চিনকে একহাত নিতে প্রস্তুত নতুন ভারত

আর কে সিনহা: ভারতের নতুন ও আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রত্যক্ষ করছে চিন। চিন এখন ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে, তাদের নাস্তানাবুদ করতে সক্ষম ভারত। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং গত ৪ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল ফেংঘের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, ওই সাক্ষাতে রাজনাথ চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, চিন অকারণে ভারতের সঙ্গে পাঙ্গা নিচ্ছে। এভাবে পাঙ্গা নিলে আখেরে চিনের ক্ষতি হবে।
দুই দেশের প্রতিনিধি মণ্ডলের বার্তার যে প্রতিচ্ছবি মিডিয়ায় সামনে এসেছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে ভারত রক্ষণাত্মক নীতিকে ছেড়ে দিয়েছে। রাজনাথ সিংয়ের দৃঢ় ভাবমূর্তি এবং চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উদ্বেগ সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার, ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্ত রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা নিয়ে কারও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আসলে চিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজনাথ মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।
আরও পড়ুন: ফের কেঁপে উঠল কার্গিল উপত্যকা, রিখটার স্কেলে তীব্রতা ৪.৪
কারণ, সাম্প্রতিক দিন গুলিতে চিনের আচরণ অত্যন্ত নিরাশাজনক ছিল। ভারতের সঙ্গে বন্ধু তথা প্রতিবেশী দেশ হওয়ার মতো কোনও আচরণই দেখায়নি চিন। করোনা পরিস্থিতিতেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে চিন। দুই দেশের মধ্যে ঐক্যমত্যের প্রকাশ্য লঙ্ঘন। গণতন্ত্রে একে-অপরের মধ্যে মতপার্থক্য তো থাকবেই। ভারতেও বিভিন্ন বিষয়ে শাসক ও বিরোধীরা ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারে না। তবে, দেশের অখন্ডতার বিষয়ে সমগ্র দেশ এক। এ বিষয়ে কোনও মতপার্থক্য নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিটি পদক্ষেপে সংহতি ও শক্তি নিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। চিনকে এবার বুঝতে হবে, এই ভারত ১৯৬২-র ভারত নয়। এবার ইটের জবাব দেওয়া হবে পাটকেলে। ১৯৬২ সাল থেকেই ভারতের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে রেখেছে ধূর্ত চিন, একইসঙ্গে আগ্রাসনের চেষ্টা করে চলেছে।
আরও পড়ুন: ফের অশান্ত প্যাংগং, LAC পেরিয়ে গুলি চালিয়েছে ভারতীয় সেনা, অভিযোগ চিনের
ভারতও সময় নষ্ট না করে চিনকে যোগ্য জবাব ফিরিয়ে দিচ্ছে। এজন্য চিনও সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার জন্য আলোচনায় প্রস্তুত হয়েছে। এজন্যই রাজনাথের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল চিন। চিন লাগোয়া সীমান্তে ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। আমেরিকা ভারতের আরও কাছাকাছি চলে আসছে, আর তাই চিন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতির জেরে আর্থিক সমস্যার মধ্যে থাকা চিনও বুঝতে পেরেছে, চিন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে ভারত অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সমস্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রসংশা করছে আমেরিকা। চিনের বিস্তারবাদী নীতি তা সহ্য করতে পারছে না। দুই দেশের মধ্যে ৪০৪৮ কিলোমিটার বিস্তৃত সীমা।
এর মধ্যেই ওয়েস্টার্ন সেক্টর (লাদাখ), মিডিল সেক্টর (উত্তরাখণ্ড, হিমাচল), ইস্টার্ন সেক্টরও (সিকিম, অরুণাচল) রয়েছে। এখন থেকে রণভূমি এবং কূটনীতি উভয় ক্ষেত্রেই চিনকে একহাত নিতে প্রস্তুত ভারত।
চিনের বিরুদ্ধে ১৯৬২, তারপর ১৯৬৫ সালে রুখে দাঁড়িয়েছিল ভারত। ১৯৭১ এবং কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ভারত। কোথায় কোনও রাজনীতি ছিল না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও আদর্শগত পার্থক্যের কোনও অবকাশ ছিল না। ১৯৬২-র5 জমি দখলের পর চিন আমাদের জমি দখল করেছিল। তখন ১৯৬২ সালের ১৪ নভেম্বর দেশের সংসদে, চিন কর্তৃক অধিকৃত ভারতীয় ভূখণ্ড প্রত্যাহারের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৬২ সালের ৮ নভেম্বর ওই প্রস্তাব গৃহীত হয় লোকসভায়। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সেই প্রস্তাব রেখেছিলেন।
১৯৬২ সালের যুদ্ধে আকসাইচিন দখল করেছিল চিন। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘এই সদন পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্কল্পের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে যে, ভারতের পবিত্র ভূমি থেকে হানাদারদের বিতাড়িত করা হবে।’ একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানকে আমরা ধূলিসাৎ করেছিলাম। তারপর দেশ একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। অর্থাৎ দেশের স্বার্থ যেখানে জড়িত, সবাই তখন ঐক্যবদ্ধ। দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা ও উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা আসলে পুরোপুরি ধূলিসাৎ করা হবে।
কতটা গুরুত্বপূর্ণ সংসদের বাদল অধিবেশন
যেই সংসদ চিনের বিরুদ্ধে এবং পাকিস্তান দ্বারা অধিকৃত পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ১৯৯৪ সালে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাশ করেছিল, সেই সংসদের বাদল অধিবেশন আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। করোনা-পরিস্থিতিতে সংসদের বাদল অধিবেশন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য বিষয় ছাড়া, চিনের সঙ্গে ভারতের বাস্তব স্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। বিরোধীরা চাইলে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্নীতি, কৃষি-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করবে।
সরকারকে প্রশ্ন করুন, প্রশ্ন করার তো অধিকার রয়েছে। আমরা যেমনটা জানি, সংসদীয় গণতন্ত্রে তিনটি ‘ডি’ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ডিবেট (চর্চা), ডিসেন্ট (মতবিরোধ) এবং ডিসিশন (সিদ্ধান্ত)।
সংসদ অধিবেশনে এই গণতান্ত্রিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত বিরোধীদের। এখন আরও একটি নতুন ডি-এর সংযোজন হয়েছে। সেটি হল ডিসরাপশান (হাঙ্গামা)। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সমস্ত প্রান্তে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা। এটি জেনে রাখা দরকার, সংসদের ভিতরে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে যত বিবাদ ও হাঙ্গামা হবে, এতে দেশের শত্রুরা খুশি হবে। ভারত দুর্বল হয়ে পড়ুক এটা তো শত্রুরাও চাইছে। সেই কারণে ধর্মের নামে সুপরিকল্পিত দাঙ্গা হয়, নাশকতা ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়। দেশের অন্দরের ও বাইরের শত্রুকে চিনতে হবে এবং বিনাশ করতে হবে।
( মতামত নিজস্ব)…