ্যাকাডেমি তারপর……
একদিকে গোটা কোচবিহার যেইখানে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঠিক তার পাশাপাশি কোচবিহারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য অহংকার কোচবিহারের ক্রীড়া হারিয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়াম থেকে।এমনটাই আশঙ্কা করছেন কোচবিহারের ক্রীড়ামোদি জনসাধারণ। বিগত তিন বছরে বড় কোন টুর্নামেন্টে হয়নি কোচবিহারে। কোচবিহার থেকে ভালো কোনও খেলোয়াড় উঠে আসেনি। একটা সময় স্কুল ভিত্তিক ক্রিকেট এবং ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজিত হতো, আজ সেই সব অতীত। এমনকী প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে কোচবিহারে। কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে একসময় কোচবিহারে ক্রিকেট-ফুটবল এর পাশাপাশি হকি, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, উসু প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই সব বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি বছরের প্রায় প্রথম থেকেই করোনা আবহের কারণে কোচবিহার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেখানেই তৈরি হয় সেভ হাউস, তাই হয়তো খেলাধুলোয় বেশ কিছুটা ভাটা পড়েছে স্টেডিয়ামে। সমস্ত ধরনের খেলার প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত।আগ্রহ রয়েছে তা ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির পথে।
রাজার শহর কোচবিহার, কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দিপেন্দ্র নারায়ন ভূপ বাহাদুর কোচবিহারের খেলাধুলোকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তৈরি করেছিলেন কোচবিহার স্টেডিয়াম। তিনি নিজে দক্ষ ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। তাই ক্রিকেটের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল অনেক বেশি। পাশাপাশি তিনি সমস্ত খেলাকে সমান প্রাধান্য দিতেন। ইতিহাস বলে, কোচবিহারের নামে তৈরি হওয়া কোচবিহার ট্রফি ভিন রাজ্যে খেলা হলেও কোচবিহারে তার চিহ্নমাত্র পাওয়া যায় না। শেষ ২০১২ সালে একটি ম্যাচ হয়েছিল কোচবিহারে।
ক্রীড়ামহল এর অভিযোগ, খেলোয়াড় পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের। উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত, এই কথা বারংবার আলোড়িত হলেও উত্তরবঙ্গের খেলা এবং উত্তরবঙ্গের ক্রীড়াজগৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই আলোড়ন উঠতে দেখা যায় না।
কোচবিহারের অন্যতম প্রবীণ নাগরিক তথা ক্রীড়াপ্রেমী অরূপ জ্যোতি মজুমদার বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় টিভি পাইনি,মাঠ ঘাঁট ই ছিল সব থেকে বড় আকর্ষণের কেন্দ্র। সেই সময় দুদিন পরপর খেলা হত। আমরা দর্শক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে যেতাম। এখন আর খেলা হয় না’।
কোচবিহারের অন্যতম ক্রীড়াবিদ অভিষেক চক্রবর্তী বলেছেন, ‘ছোটবেলায় খেলার জন্য মার খেয়েছি এখন আমার সন্তান-সন্ততিদের খেলতে পাঠানোর জন্য মারার উপক্রম হয়েছে। আমাদের সময়ে আমরা প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস করতাম। সেই সময়ও পরিকাঠামোর অভাব ছিল কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত তার অভাব ছিল না। আজ পুরোটাই অভাব’।
পুলিশ স্পোর্টস, এবং বিভিন্ন শিক্ষা সংগঠন কর্তৃক স্কুল ভিত্তিক স্পোর্টস আয়োজিত হলেও তা শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থা এখন কারা পরিচালনা করছেন কিংবা কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরিকাঠামো কি রয়েছে তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত রয়েছেন কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক সদস্য। কেউ ভাবছে না কোচবিহার নিয়ে, বিশেষ করে রাজনীতির চিন্তাভাবনা কোথাও মানুষের মন থেকে খেলাধুলাকে উঠিয়ে দিচ্ছে কি ??