fbpx
কলকাতাহেডলাইন

‘প্রশাসনিক কাজকর্ম যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে, তা সত্ত্বে কিছু কিছু লোক ঘেউঘেউ করছে’ রাজ্যপালকে আক্রমণ মমতার

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক:  রাজভবন-নবান্ন দ্বন্দ্ব যেন প্রতিদিনই নতুন মোড় নিচ্ছে। আজ, নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে নাম না করে রাজ্যপালকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তা করতে গিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন। করোনার মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল থেকে বিরোধী দলের নেতারা। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক থেকে নাম না করে রাজ্যপালকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এবং তা করতে গিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন। বললেন, ”প্রশাসনিক কাজকর্ম যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে, তা সত্ত্বে কিছু কিছু লোক ঘেউঘেউ করছে।”

এর আগে নানা বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনায় টুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। তাতে সাম্প্রতিকতম সংযোজন, করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে শাসকদলের উদ্দেশে ‘কাটমানি’ সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলা। তাঁর সেই টুইটের জবাবও দিয়েছিল স্বরাষ্ট্রদপ্তর। কঠিন সময়ে একসঙ্গে কাজ না করে এ ধরনের মন্তব্য কাজের পরিবেশকে উলটে বিঘ্নিত করছে বলে পালটা টুইটে লিখেছিল নবান্ন। এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীই তার জবাব দিলেন। নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তিনি বললেন, ”আমরা কোথা থেকে মাস্ক কিনছি, তার হিসাব চাওয়া হচ্ছে। আমরা বলব না। কেন বলব? এমন কিছু কিট বাজারে আছে সেগুলো ভুয়ো। ICMR সেকথা মেনেও নিয়েছে। তাদের কেন প্রশ্ন করা হচ্ছে না?”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা এই তহবিল থেকে খরচ করেছি।‌ সবটাই স্বচ্ছ ভাবে। ‌যারা রাস্তায় নেমে ভেউ-‌ভেউ করছেন, তারা এই সঙ্কটের সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়ননি।’‌ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ‌এতটাই স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করি যে সাধারণ মানুষ কোনও মন্ত্রী, অফিসারদের সম্পর্কে জানিয়ে চিঠি পাঠালে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিই। তদন্ত করি।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ‌ করা যেতে পারে, কিছু দিন আগে রাজ্যপাল রাজ্যের কোভিড-‌সরঞ্জাম কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। ৩৪ বছরে সিপিএমের জমানায় যা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছতা এখন নিয়ে আসা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের কটাক্ষ, ভক্ষককেই রক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: উত্তেজনার মাঝেই চিন-পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নেবে ভারতীয় সেনা

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ”ন’বছর সরকার চালাচ্ছি। কেউ বলতে পারবে না আমি এ সব নিয়ে কোনও দিন কাউকে বলেছি, এটা নয় ওটা করুন। আমাদের সরকার যথেষ্ট স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে। একমাত্র সরকার যেখানে দফতরগুলি নিজেদের মতো করে কাজ করে। কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয় না।” তাঁর বক্তব্য, সাধারণ মানুষ কোনও অভিযোগ করলেও সত্যতা যাচাই করে নেওয়া হয়। কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তদন্ত করে দেখে নেওয়া হয়। ঠিক সে ভাবেই অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তদন্ত করে দেখে নেওয়া হবে। এ নিয়ে এত হইচই করার কোনও কারণ নেই।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবির প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ”তিনি নিজেই নিজেকে শংসাপত্র দিচ্ছেন! আমরা কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলছি না। দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগের বিচারবিভাগীয় তদন্ত হতে পারে বা পরিষদীয় তদন্ত কমিটি গড়া যেতে পারে। যদি মুখ্যমন্ত্রীর কিছু লুকোনোর না থাকে, তা হলে তদন্তে আপত্তি কী?” বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ”কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী একটা কমিটি গড়লেন। আবার এখন নিজেই বলে দিলেন, কোনও অনিয়ম হয়নি। কেনাকাটা দেখভালের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই আবার অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। ভক্ষককেই রক্ষকের দায়িত্ব দিলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে!” বাম জমানার ৩৪ বছরে অস্বচ্ছতা বা কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ তুলেও তৃণমূলের সরকার অজস্র কমিশন গড়ে কোনও কালো দাগ বার করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন সুজনবাবু।

আরও পড়ুন: ​আনলক ৪: দেশজুড়ে চালু হতে পারে মেট্রো পরিষেবা

রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও বলেন, ”কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিয়েছে। করোনা মোকাবিলার সরঞ্জাম কেনাতেও দুর্নীতি হয়েছে। আমার কাছে তথ্য আছে, ৫০০ টাকার জিনিস কিনে ৫০০০ টাকা দেখানো হয়েছে। জিনিস বিক্রেতারা সব মমতাজি’র পরিবারের আশপাশের লোক বা মুখ্যসচিবের আশপাশের লোক। আর যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের নিয়েই মমতাজি কমিটি করেছেন!

রাজ্যপালের ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই জবাব যথাযথ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে রাজ্যপালকে বিঁধতে গিয়ে কেউ কেউ তাঁর ভাষা প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর আগেও ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ‘ঘেউঘেউ’ শব্দ প্রয়োগ করেছিলেন। তা নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। এবারও সেই একই বিতর্কের অবকাশ থাকছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

Related Articles

Back to top button
Close