
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী শেষপর্যন্ত কোন পথে হাঁটবেন তা অমীমাংসিতই রইল। দেড় ঘণ্টার বেশি চলল ‘হাইভোল্টেজ’বৈঠক। তাতেও অবশ্য শুভেন্দু’র ‘মানভঞ্জন’করতে পারল না তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্র মারফত এমন খবরই মিলেছে। বৈঠক শেষে শুভেন্দু মিডিয়ার সামনে মুখ না খুললেও সৌগত রায় বেশ ইঙ্গিতবাহী বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামীকাল তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে যা জানাবার তা জানানো হবে। মনে করা হচ্ছে, দলের তরফে আগামিকালই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে নন্দীগ্রাম গণআন্দোলনের গণনায়ককে। রাজ্যের রাজনৈতিক মহল আপাতত তাকিয়ে তাই এই সাংবাদিক বৈঠকের দিকেই।
কয়েকদিন আগেই দলের সঙ্গে মনোমালিন্য নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সৌগত রায়। সেবারও কোনও সমাধান সূত্রে বেরিয়ে আসেনি। রাজ্যের বিভিন্ন সভায় একাধিক ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করছিলেন তিনি। সোমবার ফের একদফা বৈঠক হল সৌগতর সঙ্গে। তাতেও কোনও রফা হল না। তবে নিয়ে ফের আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর। এদিনের বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে কোনও পক্ষই কিছু বলতে নারাজ। তবে সূত্রের খবর, দলে কাজের স্বাধীনতার কথা তুলেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। পাশাপাশি দল পরিচালনা নিয়েও কথা তুলেছেন শুভেন্দু।
সোমবার দুপুরে সল্টলেকে রাজ্য পরিবহণ দফতরের নিজের কার্যালয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী। সেখান থেকেই তিনি চলে যান উত্তর কলকাতায় তাঁর ঘনিষ্ট এক নেতার বাড়িতে। সেখানেই বসে বৈঠক। সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দু দাবি করেন তিনি যে যে জেলায় দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন সেখানে তাঁকে আবারও দলের তরফে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে হবে। ওউ জেলাগুলিতে তিনিই দলের সংগঠন দেখবেন। দলের কর্মসূচিও তিনিই বাস্তবায়িত করবেন। ওই সব জেলার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কারা কারা প্রার্থী হবেন সেটাও তিনিই ঠিক করবেন। যদিও এই সব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সৌগতবাবু নাকি শুভেন্দুকে জানিয়ে দেন, দলে এখন জেলার জন্য পর্যবেক্ষকের কোনও পদ নেই। তাই আগেকার পর্যবেক্ষকের পদ আর ফিরে পাওয়া যাবে না। সেই দায়িত্ব দলের তরফে আর কাউকেই দেওয়া হচ্ছেও না। আর প্রার্থী ঠিক করার বিষয়টি দলনেত্রীই দেখছেন। সংগঠন আর দলীয় কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব থাকছে দলের জেলা সভাপতিদের ঘাড়ে।
আরও পড়ুন: মালদহের মানিকচকে গঙ্গায় বার্জ উল্টে দুর্ঘটনা, নিখোঁজ বহু
সূত্র মারফতই জানা গিয়েছে, দলের এই অবস্থান পছন্দ হয়নি শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি জানান দল যেভাবে চলছে তাতে বিধানসভা নির্বাচনে ফল খারাপ হবে বই ভালো হবে না। বৈঠক শেষে শুভেন্দু অধিকারী কিছু না জানালেও সৌগতবাবু জানান, ‘সব কথা প্রকাশ্যে বলা যায় না। দল ওঁর সঙ্গে কথা বলতে বলেছিল। ওঁকে সে কথা জানিয়েছি। প্রয়োজনে আবার বসব। একটা আলোচনা চললে তা সম্পর্কে প্রকাশ্যে সব বলা যায় না। কাল তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে সব জানাব।’ এরপরেই রাজ্য রাজনীতিতে মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, শুভেন্দুর কোনও প্রস্তাবই তৃণমূল সম্ভবত মেনে নেবে না। বরঞ্চ দলের তরফে শুভেন্দুকে অনেকটাই কোনঠাসা করে দেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রথম বৈঠকেই যে ‘মানভঞ্জন’ হবে, তা একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। কারণ শুভেন্দু ও তৃণমূলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মান-অভিমান চলছে। ফলে দু’পক্ষের সমঝোতা হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে সেই বৈঠক থেকে ইতিবাচক দিকের সন্ধান করতে পারে। কারণ অত্যন্ত সৌগতের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছেন শুভেন্দু। তা কাজে লাগিয়ে শুভেন্দু ঘাসফুল শিবিরেই রাখা যায় কিনা, সেটাই আগামিদিনে তৃণমূল নেতাদের বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।