মায়ানমারের নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বাদ সংখ্যালঘু-রোহিঙ্গারা, বিতর্ক

নেপিডো: বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না মায়ানমারের। রবিবার দেশজুড়ে যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তাতে ভোটার হিসাবে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ জনগণ ভোট প্রদানের সুযোগ পেলেও তা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুরা। যাদের সংখ্যা ২৬ লক্ষের অধিক। এপ্রসঙ্গে ‘ফরটিফাই রাইটস’-এর প্রধান মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জন কিনলি জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার দেওয়া হচ্ছে না শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে এসব সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হচ্ছে না।’
দীর্ঘ ৫০ বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে মায়ানমার ফিরেছে গণতান্ত্রিক জমানায়। আর এটি দেশের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন। আর সেখানেই নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার রাক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুরা। যে নির্বাচনে প্রধানত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে অং সান সু কি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি এবং ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৫ সালের মতো এবারও ক্ষমতায় আসতে চলেছে সু কি’র দল। যে দলের প্রধান সু কি একসময় শান্তিতে নোবেলজয় করেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হন। এখন আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সু কি গণতন্ত্রে আদর্শ বলে বিবেচিত হন না। তবে, গত বছর হেগের আদালতে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’র অভিযোগ প্রশ্নে মায়ানমারের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পর দেশের ভেতরে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। সেটাই তার এই নির্বাচনের সম্বল। আর, রোহিঙ্গাদের নিপীড়িত হওয়ার বাস্তবতা বয়ে বেড়ানোর শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৫০ লক্ষ তরুণ ও প্রথমবারের ভোটার। তবে, এবারের নির্বাচনে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ১৫ লক্ষ ভোটারকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। আর এটি করা হয়েছে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়ে। তবে জানা যাচ্ছে, ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়া এই ১৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে এমন অনেক রাখাইন বৌদ্ধও রয়েছেন, যারা ২০১৫ সালে ভোট দিতে পারলেও এবার পারছেন না। এর পাশাপাশি ভোটাধিকারবঞ্চিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছেন, যারা কিনা দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
এদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। নির্বাচনকে ‘মৌলিকভাবে ত্রুটিযুক্ত’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। সংঘাত কবলিত এলাকাগুলিতে অনেক কমিউনিটির মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত, সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’।