করোনায় মারা গেলে সরকারি কর্মীর পরিবারের সদস্যকে চাকরি, নির্দেশিকা জারি নবান্নের

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: করোনায় মারা গেলে সরকারি কর্মীর পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বুধবার রাতের দিকে অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।সামনে সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধারা করোনায় আক্রান্ত হলে, চিকিৎসার সম্পূর্ণ ভার রাজ্য সরকারের, তা ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। এবার তাঁদের সাহায্যার্থে নেওয়া হল আরও মানবিক সিদ্ধান্ত। কোভিড যোদ্ধাদের মৃত্যু হলে অথবা কেউ চিরকালের মতো শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেললে পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। সরাসরি সরকারি চাকরি ছাড়াও সরকার অধিগৃহীত বিভিন্ন সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তরগুলিতে চাকরি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা সরকারের। নবান্ন সূত্রে খবর, বুধবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
মহামারী আবহে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা একেবারে সামনের সারিতে থেকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন দিনরাত। অনেক সময় নিজেদের সুরক্ষার কথা না ভেবেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। এমন কোভিড যোদ্ধাদের প্রতি আরও মানবিক সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। বুধবার নবান্ন থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এধরনের কোভিড যোদ্ধাদের মৃত্যু হলে অথবা করোনায় কাবু হয়ে তাঁরা যদি শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন কোনও কারণে, তাহলে তাঁদের পরিবারের একজনের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। ওই কর্মী যে বিভাগ বা দপ্তরে কর্মরত, সেই দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীই কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন।
কোন কোন ক্ষেত্রে এই সুবিধা মিলবে? যে কোনও রাজ্য সরকারি দফতর কর্মরত অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী, যাঁরা কোভিড যুদ্ধে শামিল, তাঁদের মৃত্যু বা আজীবন ক্ষতি হলে তাঁর আত্মীয় চাকরি পাবেন। ওই দপ্তরেই তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কোনও পদে চাকরি দেওয়া হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে উঁচু পদেও কাজের সুযোগ মিলতে পারে। সরাসরি সরকারি দফতরে সম্ভব না হলে সরকারের অধীনস্থ বা কোনও স্বশাসিত সংস্থায় এঁদের কর্মসংস্থান করে দেওয়া হবে। আশা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে কর্মরত, অঙ্গনওয়াড়ি ও সিভিক ভলান্টিয়াররাও রাজ্য সরকারের এই সুবিধা পাবেন। ১ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের পক্ষে সিলমোহর দিয়েছে নবান্ন। স্বভাবতই সরকারের এই নতুন উদ্যোগে খুশি তাঁরা সকলে।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে রাজ্যের ৭ পুলিশ আধিকারিককে পুরস্কৃত করবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
অর্থ দফতরের অতিরিক্ত প্রধান সচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদীর স্বাক্ষর করা নির্দেশিকায় স্পষ্টই বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির বাড়ির লোককে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী মূলত গ্রুপ সি কিংবা গ্রুপ ডি-তে কর্মসংস্থান দেওয়া হবে। তবে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্য অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে এর চেয়ে উচ্চপদেও দেওয়া যেতে পারে। তবে সবটাই নির্ভর করছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। মৃত কর্মীর সন্তান, স্ত্রী কিংবা বাড়ির কোনও সদস্য, যিনি ওই কর্মীর উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, তিনি চাকরি পাবেন। গত ১ এপ্রিল থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হয়ে গিয়েছে বলেই জানিয়েছে এই নির্দেশিকা। এই সিদ্ধান্তের ফলে গত কয়েকমাসে যে বা যতজন সরকারি কর্মী করোনা লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা চাকরি পাবেন। পাশাপাশি, এরপর থেকে মারা যাওয়ার পরে এই আবেদন করলে এক-দেড় মাসের মধ্যেই এই চাকরি পাওয়া যাবে বলেই জানা গিয়েছে।