ভাঙনের করালগ্রাসে নদীগর্ভে ২০০ বিঘা জমি সহ প্রায় ১০০টি বাড়ি, নিখোঁজ গবাদি পশু
নিরাশ্রয় মানুষগুলির আশ্রয় খোলা আকাশ, নির্বিকার প্রশাসন

মিল্টন পাল, মালদা: গঙ্গা ভাঙনের কবলে তলিয়ে গেল ২০০ বিঘা জমি সহ প্রায় ১০০টি বাড়ি। রাতের অন্ধকারে ভাঙন শুরু হওয়ায় গ্রামের বাসিন্দারা কিছুই সরাতে পারেনি। ফলে বাড়ির ব্যবহৃত সমস্ত জিনিসই গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গেছে। অসহায়ভাবে আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার কালিয়াচক -৩নম্বর ব্লকের বীরনগর চিনা বাজার গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রতিবছর ভাঙনের তোড়ে বসতভিটা, জায়গা, জমি জলে চলে গেলেও ভাঙন রোধের কাজে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ সঠিক সময়ে করা না হলে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর আকার নেবে এই কালিয়াচক ৩ নম্বর এলাকা। আর এই ভাঙন প্রতিরোধের কাজ নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা।
জানা গিয়েছে, কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার চিনা বাজার, কুরিয়ার এ-গ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে সোমবার সকাল থেকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। আর যার ফলে গঙ্গা নদীর ভাঙনে প্রায় ২০০ বিঘা জমি গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ১০০টি বাড়িও গঙ্গাতে বিলীন হয়ে যায় ভাঙনের তোরে। চিনা বাজার গ্রামকে রক্ষা করার জন্য ২০১৬ সালে গঙ্গা নদীর পাড়ে বোল্ডার দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল সেই বাঁধটিও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এদিন ভোর থেকে ভাঙন শুরু হয়। জমি আম বাগান বসত বাড়ি চোখের সামনে গঙ্গাতে চলে যেতে দেখে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করতে থাকেন অসহায় মানুষেরা।
নিজেদের পাকা বাড়ি ভেঙ্গে দরজা, জানালা,ইঁট কাঠ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আতঙ্কিত মানুষেরা। প্রায় হাজার খানেক মানুষকে এখন খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হবে। তবে এই দিনের ভাঙনে কোনও মানুষের জীবনহানি না হলেও গোয়ালে বেঁধে রাখা গরু হাঁস মুরগি গঙ্গার জলে তলিয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত মানুষেরা এখন কোথায় যাবে কি খাবে! প্রশাসনের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন চিনা বাজার গ্রামের অসহায় মানুষেরা।
চিনা বাজার গ্রামের বাসিন্দা, হালিম শেখ জানান, এই এলাকায় গঙ্গা নদীর তীরে ভাঙন প্রতি বছরই হয়। তবে এদিন যে হারে ভাঙন হয়েছে তাতে প্রচুর চাষের জমি বসতভিটা ও গবাদিপশু জলে ভেসে গিয়েছে।বর্তমানে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। কোনরকম সরকারি সাহায্য এখনো এসে পৌঁছায়নি। এই পরিস্থিতিযাতে পুনরায় ফিরে না আসে সেই কারণে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি অতি দ্রুত ভাঙ্গন রোধের কাজ করে গ্রামবাসীদের রক্ষা করুন।না হলে এই ভাঙনে যেভাবে নদী পার ভাঙছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
উত্তর মালদার বিজেপির সংসদ খগেন মুর্মু বলেন, মালদা জেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা নদী ভাঙন। আমি সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই পার্লামেন্টে সমস্যা নিয়ে বলেছি।অথচ বিগত সাংসদেরা এত বড় সমস্যা হলেও কখনই পার্লামেন্টে বলেননি।ভাঙন নিয়ে যখনই রাজ্য সরকারকে ডাকা হয় তারা কোন বৈঠকে যোগদান করেন না। এমনকি মালদার ভাঙন নিয়ে সমস্যা সমাধানের কোনও কথা বলেন না।এই পরিস্থিতিতে আমি ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষকে বলেছি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার জন্য।
পাল্টা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের। অথচ তারা কোনো কাজই করেন না।ফিবছর ভাঙ্গন প্রতিরোধ এর কাজ করলে এধরনের সমস্যায় পড়তে হতো না মানুষদের। হয় কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করুক না হয় রাজ্য সরকারকে কাজ করতে দেওয়া হোক। তাহলে দেখিয়ে দিবে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ কিভাবে করতে হয়।