‘হাতির হানায় মৃতের পরিবারের সদস্য চাকরি পাবেন’ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
কেন্দ্র নিজের টাকায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালাক!

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে হাতির আক্রমণে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন এবার থেকে হাতির হামলায় কেউ মারা গেলে পরিবার পিছু আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ছাড়াও মিলবে পরিবারের একজন সদস্যের স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি। এই নিয়ম সারা বাংলা জুড়েই লাগু হবে। একই সঙ্গে মাও হামলায় বিগত ১০ বছর ধরে যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাঁদের পরিবারকে এককালীন ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের ১জন সদস্যের স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি দেবে রাজ্য সরকার।
ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায় প্রায়শই তাণ্ডব চালায় দাঁতাল বাহিনী। কখনও জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে তনছন করে দেয় বাজার-ঘাট। কখনও হামলা করে বাড়িতে। রীতিমতো ভাঙচুর চালায় তারা। কখনও আবার দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে সড়ক। সাধারণ মানুষও রেহাই পায় না দাঁতাল বাহিনীর রোষানল থেকে। ওই সব জেলায় হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে প্রচুর। সেই কথা বিবেচনা করেই এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের সভা থেকে হাতির হানায় মৃতদের পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, “ঝাড়গ্রামে হাতির তাণ্ডবে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, পশ্চিম মেদিনীপুরেও ঘটে। সেই কারণে সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, হাতির হানায় মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। পাশাপাশি, মৃতের পরিবারের একজন চাকরিও পাবেন হোমগার্ড পদে।” পাশাপাশি মাওবাদী হামলায় মৃত অথবা ১০ বছর ধরে নিখোঁজের পরিবারের একজনকে চাকরি অথবা ৪ লক্ষ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও এদিন ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একুশের নির্বাচনের আগে নিজের ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে উদ্যোগী। বিশেষ করে লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর বিশেষ করে জেলার তপশিলী ও আদিবাসী মানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কী ঘোষণা করেন সেই দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সকলে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাতির হানায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পরিবারের ১জনের স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি অনেকটাই আশা পূরণ করেছে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরই নয়, প্রতি বছর ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বেশ কিছু মানুষ হাতির হানায় মারা যান। এবার মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার ফলে এউ সব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলি লাভবান হবে। একই সঙ্গে জঙ্গলমহলের কয়েকশো মানুষ বাম জমানায় মাও হামলায় নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁদের সন্ধান আজও মেলেনি। তাঁদের পরিবারগুলি রীতিমত দুর্দশার মধ্যে ছিল। এইবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় তাঁরাও উপকৃত হবেন। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা নিখোঁজ তাঁদের পরিবারকে এককালীন ৪ লক্ষ টাকা ও পরিবারের একজন সদস্যের স্পেশ্যাল হোমগার্ড পদে চাকরি কার্যত নতুন জীবন প্রদান করে দিল ওইসব পরিবারকে।
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, রাজ্যের মাওবাদী এলাকায় ৫ বছরের বেশি সময় ধরে যে সব তরুণ-তরুণী হোমগার্ডের চাকরি করছে তাঁদের এবার স্থায়ী কনস্টেবল পদে উন্নিত করা হচ্ছে। বস্তুত রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গিকারে কোনও খামতি রাখতে চাননা মুখ্যমন্ত্রী। তাই তপশিলী জাতির মানুষদের পাশে দাঁড়ানো ছাড়াও নজর দিয়েছেন আদিবাসীদের উন্নয়নেও। এদিনের বৈঠকে আলাদা করে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন লোধা ও শবর সম্প্রদায়ের মানুষদেরও। জানিয়ে দেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের এদের উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রাখতে। গুরুত্ব দিয়েছেন জেলার মধ্যে ৩জন বিধায়কের আবেদন মতো ৩টি আদিবাসী স্কুল খোলার দিকে, ২টি বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলার দিকে, রাস্তা নির্মাণ ও সারাই করার দিকেও। জোর দিয়েছেন বিভিন্ন কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে থাকা মানুষদের পাট্টা প্রদানের বিষয়টিতেও।
আরও পড়ুন: লক্ষ্য একুশ, মোদিকে মুখ করে পুজোয় প্রচারের পরিকল্পনা বিজেপির
এদিন তিনি বলেন, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালুর বিরোধী নয় রাজ্য সরকার। কিন্তু এই প্রকল্প চালুর আগেই রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাই বাড়তি কোনও আর্থিক দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রের কোনও প্রকল্প বাংলায় চালু করা আর রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্র এই প্রকল্প বাংলায় চালু করতে চাইলে পুরো আর্থিক দায়িত্ব নিয়ে তা চালু করে দিতে পারে। তা নিয়ে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই। খড়গপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়ে এভাবেই স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, করোনা আবহে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ভারচুয়ালি প্রশাসনিক সভা করেন। এরপর মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে যোগ দিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। সেখানে করোনা থেকে পুজো, মাটি সৃষ্টি প্রকল্প-সহ একাধিক ইস্যুতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষ ও আধিকারিক দুই পক্ষকেও আরও বেশি সচেতন থাকার পরামর্শও দেন। আগামীকাল ঝাড়গ্রামে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।