গোর্খাল্যান্ডে নেই সায়, গুরুংদের দাবি নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: ক্ষমতায় আসা ইস্তক উত্তরবঙ্গকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তারপরও লোকসভায় উত্তরবঙ্গের একটি লোকসভা আসনও পায়নি তৃণমূল। এদিন তাই জলপাইগুড়িতে দলের সভামঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন আমজনতাকে, ‘কেন জেতেনি তৃণমূল? কী অপরাধ ছিল আমাদের?’ যদিও সেই বঞ্চনাকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নেননি মুখ্যমন্ত্রী। মানুষকে এদিনও দিয়ে গিয়েছেন তিনি।এদিন জলপাইগুড়ি থেকে পাহাড় নিয়ে বেশ বড়সড় ঘোষণাই এদিন করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়ে দিলেন পৃথক রাজ্যের দাবিতে সায় নেই তাঁর। কাউকে পৃথক রাজ্য গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও তিনি দেননি। মনে করা হচ্ছে পাহাড় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই জবাবের নিশানায় মূলত বিনয় তামাংই। কেননা দিন দুই আগেই পাহাড়ের সুকনাতে সভা করে ফের পাহাড়ে আগুন জ্বালাবার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছিলেন এই নেতা। একই সঙ্গে তিনি যে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন আর তা যে রাজ্য সরকারের অজানা নয় তাও কার্যত এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন গুরুংয়েরও। তবে পৃথক রাজ্যের সায় একদম নয়।
জলপাইগুড়ি শহরের এবিপিসি ময়দানের দলীয় জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, ‘৬ বছর ধরে ওরা গুরুংদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছে গোর্খাল্যান্ড করে দেবে বলে। তাই ২০১৪এ একবার পাহাড়ে জিতেছে, কিন্তু প্রতিশ্রতি রাখেনি। আবার ২০১৯এ বিজেপি জিতেছে। আমরা কিন্তু গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দিইনি, তাই আমরা জিতিওনি। কিন্তু মনে রাখবেন, পাহাড়ের সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান করতে পারলে তা একমাত্র আমরাই পারব। বিজেপি পারবে না, ওদের দ্বারা হবে না। আমি কাউকে গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দিইনি। তবে আমি গুরুং আর আমাদের পাহাড়ের ভাইবোনদের ধন্যবাদ দেব তাঁরা বিজেপির ভাঁওতাবাজিটা ধরতে পেরে গেছেন বলে। তাঁদের পাশ থেকে সরে এসেছেন বলে।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন এটাও জানিয়ে দিয়েছেন পাহাড় আর ডুয়ার্সের মধ্যে বিবাদ বাঁধিয়ে দেওয়ার যে খেলা বিজেপি খেলছে তাতেও বাধা দেবে তৃণমূল। বাংলা ভাগ তাঁরা হতে দেবেন না, বাংলাকে গুজরাত বানাতেও তাঁরা দেবেন না।
এবার মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গের সফরে জলপাইগুড়ি আর আলিপুরদুয়ারের মানুষের সব থেকে বড় প্রাপ্তি নতুন ব্লক ক্রান্তি, নতুন দুই পুরসভা ময়নাগুড়ি আর মাদারিহাট। সঙ্গে থাকছে চা-সুন্দরী। আর চলছে দুয়ারে দুয়ারে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারে হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, কোচবিহারে হচ্ছে নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজবংশী ভাই-বোনেদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনে সরকারী ছুটি। এসব কিছুই করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মানুষের কাছে বিধানসভা নির্বাচনে এবার দলের জন্য সমর্থন চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘ওরা বাংলায় এক নতুন ধর্ম এনেছে, ঘৃণ্য ধর্ম, বাংলাকে ধ্বংস করতে চায়’, জলপাইগুড়ির সভা থেকে তোপ মমতার
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন চা-শ্রমিকদের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও। বলেছেন উত্তরবঙ্গের ৩৭০টি চা-বাগানে তাঁর সরকার চা-সুন্দরী প্রকল্প চালু করতে চলেছে। চা-বাগানের যে সব শ্রমিকদের পাকা বাড়ি নেই তাঁরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে পাকা বাড়ি পাবেন। এদিনই ৭টি চা-বাগানের প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি শ্রমিককে চা-সুন্দরি প্রকল্পের জন্য নথিভুক্ত করা হচ্ছে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে তাঁরা পাকা বাড়ি পেয়ে যাবেন। এদের মধ্যে ৩৬৯৪জন জলপাউগুড়ি জেলার ও ২৬৪১জন আলিপুরদুয়ার জেলার। মুখ্যমন্ত্রী চা-বাগানের শ্রমিকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন বিজেপি শাসিত অসমে চা-বাগানের শ্রমিকদের মাসে ১১টাকা কেজি দরে ২০ কেজি চাল দেওয়া হয়। বাংলায় সেখানে প্রতিটি চা-শ্রমিক পরিবারকে বিনামূল্যে ৩৭ কেজি চাল দেওয়া হয়। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর মানুষের দুয়া চাই, আশির্বাদ চাই, শুভেচ্ছা চাই, সমর্থন চাই। মানুষ সেই সমর্থন দেন কী দেন না, গত লোকসভা নির্বাচনের মতো তৃণমূলকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না দেন না তা দেখতে অবশ্যই আরও কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে সভা শেষে মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে মুখ্যমন্ত্রীর জিজ্ঞাস্য ‘কেন জেতেনি তৃণমূল? কী অপরাধ ছিল আমাদের!’